চাঁদের মালিক কে? চাঁদে কি জমি কেনা যায়? আপনি কি চাঁদে জমির মালিক হতে চান?
চাঁদে কি জমি কেনা যায়? আপনি কি চাঁদের মালিক হতে চান? চাঁদে জমি কেনা যায়। শুধু চাঁদে নয়, চাইলে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেও আপনি জমি কিনতে পারবেন। তবে সেই জমি হবে শুধুই কাগজে-কলমে। এ জন্য প্রথমে আপনাকে লুনার অ্যাম্বাসি ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইটে যেতে হবে
২০০০ সালে Gregory W. Nemitz নামের এক ব্যাক্তি এস্টারয়েড 433 Eros-এর বেশ অনেকখানি জমির মালিকানা দাবি করে বসেন যার মূল্যমান ৪৯২,১৮৭,৫০০,০০০,০০০,০০০ (প্রায় ৫০০ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার) মার্কিন ডলার বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও এই পৃথিবীর প্রায় ২০০টি দেশের কোনোটিই পৃথিবীর বাইরের মালিকানার স্বীকৃতি দেয় না।
চাঁদ নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও চাঁদে কি মানুষ গিয়েছিলো?
কিন্তু যেভাবেই হোক তিনি জমির মালিকানা রেজিস্ট্রি করতে সক্ষম হন। এর পরের বছরই অর্থাৎ ২০০১ সালে নাসা এই এস্টারয়েডে একটা প্রোবের অবতরণ করায়। এই ঘটনা কর্ণপাত করা মাত্রই Nemitz ওই অবতরণস্থানটি পার্কিং এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং পার্কিং এরিয়া নং ২৯ উল্লেখ করে নাসার নিকট ২০ ডলারের একটি পার্কিং টিকেট প্রেরণ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নাসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল এই টিকেটকে আইনসম্মত নয় বলে পার্কিং টিকিটের মূ্ল্য প্রদানের দাবি উপেক্ষা করে আসছেন।
গত কয়েক যুগ ধরেই বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থা কর্তৃক মহাশূন্যের বিভিন্ন সম্পত্তির মালিকানার দাবি চলে আসছে। যদিও ১৯৬৭ সালে চালু হওয়া এক চুক্তি অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক পৃথিবী বহির্ভূত কোনো সম্পত্তির মালিকানা স্বীকৃত নয়। এই চুক্তিতে পৃথিবীবহির্ভূত যাবতীয় বস্তু সমগ্র মানবজাতির ঐতিহ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
১৯৭৯ সালে আরেকটি চুক্তি চুড়ান্ত করা হয় যার নাম “আন্তর্জাতিক চাঁদ চুক্তি (International Moon Treaty)” যেখানে পৃথিবীর বাইরে যেকোনো ব্যক্তিগত ভূ-সম্পত্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫টি রাষ্ট্র এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।বেশকিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুর অংশবিশেষ সর্বসাধারণের কেনার জন্য সাধছে। অনেকেই দাবি করছে যদিও ১৯৬৭ সালের পৃথিবীবহির্ভূত সম্পত্তি চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশ পৃথিবী বহির্ভূত কোনো বস্তুর মালিকানা দাবি করতে পারবে না কিন্তু এটা ব্যক্তিপর্যায়ে প্রযোজ্য নয়। যদিও এই চুক্তির অনুচ্ছেন ৬-এ বলা হয়েছে, বেসরকারি যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মহাকাশে যে কোনো কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য নিজ নিজ দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমতি নিতে হবে। ফলে কার্যত রাষ্ট্রের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ ব্যক্তিগত পর্যায়েও পড়বে। তাছাড়া কোনো দেশের সরকারই এখন পযন্ত এইসব সম্পত্তির মালিকানা সম্বলিত ‘দলিলপত্রের’ স্বীকৃতিও দেয়নি।
এসত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চাঁদ, মঙ্গল কিংবা অন্যান্য যায়গায় ভূ-সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে আসছে। মাঝে মাঝেই পত্র-পত্রিকায় এই সংক্রান্ত খবর পাওয়া যায়। ১৯৫৩ সালে চিলির আইনজীবী জেনারো গ্যাজার্ডো ভেরা চাঁদের মালিকানা দাবি করে প্রথম আলোচনায় আসেন। জার্মানির নাগরিক মাইকেল জারগেনস দাবি করেন ১৭৫৬ সালের ১৫ই জুলাই থেকে চাঁদ তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তি যেদিন তৎকালীন শাসক ফ্রেডরিক দ্যা গ্রেট জারগেনসের পূর্বপুরুষকে চাঁদ উপহার দেন।
ডিন লিন্ডসে যাবতীয় মহাজাগতিক সম্পত্তিকে নিজের বলে দাবি করেন ১৫ জুন ১৯৩৬ সালে। এই বাবদ তিনি পিটসবার্গ নোটারি পাবলিকে ‘সম্পত্তির দলিলসহ’ এবং আনুষঙ্গিক খরচাসহ একটি চিঠি পাঠান এবং সম্পত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। নোটারি পাবলিক তাঁর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অফার প্রচারও করে। এ্যাডাম ইসমাইল, মুস্তাফা খলিল এবং আব্দুল্লাহ আল-উমারি নামের তিনজন ইয়েমেনি নাগরিক মঙ্গলে হানা দেওয়ার জন্য নাসাকে অভিযুক্ত করেন। তাঁরা দাবি করেন উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁরা ৩০০০ বছর পূর্বে মঙ্গলকে তাঁদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন। আর গ্রেগরি ডব্লিও নেমিৎসের কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। এর বাইরেও আরো অনেক আছেন, আলোচনা করতে গেলে ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে তাই এখানেই থামছি।
তথ্যসূত্র: বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক