ভূমিকম্প কিভাবে ঘটে? অন্য গ্রহে ভূমিকম্প হয়?
যদিও আমাদের পৃথিবী উপর থেকে দেখতে অনেক সলিড কিন্তু ভুপৃষ্ঠের নিচের দিকে এটি চুড়ান্তভাবে সক্রিয়( Extremely Active) । আমাদের পৃথিবী মূলত বায়ুমন্ডলের মতোই কিছু লেয়ার দিয়ে গঠিত। এটমোস্ফিয়ারের মধ্যে সাতটি লেয়ার রয়েছে কিন্তু আমাদের প্লানেট গঠিত চারটি লেয়ার বা স্তর দিয়ে।
ভূমিকম্প নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও ভূমিকম্প কেন হয়?
প্রথমে রয়েছে, শক্ত ভূত্বক ( Solid Crust)
দ্বিতীয় স্তর, পুরোপুরি শক্ত নয়, উত্তপ্ত ও মোটামুটি শক্ত একটি ম্যান্টল বা আবরণ ( A Hot, Nearly solid mantle)
কেন্দ্রের বাহিরের দিকের অংশ তরল ( A liquid outer core)
এবং কেন্দ্রের ভেতরের দিকের অংশটি শক্ত ( A Solid Core)
যে সকল পাথর পৃথিবীর উপরীভাগের সলিড ক্রাস্টটি তৈরি করে সেগুলোর মধ্যে অজস্র ফ্রেকচার থাকে, এই ফ্রেকচার গুলোকে বলা হয় ‘ফল্ট লাইন’। আর পাথরগুলো একে অপরকে অতিক্রম করে ক্রমাগত স্লিপ করতে থাকে আর এর ফলে পৃথিবীর স্কিন ( Solid Crust) আবার রি-এরেঞ্জ হয় যে প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘প্লেট টেকটোনিক’। কিন্ত এ স্লিপিং প্রসেস খুব সহযে ঘটেনা - পাথরগুলো খুবই শক্ত, রুক্ষ এবং একটি পাথরের চারপাশে আরো কোটি কোটি পাথর অবস্থান করে আর এ জন্য প্রত্যেকটি পাথরই তার চারপাশের পাথরগুলোর প্রভাবে সামগ্রিকভাবে প্রচন্ড প্রেসারের মধ্যে থাকে। এ জন্য দীর্ঘকাল পর্যন্ত একটি পাথর আর একটি পাথরকে টানতে থাকে এবং ফল্ট লাইনের দুই পাশেই একে অপরের সাথে ঠোকাঠুকি শুরু হয় কিন্তু অজস্র সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা বেশিদূর যেতে পারেনা যা পাথরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ চাপ (Tension) তৈরি করে। যখন চুড়ান্তভাবে পাথরগুলো একে অপরকে আবার অতিক্রম করার জন্য স্লিপ করে, সহসাই তাদের মধ্যে মুভমেন্ট তৈরি হয়, এবং সবগুলো পাথর থেকেই একসাথে প্রচন্ড পরিমাণ চাপ বা টেনশান রিলিজ হয় এবং চারপাশের পাথরের ভেতর দিয়ে আকস্মিক ‘Shock Wave’ পাঠাতে শুরু করে।
‘’প্রচন্ড চাপ থেকে সৃষ্ট এই ‘শক ওয়েভ’ পৃথিবীর স্কিন বা ক্রাস্টের ভেতর ভাইব্রেশন ক্রিয়েট করে এবং সম্পূর্ণ আউটার ক্রাস্ট বা ভূত্বক সমূদ্রের ঢেউয়ের মতো আচরণ করে___ এ প্রক্রিয়ায় ‘ভূমিকম্প(Earthquakes)’ তৈরি হয়। ‘’
তাহলে আমরা দেখতে পারছি যে , সলিড ক্রাস্ট সবচেয়ে উপরে থাকে, আর এই সলিড ক্রাস্ট ও তার নিচের আবরণ যা খুব একটা সলিড নয় সেটি একত্রে স্পেসের একটি এলাকা তৈরি করে যেটিকে বলা হয় ‘’লিথোস্ফিয়ার’’। লিথোস্ফিয়ার ডিমের খোলসের ( Eggshell) মতো মসৃণভাবে গোলাকার নয়। নাসার মতে, এটি এক বিরাট পাজল দিয়ে তৈরি যে দৈত্যাকার পাজলকে বলা হয় " প্লেট টেকটোনিক"! এই টেকটোনিক প্লেটগুলো কন্টিনিউয়াসলি সান্দ্রের উপর দিয়ে সরে যাচ্ছে অথবা ম্যান্টল লেয়ারের নিচে খুব ধীরগতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। এই যে তাদের নন-স্টপ মুভমেন্ট এটাই পৃথিবী পৃষ্ঠে চাপ তৈরি করে। আর যখন এই চাপ বিরাটাকার হয়ে উঠে এটি একটি ক্রেক বা ফাটল তৈরি করে যেটিকে বলে ফল্ট লাইন। যখন টেকটোনিক প্লেট মুভ করে। এটি এই ফল্ট লাইনে মুভমেন্ট তৈরি করে আর ‘ভূমিকম্প’ হলো পৃথিবী পৃষ্ঠের ফল্ট লাইনের আকস্মিক মুভমেন্ট।
যেই লোকেশন থেকে ভূমিকম্প তৈরি হয় সেটিকে বলে ‘এপিসেন্টার’। ভূমিকম্প হলো সুতীব্র গর্জন যেটি এপিসেন্টারের কাছকাছি অনুভূত হয়। কিন্তু ভূমিকম্প থেকে এপিসেন্টারে যে ভাইব্রেশন ক্রিয়েট হয় সেটি কয়েক শত এমনকি কখনো কখনো কয়েক হাজার মাইল দূর থেকেও ডিটেক্ট করা যায়।
কিভাবে আমরা ভূমিকম্পকে পরিমাপ করি?
আর্থকোয়েক থেকে যে শক্তি তৈরি হয় সে শক্তি ভাইব্রেশন আকারে আমাদের পৃথিবীতে ট্রাভেল করে যেটিকে বলা হয় সিসমিক ওয়েভস! বিজ্ঞানীরা এ সেসমিক ওয়েভকে যে যন্ত্রের মাধ্যমে পরিমাপ করেন সেটিকে বলে সিসমোমিটার। সিসমোমিটার যন্ত্রের নিচে তরঙ্গ ডিটেক্ট করে এবং Zig-Zags বা আঁকাবাঁকা একটি সারির মাধ্যমে প্রকাশ করে! বিজ্ঞানীরা সিসমোমিটারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের টাইম , লোকেশন এবং ইনটেনসিটি পরিমাপ করতে পারে। সিসমোমিটার আপনাকে সে সকল পাথরগুলোর ইনফরমেশনও প্রদান করবে, যে পাথরগুলোর ভেতর দিয়ে সিসমিক ওয়েভস ভ্রমণ করছে।
মহাকাশের অন্যান্য গ্রহে কি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়?
"আর্থকোয়েক " শব্দটি এসেছেই পৃথিবীর সিসমিক একটিভিটি থেকে। কিন্তু নাসার মতে, বিজ্ঞানীরা চন্দ্র উপগ্রহেও কোয়েক্স বা কম্পন রেকর্ড করেছে, এমনকি তারা মার্স, ভেনাস এবং জুপিটারের কয়েকটি চন্দ্রের মধ্যেও সিসমিক একটিভিটির প্রমাণ পেয়েছে !
নাসার InSight Mission মঙ্গলে সিসমোমিটার নিয়ে গিয়েছিল সেখানকার সিসমিক একটিভিটি পরীক্ষা করার জন্য। যেটাকে বলা হয় "মার্সকোয়েক"! পৃথিবী থেকে আমরা জানি ভিন্ন ভিন্ন ম্যাটারিয়ালস ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভাইব্রেট করে। মার্সকোয়েকের ভাইব্রেশন স্টাডি করে বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করবেন মার্সের স্কিনের তলায় কোন ধরণের পদার্থ কাজ করছে।
InSight মঙ্গল থেকে কয়েক টন ইনফরমেশন কালেকশন করেছে যেটি শুধু আমাদেরকে মার্সের স্কিনই নয়, স্কিনের অন্তরালের সত্য জানতেও সাহায্য করবে, এটি আমাদের মঙ্গলকে বুঝতে আরো বেশি সুযোগ করে দেবে, যে গ্রহটিকে টেরাফর্ম করে আমরা খুব শীঘ্রই মানব সভ্যতার দ্বিতীয় এম্পায়ারে পরিণত করতে যাচ্ছি। মূলত, চন্দ্র ও সূর্যের মহাকর্ষ বল যেমন আমাদের গ্রহের মহাসমূদ্রে জোয়ার ও ভাটা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি আমাদের পৃথিবীর মহার্ষীয় প্রভাবও চন্দ্রপৃষ্ঠে পতিত হয় । চন্দ্রে যেহেতু কোনো মহাসমূদ্র নেই, পৃথিবীর গ্রেভিটি চন্দ্রপৃষ্ঠের উপর বলপ্রয়োগ করবে আর এতে চন্দ্রপৃষ্ঠ বেলুনের মতো ইনফ্লেট হতে থাকবে, এ প্রক্রিয়ায় মহাকাশের অন্যান্য গ্রহগুলোতেও তাদের চারপাশের গ্রহ - নক্ষত্রগুলোর মহাকর্ষজনিত প্রভাবে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্যসুত্রঃ
What Is an Earthquake?NASA
What Does a Marsquake Look Like?NASA
Why and where do earthquakes happen? Americangeoscience
Differences between the Earths’ Lithosphere and Asthenosphere
Where Earthquakes Occur U.S. Geological Survey
Earthquake Catalog U.S. Geological Survey
1811-1812 New Madrid, Missouri Earthquakes U.S. Geological Survey
Induced Seismicity Potential in Energy Technologies National Research Council
Induced Earthquakes - Homepage U.S. Geological Survey
Current One-Year Seismic Hazard Forecast for the United States U.S. Geological Survey