ধর্ষণ

.

নিবন্ধ

সমাজ ও রাষ্ট্র | Society and state

ধর্ষণ

আমরা আজকাল, ইন্টারনেট এবং মিডিয়ার কল্যাণে, বাংলাদেশ বা ভারতে অনেক ধর্ষণের ঘটনা দেখছি, চোখ বন্ধ করে থাকলেও শুনতে বাধ্য হচ্ছি। এইটাকে আমরা এখন ‘ভালো’ বলে গণ্য করছি কারণ আজকের দিনে অন্তত কিছু নারী এগিয়ে এসে ধর্ষণ নিয়ে মামলা করার সাহস পাচ্ছে, এ-নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এতদিন তো সেটা করারও উপায় ছিল না। তনুরা না পারলেও বা জ্যোতি সিংরা যুদ্ধে লড়তে লড়তে অতলে তলিয়ে গেলেও রথি এবং সাদিয়ারা চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছে, রুদ্ধ দ্বার মাথা ঠুকে যতটুকু পারে ততটুকুই খোলার চেষ্টা করছে।  ধর্ষণ নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও ধর্ষণ | End Rape Culture

আমাদের প্রজাতির দুই লক্ষ বছরের বিবর্তনের শেষে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির যুগে বসে ইলন মাস্ক যখন মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের কথা বলছেন তখন এটুকু অর্জনকেই অগ্রগতি ভেবে নিয়ে আমরা সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করছি। একজন নারী হিসেবে একে ভালো বলব নাকি খারাপ বলব সেটা আমার জানা নেই। পাঠকের ওপরেই ছেড়ে দিলাম এই বিচারের ভার। আমাদের তথাকথিত ‘আলোকিত মানব সভ্যতার’ গ্লাসটা অর্ধেক ভর্তি নাকি অর্ধেক খালি সেটা আপনারাই ঠিক করে নিন।

বাংলাদশে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের কোন সার্বিক তথ্য আমার জানা নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্র মিডিয়া থেকে জরিপ করে (সম্ভবত পত্রিকার রিপোর্ট থেকে) জানাচ্ছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ৪৬৪ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন, ৫৬ জনের উপর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে (২)। ধর্ষণের পরে ২৭ জন মারা গেছেন, এবং ৮ জন্য আত্মহত্যা করেছেন।  বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান বলছে ২০১৬ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ৪৪৬ জন শিশু (২)। কিন্তু এই পরিসংখ্যান থেকে দেশের যৌন নির্যাতনের সার্বিক চিত্রটি আঁকা বোধ হয় কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমরা জানি না শতকরা কতজন নারী বা তাদের পরিবার আসলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার সাহস পান (যার সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কোন কারণ নেই), আর তার মধ্যেও ক’টাই বা শেষ পর্যন্ত পত্রিকার খবরে পরিণত হয়?

তাই আমি প্রথমে আমেরিকার কিছু তথ্য দিচ্ছি। এদেশের মেয়েরা এখন আমাদের দেশের চেয়ে অনেক সহজে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিচারের দাবি করতে পারে এবং করেও। তারপরও পশ্চিমেও এটা সর্বজনবিদিত যে, সব অপরাধের মধ্যে ধর্ষণ নিয়ে সবচেয়ে কম রিপোর্ট করা হয়। এখানে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি; হয়তো এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশে, যেখানে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকেই দোষী ভাবা হয় পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে, পুলিশের কাছে গেলেও সে মামলা নিতে অস্বীকার করে, আর মামলা হলেও তার উপর হুমকি, ঝক্কি, ঝামেলার শেষ থাকে না, সেখানে ধর্ষণের চিত্রটা কেমন হতে পারে তা সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের রিপোর্ট(৩) অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩ লাখ নারী ধর্ষিত হয়; তবে সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (CDC) মনে করে এই সংখ্যা ১৩ লাখে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা কমেছে ৬৪%, নির্যাতিতের সংখ্যা প্রতি ১,০০০-এ ৫ থেকে ১.৮-এ নেমে এসেছে। ২০১০ সালে ২,৭০,০০০ নারী, অর্থাৎ ১২ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের মধ্যে প্রতি ১,০০০-এ ২ জন যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ২৮% যৌন নির্যাতনের কেসের রিপোর্ট করা হয়েছে পুলিশের কাছে; এবং এর সংখ্যা ২০০৩ সালে বেড়ে ৫৯%-এ দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু ২০০২ সালে তা আবার ৩২% এ নেমে গেছে। রিপোর্ট করা এবং না-করা কেসগুলো যোগ করে হিসেব করলে ২০০৫-২০১০ সালের মধ্যে মাত্র ১২% কেসের আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হাফিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে (৪) বলা হচ্ছে, এখনো ৫৪% ধর্ষণের কেসই রিপোর্ট করা হয় না এবং  প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন মেয়ের এ দেশে ধর্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখলে দেখা যায় যে সুইডেনে সর্বোচ্চ ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করা হয়। তবে সে দেশের কর্তৃপক্ষের মতে সুইডেনের মতো প্রগতিশীল সমাজে ধর্ষণের রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে এখন নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সাহসী হয়ে উঠেছেন । তার উপরে আবার সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে যৌন নির্যাতনের কেসগুলো ইচ্ছা করেই কিছুটা ভিন্নভাবে রিপোর্ট করা হয়। যেমন ধরুন, কোনো বিবাহিত নারী যদি বলেন যে তার স্বামী তাকে এক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছে তাহলে তার বিরুদ্ধে ৩৬৫টি ধর্ষণের মামলা করা হবে। সে কারণেই সে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় এত বেশি বলে মনে হয় ।

আপনারা যদি ভাবেন, “ওহ, আমেরিকা, সুইডেন বলে এরকম হয়, আমাদের দেশে তা হবে না” তাহলে চলুন ভারতের কিছু হিসেব দেখি যেখানকার সমাজ সংস্কৃতির সাথে আমাদের প্রচুর মিল থাকার কথা।


সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles