ধর্ষণ কেন বাড়ছে?

.

নিবন্ধ

সমাজ ও রাষ্ট্র | Society and state

ধর্ষণ কেন বাড়ছে?

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারাদেশ উত্তাল৷ ধর্ষণের মত জঘন্য, ভয়ঙ্কর, পাশবিক বিষয় কোথাও যখন ঘটে তখনি তোলপাড় শুরু হয়ে যায় মিডিয়া, সোশাল মিডিয়াসহ সবখানে৷ কেউ বিচার চাইতে আসেন, মোমবাতি মিছিল করেন, কেউ আবার করেন ভিক্টিম ব্লেমিং অথবা কেউ আওড়ান সামাজিক মূল্যবোধের বুলি৷ কিন্তু দিনশেষে না ধর্ষণ থামে, না বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনাএকের পর এক যৌন নির্যাতন, ধর্ষণের পর হত্যা, মৃত্যু-এই পাশবিকতা থেকে কেউই বাদ যাচ্ছেন না৷ নারী, শিশু কেউই নিজ বাড়িতে, খেলার মাঠে, রাস্তাঘাটে, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ নন৷ 

ধর্ষণ নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও ধর্ষণ | End Rape Culture

প্রতিবছর এই অমানবিকতা শুরু বেড়েই চলেছেগেল বছর ধর্ষণ বেড়েছে ভয়াবহ মাত্রায়২০২০ সাল শুরুই হয়েছিল নারীর উপর আক্রমণ দিয়ে আর তার আগের বছর ২০১৯ শুরু হয়েছিলো পছন্দের দলকে ভোট দেওয়ার অপরাধে ধর্ষণের মধ্য দিয়েআইন সালিশ কেন্দ্রের হিসেব মতে, গত বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে মোট ১৫৪৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫১ জন নারীকেধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন আর ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারীএছাড়া ৯৭৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেঅন্যদিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট ১৪১৩ জন, হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকেকরোনা থাকার পরও গত বছরের ধর্ষণের হার বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছেএছাড়া ২০২১-এর শুরুতেই রাজধানীতে ঘটে গেল মাস্টারমাইন্ড ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা যা নিয়ে এখনো কাদা ছোড়াছুড়ি, ভিক্টিম ব্লেমিং অব্যাহতআবার দেখা যাচ্ছে এই পরিসংখ্যানই যে একেবারে সঠিক তা কিন্তু নয় কারণ থানায় মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে নাএছাড়া বহু ঘটনার মামলাই হয় না। 

কিন্তু কেন এই ভয়াবহ মহোৎসব থামছেই না? আসলে কোন কোন বিষয়গুলো কাজ করছে উস্কানি হিসেবে

অনেকদিন ধরে দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণধর্ষণ যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায় সে তুলনায় অপরাধীর শাস্তির দৃষ্টান্ত অত্যন্ত কমধর্ষণকারীরা এটুকু জেনেই গেছে যে, ধর্ষণ করলে তাদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না৷ প্রথম প্রথম একটু থানা পুলিশ হৈচৈ হবে তারপর শেষমেশ কিছুই হবে না আসলে, তারা পার পেয়ে যাবে নারী শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মতে, ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশের অক্ষমতা, আন্তরিকতাহীনতা, দুর্নীতি প্রবণতা, ধর্ষকের রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ ধর্ষণ মামলায় আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হয় না বলে ধর্ষকেরা ছাড়া পেয়ে যায়। 

গতবছর সারাদেশে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের পর চাপের মুখে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করা হয় এই বিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিবৃতি দেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালতাদের অভিমত, “ চরম শাস্তি সহিংসতাকে অব্যাহত রাখে, তা প্রতিরোধ করে না।”

গেল বছর ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে যাওয়া এক নববধূকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।  ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভের মধ্যেই অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেএইসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের মধ্যেই কেউ কেউ ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করেনযে কোনো জায়গাতে এই ঘটনা ঘটলে এক পক্ষ ভিক্টিম ব্লেমিং করবেইআর প্রথমেই তারা শুরু করে পোশাক দিয়েএরপর তাদের বিবেচনায় আসে মেয়েটা কখন বাইরে গিয়েছিলো, কার সাথে গিয়েছিলো, তার চরিত্র কেমন, পেশা কী ইত্যাদি ইত্যাদিএই পক্ষটি আবার শিশু ধর্ষণের বেলায় চুপ থাকেকয়েকমাস বয়সের শিশু থেকে শুরু করে ১২ বছরের কম বয়সের শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছেএমনকি মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণের হার যেখানে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সেখানে ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করা মূর্খতার পরিচয়ধর্ষণের দায় শুধুমাত্র ধর্ষকের, আর কারো নয়। 

ধর্ষণকে প্রতিরোধ করতে গেলে আসলে প্রথমে পুরুষতন্ত্রের সনাতনী চেতনা নস্যাৎ করতে হবে, ধর্ষণকে নারী শিশুর প্রতি সহিংসতা অমানবিকতা হিসেবেই দেখতে হবে, প্রেম ভালোবাসা বিয়ের দোহাই দিয়ে ধর্ষণের বৈধতা দেওয়া যাবে না, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মুখ বন্ধ রাখার সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে এবং সর্বোপরি আইন প্রণয়ন কার্যকরে নির্যাতিতার প্রতি আন্তরিক ধর্ষকের প্রতি কঠোর হতে হবেএকটি যৌন নির্যাতনের ঘটনা একজন নির্যাতিতাকে সারাজীবন মানসিক ভাবে পীড়া দেয়। এজন্য ধর্ষণের পর সমাজ আইনের দ্বারা যাতে তাকে দ্বিতীয়বার ধর্ষিত না হতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখা অতীব জরুরি।  

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles

ধর্ষণকে প্রতিরোধ করতে গেলে আসলে প্রথমে পুরুষতন্ত্রের সনাতনী চেতনা নস্যাৎ করতে হবে, ধর্ষণকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও অমানবিকতা হিসেবেই দেখতে হবে, প্রেম ভালোবাসা বিয়ের দোহাই দিয়ে ধর্ষণের বৈধতা দেওয়া যাবে না, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মুখ বন্ধ রাখার সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে এবং সর্বোপরি আইন প্রণয়ন ও কার্যকরে নির্যাতিতার প্রতি আন্তরিক ও ধর্ষকের প্রতি কঠোর হতে হবে।