বন্যা
দীপেনদা, ধন্যবাদ আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য।
আমাদের এই বিশেষ জ্যোতির্বিদ্যার সিরিজের প্রথম ভিডিওতে সৌরজগতের উদ্ভব থেকে শুরু করে মোটামুটি ভেতরের গ্রহগুলো বা সূর্যের কাছের প্রথম চারটি পাথুরে গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছিলাম। আজকে তাহলে চলুন, মঙ্গলের পরে যে এস্টরয়েড বেল্ট বা গ্রহাণু বেষ্টনী এবং তারপরের গ্যাসীয় দানব হিসেবে পরিচিত চারটি গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন নিয়ে আলোচনা করা যাক। মনে হয় না চারটি গ্রহ নিয়ে আজকে কথা বলা যাবে। এই এক বৃহস্পতি নিয়েই এত কিছু জানার আছে। দেখা যাক।দীপেনদা, কেমন আছেন?
দীপেন
ভালো আছি বন্যা...।
বন্যা
আমরা তাহলে এস্টরয়েড বেল্ট বা গ্রহাণু বেষ্টনী নিয়ে শুরু করি। এই বেল্টের কথা ভাবলেই মনে হয় গায়ে গা লাগানো সব পাথরের খন্ড ওখানে। আসলে তো তা না, তাই না? এটা তৈরি বা হলো কেন, কীভাবে?
দীপেন
Asteroid Beltকে এখন আমরা বাংলায় বলছি গ্রহাণু বেষ্টনী। এটা মোটামুটি সূর্য থেকে তিন জ্যোতির্বিদ্যা একক দূরত্বে অবস্থিত। এক সময়ে ভাবা হত যে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে আর একটি গ্রহ ছিল এবং সেই গ্রহটি হয়তো অন্য কোনো গ্রহ বা গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যায়, সেই সংঘর্ষের ফলাফলই হল আজকের গ্রহাণুপুঞ্জ। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে বৃহস্পতির উপস্থিতির কারণে এখানে কোনো বড় গ্রহ জমাট বাঁধতে পারে নি, নইলে এখানে আমাদের পৃথিবীর সমান আর একটি গ্রহ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। এখন এখানে যে পরিমাণ ভর আছে তা চাঁদের সমগ্র ভরের কয়েক শতাংশ মাত্র। আর চাঁদের ভর হল পৃথিবীর এক শতাংশ। তার মানে এই জায়গাটা যে প্রমাণ ভর দিয়ে শুরু হয়েছি তার ৯৯ শতাংশ ভর এখন আর নেই। আর যা আছে তার মধ্যে সেরাস, ভেস্তা, পালাস আর হাইজিয়াই ৫০% ভরের সমান। এগুলো কোথায় গেল, বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের পাল্লায় পড়ে সেগুলো নেপচুনের পরে যে কাইপার বেল্ট বা তারও বাইরে অর্থাৎ সৌরজগতের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
বন্যা
কিছুতো বৃহস্পতির উপরেও পড়েছে
দীপেন
আর গায়ে গায়ে পাথরের তো প্রশ্নই উঠছে না, যদিও এখানে ১০ লক্ষ বস্তু আছে যেগুলোর আকার এক কিলোমিটার থেকে বড় আর আর ১০ মিটার জাতীয় ছোট পাথরের আকার ধরলে তো কোটি ছাড়িয়ে যাবে, কিন্তু দুটি পাথরের মধ্যে দূরত্ব হয়ত ১০ লক্ষ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১২টি মহাকাশযান এই বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে গেছে, তাদের কোনোই ক্ষতি হয়নি।
বন্যা
Kirkwood Gap বা কার্কউডের শূন্যস্থান নিয়ে একটু বলবেন?
দীপেন
গ্রহাণু বেষ্টনীর একটা ইন্টেরেস্টিং জিনিস হল Kirkwood Gap বা কার্কউডের শূন্যস্থান, এই জায়গাগুলিতে কোনো গ্রহাণু নেই। কেন নেই? কারণ এই জায়গাগুলিতে যে সমস্ত গ্রহাণু ছিল তাদের সূর্যের চারদিকের আবর্তনের বছর সংখ্যা আর বৃহস্পতির আবর্তনের বছর সংখ্যা দুটি পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়। ধর সূর্য থেকে আড়াই জ্যোতির্বিদ্যা একক দূরত্বে যে গ্রহাণু গুলো ছিল সেগুলো প্রতি চার বছরে একবার সূর্যকে ঘুরে আসত, আর বৃহস্পতির সূর্যকে ঘুরতে সময় লাগে ১২ বছর, তার মানে বৃহস্পতি একবার ঘুরতে যে সময় নেয় ওই সময়ে এই গ্রহাণুগুলো তিন বার সূর্যের চারদিকে ঘুরে আসে।
বন্যা
কিন্তু এই এস্টরয়েড বেল্ট তৈরি হলো কেন?
দীপেন
কেন এই জায়াগায় একটি গ্রহ তৈরি হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতির কারণে সেই আলোচনায় যেতে হলে পৃথিবীতে ফিরে আসি - পৃথিবী, বুধ কেন এই জায়াগায় সৃস্টি হলো
- আদি নীহারিকা -> কক্ষপথ পরিবর্তন ->
- যারা রইলো তারা স্থিত কক্ষপথে রইলো - আদি জায়াগায় আর নেই
- গ্রহাণুপুঞ্জও স্থিত কক্ষপথে এলো - আদি মাধ্যাকর্ষণ
বন্যা
জুনো থেকে আমরা অনেক কিছু জেনেছি, তার আগে ভয়েজার ১ এবং ২ ও আমাদের অনেক তথ্য দিয়েছে বৃহস্পতি নিয়ে। ভয়ই লাগছে ব্রস্পতি নিয়ে কথা বলতে, এর সম্পর্কে আমরা এত কিছু জেনেছি ইতমধ্যে! বৃহস্পতি কি আসলেই প্রথম গ্রহ? সে এত বড় হলো কী করে?
দীপেন
বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে ৩১৭ গুণ বেশি ভরের। এত বড় একটা গ্রহ কী করে তৈরি হল এটা একটা সমস্যা। কারণ গ্রহ বড় হয় একটা মূল কেন্দ্র core সৃষ্টি করে তার ওপর গ্যাস accrete করে। এখানে সমস্যা হল দুটি - এক যখন গ্যাস এদিকে জমা হচ্ছে, অন্যদিকে সূর্য নীহারিকাকে পরিস্কার করছে। আর এদিকে মনে হয় বৃহস্পতির ভাল core ও নেই। আমরা এটা জানি যে গ্যাসীয় গ্রহদের নীহারিকা মিলিয়ে যাবার আগেই সৃষ্টি হতে হয়েছে কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে, আর পৃথীবির মত গ্রহ হতে হয়ত লেগেছে ১০০ মিলিয়ন বছর।
বৃহস্পতিকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে - হাইড্রগেন গ্যাস, তরল হাইড্রোজেন, ধাতব হাইড্রোজেন, আর পাথুরে কেন্দ্র, কিন্তু এখন আমাদের মনে হয় পাথুরে কেন্দ্রটা diffuse - এটা জুনো যান থেকে পাওয়া তথ্যের ওপ্র ভিত্তির করে বলা।
বন্যা
হিলিয়াম ও নিওনের বৃষ্টি বৃহস্পতি নিজের থেকে বেশি তাপ উৎপন্ন করে
দীপেন
এখানে পাইওনিয়ার ১০ ১১ এবং ভয়াজার ১ এবং ২ নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। সৌর জগতের বাইরে যাবার জন্য বৃহস্পতি এই সব যানের জন্য ছিলে একটা বড় সাহায্য। পৃথিবী থেকে যখন একটা মহাকাশযান ছোড়া হয় তার গতি কমতে শুরু করে সূর্যের টানে, সেখানে বৃহসস্পতির মত বড় গ্রহ ব্যবহার করে তার গতিটা আবার বাড়ানো যায়।
একটি প্রশ্ন ছিল বৃহস্পতির বেতার তরঙ্গ ও প্লাজমা নিয়ে। আমাদের এখানে এই নিয়ে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই, তবু বলি মহাকাশযানগুলো ডাইপল এন্টেনা বেতার তরঙ্গে গ্রহণের জন্য ব্যাবহার করতে পারে, একটা সাধারণ কয়েল চুম্বকক্ষেত্র মাপার জ্ন্য আর লাংগমুইর প্রব ইলেকটড়ন ঘনত্বের জন্য।
বন্যা
বৃহস্পতি নিয়ে একটা মজার ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম যে সে মঙ্গল এবং পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল এক সময় এবং তার সাথে আজকের পৃথিবীর কেমন তার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে।
দীপেন
এটা একটা মডেল, বলা হয় grand tack model। এটা ঠিক এভাবেই হয়েছে সেটা এখনও প্রমাণ সাপেক্ষ। কী জন্য এই মডেলটা দেয়া হল সেটা একটু বলি। প্রথম হল মঙ্গলের ভর এত কম কেন (পৃথিবীর এক দশমাংশ)। দ্বিতীয়ত গ্রহাণু বেষ্টনীর ভর এত কম কেন, তৃতীয়ত হল অন্য সৌর মণ্ডলে অত্কায় পৃথিবী দেখা যায়, আমাদের নেই কেন চতুর্থত সূর্যের কাছে কেন বৃহস্পতির মত গ্রহ নেই
বন্যা
একটু সংক্ষেপে বৃহস্পতির চাঁদগুলো নিয়ে যদি একটু বলতেন।
দীপেন
বৃহস্পতি যেন এক খুদে সৌর জগৎ - আমরা ৭৯টি চাঁদের কথা জানি, আরো অনেক আছে নিশ্চয়। তবে এই গ্রগুলোর চাঁদ নিয়ে আলোচনা বেশ বড়, চল সেটা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করি।
এখানে থিংক বাংলা আড্ডায় একজন প্রশ্ন করেছিলেন - বেতার তরঙ্গ ....
বন্যা
আচ্ছা এবার তাহলে শনিতে আসি। এই শনি নিয়ে মনে হয় প্রাচীনকাল থেকেই অনেক কিছু ভেবেছে মানুষ। শনির চক্রগুলো কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? বৃহস্পতি এবং শনিতে তো হিলিয়াম এবন্নগ নিয়নের বৃষ্টি হয়।
দীপেন
শনির ভর পৃথিবীর ৯৫ গুণ। এর চক্র বা রিং হয়তো আদি নীহারিকার অবশেষ অথবা একটি চাঁদের ধ্বংসাবশেশষ
বন্যা
তাহলে আজ এই পর্যন্তই থাক। আমরা এখন আটটি গ্রহ পার হয়ে এসেছি। একসময়, এই তো আমাদের জীবনকালেই তো ইউরেনাসের আর এই নেপচুনের মাঝখানে প্লুটো ছিল, সে আবার বেরিয়ে গেছে। আমাদের এই এক্সেন্ট্রিক এবং বামন্ গ্রহটা নিয়ে পরবর্তী ভিডিওতে কথা বলো। আর সে সাথে কাইপার বেল্ট ও আছে, যা আবার অনেক ধূমকেতুরও উৎস এই কাইপার বেষ্টনী। ধন্যবাদ দীপেনদা, আগামী সপ্তাহে আবার দেখা হবে।