মহাকাশ স্টেশন কীভাবে ঘুরতে থাকে পৃথিবীর কক্ষপথে? | international space station | Think Bangla

.
 

এই মুহূর্তে পৃথিবীর কক্ষপথে যতগুলো  স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ আছে তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা international space station সবচেয়ে বড় মহাকাশযান। একটা ফুটবলের মাঠের মত বড় এই ISS প্রায় 400 কিলোমিটার ওপরে থেকে প্রতিদিন ১৬ বার পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।  


কোনো কোনো সময়ে আপনার মাথার ওপর দিয়েও  যায় -  ঠিক কখন যায় সেটা দেখার জন্য বিশেষ App ও আছে - আপনিও সেটা ব্যবহার করে রাতের আকাশে উজ্জ্বল তারার মত এই মহাকাশযানটিকে দেখে নিতে পারেন সহজেই।  


এই ISS কে পৃথিবীর কক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণরত একটি গবেষণাগার, মানমন্দির এবং বাসাও বলা যেতে পারে -  এখানে নভোচারীরা বসবাস করে বিভিন্ন রকমের গবেষনা করেন - ওজনশূন্য অবস্থায় বিভিন্ন ধরণের এক্সপেরিমেন্ট, মহাজাগতিক রশ্মি বা cosmic ray র পরীক্ষা, দূর পাল্লার মকাশযাত্রা এবং মহাকাশে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবসহ  নানা রকমের গবেষণা চলে। 


১৯৯৮ সালে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ মিলে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটি বানানোর কাজ শুরু করে  এবং ২০০০ সন থেকে নভোচারীরা সেখানে যাতায়াত করছেন, এক সাথে ৬ জন করে নভোচারী থাকতে পারেন। এখানে বলে রাখি এর আগে রুশ নভোচারী . মির স্টেশনে ৪৩৭ দিন ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে মহাকাশে দীর্ঘদিন থাকার রেকর্ড করেছিলেন। আর মার্কিন নভোচারী ক্রিস্টিনা কচ ISS-এ একসাথে দীর্ঘ ৩২৮ দিন কাটিয়ে নারীদের মধ্যে রেকর্ড করেছেন।


আজকে আমরা থিংকের বন্ধু জ্যোতির্বিদ  দীপেন ভট্টাচার্যের সাথে জেনে নেব পৃথিবী থেকে কিভাবে ছোঁড়া হয় এই মহাকাশযানগুলো এবং কিভাবেই বা তারা ভেসে থাকে বা পড়ে না গিয়ে ঘুরতে থাকে পৃথিবীর কক্ষপথে। 



বন্যা - জ্যোতির্বিদ ডঃ দীপেন ভট্টাচার্যের সাথে গত ভিডিও তে আমাদের পৃথিবী কীভাবে ঘোরে এবং কেন আমরা তার এই ঘোরার কিছুই বুঝতে পারিনা সে নিয়ে কথা বলেছিলাম। আজকের এই আলোচনায় জানব কিভাবে মহাকাশ স্টেশনগুলো ছুড়ে দেওয়া হয় পৃথিবীর কক্ষপথে এবং কীভাবেই বা তারা ঘুরতে থাকে পৃথিবীর চারপাশে, তার মধ্যে নভোচারীরাই বা কেমন করে তাদের ওজন হারিয়ে ফেলে, আবার ধরুন যে সব মহাকাশযান চাঁদে, অন্যান্য গ্রহে বা সৌরজগতের বাইরে যাচ্ছে তারাই বা কীভাবে বেরিয়ে যায় পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে? 


আলোচনার শেষে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর দেব, আগের ভিডিওটা দেখে আপনারা ইউটিউবে থিংক বাংলার টিমের জন্য বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন, সেখান থেকে বেছে বেছে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। অনেক ধন্যবাদ প্রশ্নগুলো করার জন্য, ভবিষ্যতেও আপনাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব এভাবেই। 


প্রশ্ন ১ঃ আমরা আগের ভিডিওতে দেখেছিলাম মাধ্যাকর্ষন বলের কারনে আমরা পৃথিবীর যে স্থিরভাবে পৃথিবীর উপরে বাস করতে পারছি তাই নয়, এর কারণেই আমরা পৃথিবীরর যে ঘুরছে সেটাও বুঝতে পারছিনা এবং ছিটকে পড়ে যাচ্ছিনা।

আজকে আমরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা স্পেস স্টেশন সম্পর্কে জানতে চাইব। প্রশ্ন হচ্ছে আমি যদি একটা কিছু ছুড়ে দেই সেটা সেই মাধ্যাকর্ষনের জন্যই পৃথিবীর উপরে এসে পড়ে। যত জোরে ছুড়ি তত দূরে যায় কিন্তু ঠিকই পৃথিবীর উপরে এসেই পড়ে।  

কামান দিয়ে খুব জোড়ে দাগলেও সেটা পৃথিবীতেই এসে পড়ে। তাহলে স্পেস স্টেশনগুলো কিভাবে এতটা দূরে গিয়ে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকে? 


[ 1. Orbital velocity - what velocity is needed to put a satellite in earth's orbit

2. How does a space station stay up and rotate around earth? ]

দীপেন : এই ব্যাপারটা নিউটন আজ থেকে ৩৩৩ বছর আগে ১৬৮৭ সনে তার প্রিন্সিপিয়া না প্রিনখিপিয়া বইটিতে লিখে গেছেন। একে অনেক নিউটনের কামান বা কামানের গোলা বলে অভিহিত করেন।

নিউটন জিনিসটা এভাবে ভাবলেন। মনে কর তুমি কোনো উঁচু পাহাড়ের মাথায় একটা কামান বসিয়ে সেটার থেকে গোলা ছুঁড়ছ। মনে কর কামানটা বেশ শক্তিশালী, তো সেটা যদি সেকেন্ডে ১ কিলোমিটার বেগে গোলা ছোঁড়ে, পৃথিবীর ভূমির সাথে সমান্তরাল ভাবে, তো গোলাটির প্রথমে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে গতি না থাকলেও সে মাধ্যাকর্ষণের কারণে সে সেইদিকে একটা গতি পাবে।

এখন দেখা যাক নিউটনের প্রথম গতিসূত্র কী বলে? যদি কোন বস্তু গতিতে চলে এবং তার ওপর কোনো বল প্রয়োগ করা না হয় তবে সে সোজা পথে না থেমেই চলতে থাকবে। যদি পৃথিবীর কোনো মাধ্যাকর্ষণ বল না থাকত তো গোলাটি সোজাপথ  পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত, কিন্তু  মাধ্যাকর্ষণ বল তাকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে একটি ত্বরণ দেয় যার ফলে যত সময় যায় সে তত দ্রুত কেন্দ্রের দিকে অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের দিকে পতিত হতে থাকে।

এর ফলে সেকেন্ডে এক কিলোমিটার বেগের গোলা খুব বেশি দূর যেতে পারবে না, সে পৃথিবীর বুকে এসে পড়বে। সেকেন্ডে দু কিলোমিটার গতিবেগের গোলা আর একটু দূরে যেয়ে পড়বে, তিন কিলোমিটার আর একটু দূরে। এরকম করতে করতে যখন কামানটি সেকেন্ডে আট কিলোমিটার বেগে যে গোলাটি ছুঁড়বে সেটি পৃথিবীর বুকে পড়তে থাকবে, কিন্তু পৃথিবী যেহেতু সমতল নয়, বরং গোলাকার সেই গোলাটি পৃথিবীপৃষ্ঠকে miss করতে থাকবে এবং এই miss করার মাধ্যমেই সে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকবে। এই যে সেকেন্ডে আট কিলোমিটার গতি সেটাকে আমরা বলি orbital speed বা কক্ষপথের গতিবেগ, এটি অর্জন করলে কোনো বস্তু পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হতে পারে। অবশ্য এই ক্ষেত্রে আমরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে আমাদের গণনায় আনছি না কারন বায়ুমণ্ডল থাকলে সেটি বায়ুর ঘর্ষণে শক্তি হারাবে ও পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে। সেইজন্য International space station যাকে আমরা ISS বলি সহ সমস্ত কৃত্রিম উপগ্রহকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরে স্থাপন করা হয়।


বন্যাঃ তাহলে ISS কত গতিতে ছোড়া হয়েছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভেতরে থাকার জন্য??

ISS এর কক্ষ্পথ পৃথিবী থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার ওপরে। পৃথিবীকে এর পদক্ষিণ করতে মাত্র দেড়ঘন্টা সময় লাগে। আমার ফোনে একটা apps আছে যেটা কিনা আমি যে জায়গায় থাকি তার ওপর দিয়ে রাতের বেলা space station গেলে ১০ মিনিট আগে আমাকে সতর্ক করে দেয়। অনেক সময় সেটি শুক্রগ্রহের থেকেও উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়। নিউটনের গোলার মত এই space station ক্রমাগতই পৃথিবীর বুকে পড়ছে, এটাকে আমরা ইংরেজীতে বলি free fall। free fall বা মুক্ত পতন হল যখন একটি বস্তর ওপর শুধুমাত্র মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে। কিন্তু নিউটনের গোলার মতই সেটা পৃথিবীর বুককে miss করছে।

     
বন্যা - space station তো পৃথিবীর বুক থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে। তার গতিবেগও কি সেকেন্ডে ৮ কিলোমিটার।

দীপেন - না, আটের থেকে অল্প একটু কম, সেকেন্ডে সাড়ে সাত কিলোমিটার থেকে একটু বেশি সাত দশমিক ছয় এরকম হবে। এই কক্ষপথের গতিটা দূরত্বের বর্গমূল অনুযায়ী কমতে থাকে, যেমন geostationary satellite বা ভূস্থিত উপগ্রহ, যেগুলো পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ৪০,০০০ কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে অবস্থিত সেটার গতিবেগ সেকেন্ডে ৩ কিলোমিটার। এই geostationary উপ্গ্রহগুলো প্রতি ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিন করে, তার মানে আমার আকাশে সে এক জায়গাতেই স্থির হয়ে থাকে। এই মুহূর্তে তোমার সঙ্গে আমার যে কথা হচ্ছে সেতা একটা geostationary উপ্গ্রহের মাধ্যমেই হয়তো হচ্ছে।

আরো দূরে যদি আমরা যাই - যেমন চাঁদ - পৃথিবী থেকে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে, পৃথিবীকে সেকেন্ডে এক কিলোমিটার বেগে প্রদক্ষিণ করছে।

বন্যা - তাহলে আপনি কি বলছেন চাঁদও অনবরত পৃথিবীর বুকের দিকে পড়ছে এবং পৃথিবীকে miss করছে?

দীপেন - হ্যাঁ। সেই অর্থে পৃথিবীও সূর্যের দিকে পড়ছে, বা সেইদিকে তার free fall বা মুক্ত পতন হচ্ছে। 


বন্যাঃ আমি শুনেছি বায়ুমন্ডলের সংঘর্ষে মাহাকাশ স্টেশনগুলোর গতি  কমে আসতে শুরু করে এবং পড়তে থাকে। সেটা কিভাবে হান্ডেল করা হয়?  


এখানে স্পেস জাঙ্কের কথাও বলে দিয়েন। 


বন্যা - আচ্ছা তাহলে বোঝা গেল এই স্পেস স্টেশনগুলো কিভাবে ছোঁড়া হয়, কিন্তু এই মুক্ত-পতন যেটাকে বলছেন সেটার সাথে কি space station এর নভোচারীদের যে ওজন থাকে না, তাদেরকে যে আমরা ভাসতে দেখি তার সম্পর্ক আছে।
[ Why are astronauts weightless in the Space Station?]

দীপেন - আছে অবশ্যই। এখানে আমি প্রথমে ভর ও ওজনের মধ্যে পার্থক্যটা বলে নেই। ভর বা mass বলতে আমরা যা বুঝি তা হল একটা বস্তুর content - এর ভেতরে যা আছে। নিউটন এইভাবে ভেবেছিলেন বস্তুর ভর যদি বেশি হয় তবে তাকে গতি দিতে বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে। একটা বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে তাকে যদি ত্ব্ররাণ্বিত করা যায় তবে সেই বলকে ত্বরণ দিয়ে ভাগ করলে ভর পাওয়া যাবে, অন্যদিকে এই ভরকে মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র যে বল দিয়ে টানবে তাকে আমরা ওজন বলব। ভর অপরিবর্তিত থাকবে, কিন্তু ওজন  পরিবর্তনশীল। আমার ভর যদি ৮০ কিলোগ্রাম হয় তবে পৃহ্তিবীর বুকে আমার ওজন হবে প্রায় ৭৮৪ নিউটন, আর চাঁদে ১৩০ নিউটনে, বৃহস্পতি গ্রহের ওপরে হবে প্রায় ২০০ নিউটন। অর্থাৎ চাঁদে আমার ওজন কমবে ছয় গুণ, বৃহস্পতিতে বাড়বে আড়াই গুণ। কিন্তু আমার ভর সব জায়গায় একই থাকবে - যদি না আমি না খেয়ে শুকিয়ে যাই বা খেয়ে ভর বাড়াই।

এবার দেখা যাক আমরা কীভাবে ওজন মাপি। মন কর তুমি একটা ওজন মাপার যন্ত্রে উঠলে, তুমি যন্ত্রকে তোমার ওজন দিয়ে নিচে চাপ দিচ্ছ যন্ত্রও তোমাকে নিউটনের তৃতীয় সূত্র ক্রিয়ার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দিয়ে তোমার ওজনকে সামলাচ্ছে। তোমাকে যন্ত্র যে ওজন দেখাচ্ছে আসলে সেটা হল এই প্রতিক্রিয়া।    

কেমন করে এটা আমরা জানি। এখন মনে কর তুমি ওজন মাপার যন্ত্রটা তোমার পায়ের সাথে টেপ দিয়ে বেঁধে নিলে ভালভাবে এবং একটা উঁচু  জায়গা থেকে লাফ দিলে। একটা তেবিলের ওপর থেকে ঝাঁপ দিলেই হবে। যতক্ষণ তুমি নিচে পড়বে, এটাকে আমরা মুক্ত পতন বলব, ততক্ষণ তুমি যদি তোমার পায়ে বাঁধা যঅন্ত্রের দিকে তাকাও দেখবে সেটা শূন্য দেখাচ্ছে, অর্থাৎ তোমার ওজন হল শূন্য। তুমি আর যন্ত্র একই গতিতে পৃথিবীরে কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছ, যঅন্ত্রটি তোমার শরীরের ওপর কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারছে না, তোমার ওজন এখন শূন্য। তার মানে হল যেকোনো বস্তু যখন মুক্ত পতনের মধ্য দিয়ে যাবে - অর্থাৎ তাদের শরীরের ওপ্র শুধুমাত্র মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করবে তার ওজন হবে শূন্য। ভর কিন্তু শূন্য হচ্ছে না।

এবার আসি space station এর নভোচারীদের প্রসঙ্গে। space station মুক্ত পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, নভোচারীরাও তাই, তাই তাদের ওজন শূন্য। space station যদি ওই উচ্চতায় এক জায়গায় বসে থাকত পারত তাহলে কিন্তু নভোচারীরা তাদের ওজন ফিরে পেত, ওই দূরত্বে তাদের একজন ৮০ কিলোগ্রাম মানুষের ওজন হত ৭০০ নিউটনের মত, অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের ওজনের ৯০ শতাংশ। 

We will not address the following two

  1. What were the difficulties scientists faced initially to put space stations in space.  

  2. Space Walk


বন্যা - তাহলে দীপেনদা কক্ষপথের এই যে গতিবেগ সেটা তো আমরা যদি সৌরজগতের বাইরে যেতে চাই তাহলে যথেষ্ট নয়।

[ What velocity is needed if we want to send a spacecraft to mars, Jupiter or Pluto and beyond]

দীপেন - না যথেষ্ট নয়। মনে কর মহাবিশ্বে শুধু পৃথিবী রয়েছে আর কিছু নেই, তাহলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে বহু দূরে যান পাঠাতে হলে আমাদের সেকেন্ডে ১১ কিলোমিটার বেগে মহাকাশযানকে পাঠেত হবে। একে বলে escape velocity বাংলায় মুক্তিবেগ। এই গতিবেগ ব্যবহার করে চাঁদে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু আমরা যদি বৃহস্পতি, প্লুটো বা সৌর জগতের বাইরে যেতে চাই তাহলে এই ১১ কিলো সেকেন্ডের মুক্তিবেগ যথেষ্ট নয়।

এর কারণ হল আমরা যদি সৌর জগতের বাইরে যেতে চাই তাহলে আমাদের সূর্যের আকর্ষণ থেকে মুক্ত হতে হবে। সূর্যের প্রভাবকে আমাদের গণিতে নিয়ে এলে মুক্তবেগ হবে সেকেন্ডে ৪০ কিলোমিটারের মত। তবে যেহেতু পৃথিবী সূর্যের চারদিকে সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে ভ্রমণ করে সেদিকে আমাদের রকেট ১০ কিলোমিটার সেকেন্ডে ছুঁড়লে ৩০ যোগ ১০ = ৪০ কিলোমিটার আমরা পাব। সমস্যা হল আমরা যদি পৃথিবী থেকে সূর্যের তুলনায় সেকেন্ডে ৪০ কিলোমিটার বেগেও রওনা দিই, পৃথিবী ও সূর্যের সামগ্রিক আকর্ষণ আমাদের শ্লথ করে দেবে এবং পরবর্তী সময়ে বৃহস্পতি, শনি এইসব গ্রহের আকর্ষণ আমাদের আর সৌরজগতের বাইরে যেতে দেবে না।

এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

বিজ্ঞানীরা এর সমাধানের জন্য অভিনব একটি উপায় বের করেছেন - একে ইংরেজীতে বলে gravity assist বা gravitational sling shot effect যেখানে অন্য গ্রহদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশযান তার গতিবেগ বাড়ায়। এক্ষেত্রে Voyager 2 এর অভিজ্ঞতাই ধরুন, পৃথিবী থেকে সেটি সেকেন্ডে ৩৬ কিলোমিটার সেকেন্ডে রওনা দিয়েছিল, বৃহস্পতিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার গতিবেগ হয়ে গেল সেকেন্ডে ১০ কিলোমিটার, তারপর বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্তের আকর্ষণ তার গতি বাড়িয়ে দিল, সে কিন্তু বৃহস্পতিতে আছড়ে পড়ল না, বরং খুব কাছ দিয়ে এই বাড়তি গতি নিয়ে বেড়িয়ে গেল, প্রায় ২৭ কিলো সেকেন্ডে, এরপর সে যতক্ষণে শনিতে পৌঁছাল তার গতি হল সেকেন্ডে ১৬, শনি তার গতি সেকেন্ডে ৩৫ করে দিল। শেষ গ্রহ ছিল নেপচুন যা তার গতি সেকেন্ডে ২৯ করল, নেপচুন ছাড়ার পরপরই তার গতি হল সেকেন্ডে ১৮ কিলোমিটার - সূর্য থেকে এত দূরে ওই গতি যথেষ্ট ছিল সৌর জগৎ ছেড়ে যাবার।   




মানুষ সৌরজগতের অন্য গ্রহে কিংবা দূর নক্ষত্রে যাবার স্ব্প্ন দেখছে সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে, সেই স্বপ্নেরi প্রথম পদক্ষেপ হল কক্ষপথের  মহাকাশযান। দিপেন্দা যেমন বল্লেন, ভবিষ্যতে পৃথিবীর কক্ষপথে দূরপাল্লার মহাকাশযান এসেম্বলি করে,  আমাদের সৌরজগতের এবং মহাবিশ্বের  আরো দূরদূরান্তে যাওয়ার পদক্ষেপ হিসেবেও ভাবা যেতে পারে এই ISS কে। 

আমরা আপনার কাছে আগামীতে জানতে চাইব আমাদের সৌরজগত, তার প্রান্ত এবং সেখানে আমাদের পাঠানো মহাকাশযান ভয়েজার এক ও দুই এর রোমাঞ্চকর সব অভিযানগুলো নিয়ে।   


অনেক ধন্যবাদ দীপেনদা আমাদের সাথে আজকে এই মহাকাশ স্টেশন নিয়ে আলোচনা করার জন্য।


সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles