ধর্ষণ- একটি সামাজিক ব্যাধি। যে বিচারহীনতার সমাজে ধর্ষণ করলে, ধর্ষকদের শাস্তি হয় না, বরং ধর্ষণ ও ধর্ষকের পক্ষে থাকে সমাজ, রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়, ধর্ষণ সংস্কৃতি যেখানে ছড়িয়ে আছে সমাজের আনাচে কানাচে, সেখানে ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি- হলেই কি এই এই কুৎসিত ব্যাধির সমাধান হয়ে যাবে?
[প্রথম পর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের পরিসংখ্যান দিয়ে একটা ভূমিকা তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যে ধর্ষণ মানব সমাজে সর্বত্র বিস্তৃত। এই পর্বে আসুন আরেকটু কাছের বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক — আমাদের সমাজে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নিপীড়ন এবং ধর্ষণকামী মানসিকতাগুলো একটু খতিয়ে দেখা যাক; তাহলে হয়ত এর পরের পর্বে ধর্ষণ বিষয়ক সামাজিক, বৈজ্ঞানিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিতর্কগুলো নিয়ে আলোচনা করতে সুবিধা হবে।]
তুমি আমাকে চেনো না, কিন্তু তুমি আমার শরীরের ভিতরে ঢুকেছ, এবং সে-কারণেই আজ আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে বেশ চুপচাপ একটা শনিবারের রাত। বাবা ডিনার বানাল, আমি এবং আমার ছোট বোন টেবিলে বসেছিলাম; ও এই উইকেন্ডে বাসায় বেড়াতে এসেছে। আমি তখন ফুল টাইম কাজ করি, ঘুমোনোর সময় হয়ে আসছে। আমার বোন তার বন্ধুদের সাথে একটা পার্টিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল, আর আমি বাসায় বসে কিছুক্ষণ টিভি দেখে বই পড়ব ভাবছিলাম। তারপর হঠাৎ কেন যেন মনে হলো আমার তো আর কিছু করার নেই, এটাই তো আমার শেষ রাত ওর সাথে, একটা হাবাদের পার্টিই তো হবে, গেলেই তো হয় ওর সাথে, বাসা থেকে তো মোটে মিনিট দশেকের রাস্তা। আমি সেখানে বোকার মতো নেচে আমার ছোট বোনকে বিব্রতই না হয় করলাম।
ধর্ষণ কেন বাড়ছে? ধর্ষণ কেন বাড়ছে তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ কতটুকু? গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারাদেশ উত্তাল৷ ধর্ষণের মত জঘন্য, ভয়ঙ্কর, পাশবিক বিষয় কোথাও যখন ঘটে তখনি তোলপাড় শুরু হয়ে যায় মিডিয়া, সোশাল মিডিয়াসহ সবখানে৷ কেউ বিচার চাইতে আসেন, মোমবাতি মিছিল করেন, কেউ আবার করেন ভিক্টিম ব্লেমিং অথবা কেউ আওড়ান সামাজিক মূল্যবোধের বুলি৷ কিন্তু দিনশেষে না ধর্ষণ থামে, না বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। একের পর এক যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের পর হত্যা, মৃত্যু-এই পাশবিকতা থেকে কেউই বাদ যাচ্ছেন না৷ নারী, শিশু কেউই নিজ বাড়িতে, খেলার মাঠে, রাস্তাঘাটে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ নন৷
আমরা আজকাল, ইন্টারনেট এবং মিডিয়ার কল্যাণে, বাংলাদেশ বা ভারতে অনেক ধর্ষণের ঘটনা দেখছি, চোখ বন্ধ করে থাকলেও শুনতে বাধ্য হচ্ছি। এইটাকে আমরা এখন ‘ভালো’ বলে গণ্য করছি কারণ আজকের দিনে অন্তত কিছু নারী এগিয়ে এসে ধর্ষণ নিয়ে মামলা করার সাহস পাচ্ছে, এ-নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এতদিন তো সেটা করারও উপায় ছিল না। তনুরা না পারলেও বা জ্যোতি সিংরা যুদ্ধে লড়তে লড়তে অতলে তলিয়ে গেলেও রথি এবং সাদিয়ারা চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছে, রুদ্ধ দ্বার মাথা ঠুকে যতটুকু পারে ততটুকুই খোলার চেষ্টা করছে।