আফ্রিকা মহাদেশ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ার আলামত!

.

নিবন্ধ

ভূ-তত্ত্ব | Geology

আফ্রিকা মহাদেশ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ার আলামত!

পূর্ব আফ্রিকার একটি অংশ আগামী এক কোটি বছরের মধ্যে মূল আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রমাণ চাইলে আপনি কেনিয়ার স্রংস উপত্যকার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন যেখানে ভারী বর্ষণ ভূকম্পন ক্রিয়ার প্রভাবে বিশাল একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্ট অনুসারে গত ১৯ মার্চ সবচেয়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং যা প্রায় ৫০ ফিট (১৫ মিটার) চওড়া কয়েক মাইল লম্বা। আর দেখে মনে হচ্ছে ফাটলটি যেন ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।স্রংস উপত্যকার এই ঘটনাটি আফ্রিকা মহাদেশটি যে টেকটোনিক প্লেটগুলোর উপর বিরাজমান সেই প্লেটগুলোর পুনর্বিন্যাসের ফল। আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চলই আফ্রিকান প্লেটের উপর অবস্থিত। আবার পূর্ব আফ্রিকার একটি বিশাল খাড়া অঞ্চল সোমালি প্লেটের উপর অবস্থিত। দুইটি প্লেটের মিলিত হওয়ার মিলনস্থলটি হচ্ছে ইস্ট আফ্রিকান রিফট, যা প্রায় ১৮০০ মাইল (৩০০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত দীর্ঘ অথবা মোটামুটি ডেনভার থেকে বোস্টন পর্যন্ত দূরত্বের সমান। [50 Interesting Facts About Planet Earth অনুসারে

মহাদেশ কীভাবে ভাঙে গড়ে তা নিয়ে জানতে দেখুন থিংকের বানানো ভিডিও, মহাদেশ কীভাবে ভাঙছে গড়ছে?

যেহেতু আফ্রিকা মহাদেশটি একটিমাত্র প্লেটের উপর অবস্থিত নয় তাই দ্বিধা দূর করার জন্যে গবেষকগণ বৃহৎ আফ্রিকান প্লেটটিকে নুবিয়ান প্লেট নামকরণ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল্ট ডায়নামিক গবেষণা দলের পোস্টডক্টরাল গবেষক লুসিয়া পেরেজ ডায়াজ-এর সাক্ষাৎকারের সারমর্ম করে বলা যায় নুবিয়ান এবং সোমালি প্লেট দুটো দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে।দুইটি প্লেট মূলত যেভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে:লিথোস্ফিয়ার যা ভূপৃষ্ঠ এবং ভূত্বকের আবরণের উপরের অংশ নিয়ে গঠিত তা টেকটোনিক প্লেটগুলোর পুনর্বিন্যাস সরণের ফলে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। যখন লিথোস্ফিয়ার টান বল অনুভব করে তখন এটি ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে এবং সবশেষ ফলস্বরূপ এটি ভেঙে পড়ে। এই ভাঙ্গনের ফলেই ধীরে ধীরে স্রংস উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে।

 

এই ভাঙ্গন প্রক্রিয়াটি প্রায়ই ভূকম্পন আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত সাথে নিয়ে ঘটতে পারে। পেরেজ ডায়াজ-এর মতে, পূর্ব আফ্রিকান রিফটের ক্ষেত্রে লিথোস্ফিয়ারের নিম্নাংশের বিশাল ভূত্বকের আবরণটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে যার ফলে এটি সম্প্রসারিত হয়ে ফাটল তৈরি করছে।পেরেজ ডায়াজ আরো বলেন, স্রংস উপত্যকার এই ভাঙন প্রক্রিয়াটি চারপাশে উঁচু স্থান রেখে অনেকগুলো খাদ তৈরির মত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভূমি পরিবর্তনের জন্যে দায়ী। উপত্যকার এই অঞ্চলটিতে এরকম অনেকগুলো খাদবিশিষ্ট উপত্যকা রয়েছে যা স্যাটেলাইট থেকে দেখা যায়। যদিও সবগুলো খাদ একই সময়ে তৈরি হয়নি। মূলত প্রায় ৩০ মিলিয়ন বছর আগে এটি শুরু হয়েছিল উত্তর ইথিওপিয়া থেকে এবং প্রতিবছরে প্রায় - ইঞ্চি হারে (.- সেন্টিমিটার হারে) এটি ছড়িয়েছে জিম্বাবুয়ের দক্ষিণ অংশ পর্যন্ত।কয়েক সপ্তাহ আগে কেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমিকম্পনের মত এই অঞ্চলটিতেও ভূকম্পন অনুভব হতে পারে যদি এমনভাবেই সোমালি নুবিয়ান প্লেট সরতে থাকে। ফেস-টু-ফেস আফ্রিকা অনুসারে বিশাল এই ফাটলটি ব্যস্ততম মাই-মাহিয়ু নারক সড়কটিকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলে এমনকি সেখানকার বিভিন্ন ঘরবাড়িও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে যার মধ্যে এমনও ঘটনা ঘটেছে যে ৭২ বছর বয়স্ক মহিলা তার পরিবার নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছিল সেই সময়ে ফাটল ঘটেছিল এবং বাড়িটি বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।

[Live Science অবলম্বনে]

লেখা- আবরার আলী

সুত্র-বিজ্ঞান পত্রিকা  

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles