আর্ডি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসের কতগুলো খুব মৌলিক প্রকল্পকে চুরমার করে দিয়েছে…আর এখানেই বোধ হয় বিজ্ঞানের সার্থকতা। মানুষের ইতিহাসের বই-এর ক’টা পাতা আবার নতুন করে লিখতে হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা দুঃখে ভেঙ্গে পড়ছেন না। বরং অত্যন্ত গৌরবের সাথে পৃথিবী জোড়া বিজ্ঞানীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এই নতুন আবিষ্কারের আলোকে পুরনো ভুল ধারণাগুলোকে ঝেরে ফেলে দিয়ে সঠিক তথ্যকে সামনে নিয়ে আসার কাজে।
বিবর্তনের ইতিহাস এর নতুন মোড় পাওয়া গেছে। গোড়া ধর্মীয় এবং সৃষ্টিতত্ত্ববাদী ইন্টারনেট সাইটগুলোতে যেন উৎসবের সাড়া পড়ে গেছে। মানুষের ইতিহাস নতুন করে লেখা হচ্ছে। যাক, দেড়শ’ বছর পরে বিশ্বমানবতার শত্রু ওই ব্যাটা ডারউইনকে ভুল বলে প্রমাণ করা গেল। প্রায় ৪৪ লক্ষ বছর আগে মরে যাওয়া প্রায়-মানুষ আর্ডির (ardipithecus ramidus) ছবিতে মালা লাগিয়ে ডিসকভারী ইন্সটিটিউট বা আল জাজিরার অফিসে ঝুলিয়ে দিলেও কিন্তু অবাক হবার কিছু থাকবে না। এতগুলো বছর ধরে, লক্ষ লক্ষ ডলার ঢেলে, বিহের মত পিএইচডি-ওয়ালারা যা করতে পারেনি, আর্ডির মত একটা ৪৪ লক্ষ বছরের মরে পচে ভুত হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ মহিলা তা করে দেখিয়ে দিল! খ্রীষ্টান মোল্লারাদের তো এখন পোয়া বারো, ভারজিন মেরীর পরে ‘হোলি আর্ডি’র উদয় কি যা তা ঘটনা!
বিবর্তনের কারণেই আমরা এখনো মানবতায় আস্থা রাখতে পারি। কারণ নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী প্রজাতি হিসেবে মানুষ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রজাতির তুলনায় অপরিচিতদের বেশি সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং মা্নুষ নিজেদের মধ্যে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে কম দ্বন্দ্ব প্রদর্শন করে থাকে। ঘরের টেলিভিশনটি চালু করলে অবশ্য এই কথাটি বিশ্বাস করতে আপনার একটু কষ্টই হবে। তবে নতুন গবেষণা এমনটাই ইঙ্গিত করছে যে, আমারা মূলত নিজেদেরকে সম্পদশালী করার পরিবর্তে সহানুভূতিশীল হিসেবে নিজেদের উন্নত করে আসছি এবং অন্য সকল প্রজাতিকে সাদরে গ্রহণ করে থাকি।
বিবর্তন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আমাদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণ থেকে এটুকু আমরা বুঝতে পারি, যেকোনো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াই কম-বেশি এলোমেলো (বিক্ষিপ্ত) এবং নিয়ন্ত্রণহীন। সেকারণে ঝড়ের গতিপথ কথনো সরলরৈখিক হয় না কিংবা নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতির কোনো প্রাকৃতিক জলাভূমিও পাওয়া যাবে না। বিবর্তন যেহেতু একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সেহেতু এই প্রক্রিয়াটিও এলোমেলোভাবে বা বিক্ষিপ্তভাবে হবে এটাই স্বাভাবিক এবং বাস্তবতাও সেটাই। বিবর্তন পুরোপুরিই একটি বিক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া।
আমরা মাঝে মাঝেই শুনে থাকি-আমাদের পৃথিবীর বয়স ৪.৬ বিলিয়ন বছর। পৃথিবীতে ৯ কোটি বছর আগে যেসব ডাইনোসর ছিলো তাদের বিশাল মাথা এবং ধারালো দাঁত শিকারের কাজে ব্যবহার হতো। প্যারাডক্সিডেস আর্থ্রোপোডা নামের এই প্রাণীকে ক্যামব্রিয়ান যুগে পাওয়া গিয়েছে ৫০০ থেকে ৫০৯ মিলিয়ন বছর আগে। এই যে উপরে ব্যবহার করা বাক্য গুলোর মাঝে যেটি সব বাক্যেই আছে তা হলো সংখ্যাভিত্তিক অংশটা। এই সংখ্যাভিত্তিক অংশটা আসলে বোঝায় এদের বয়স। আমরা না হয় যখন জন্মগ্রহণ করি তখন পিতামাতা কাছে থাকে, সেই সাথে নিজের জন্মদিবস এবং বছরটাও মনে থাকে তাঁদের। পরে বয়স জানাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু পৃথিবী, ডাইনোসোর, প্যারাডক্সিডেস এগুলোর সময়ে তো মানুষের আনাগানোই ছিলো না। তাহলে তাদের বয়স কীভাবে জানা গেলো? বিজ্ঞানীরা কি ইচ্ছেমতো যা তা বলেই বিভিন্ন জিনিসের মনগড়া বয়স বানিয়ে দিচ্ছে?