বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য কী? বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের সমাধান কীভাবে হয়েছে? বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য ধারনাটি একটি গাঁজাখুরি ব্যাপার। জাহাজ এবং উড়োজাহাজ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত পুয়ের্তো রিকো, ফ্লোরিডা এবং বারমুডার মধ্যবর্তী স্থানে হারিয়ে যায় না বা যে পরিমানে হারিয়ে যায় তা পৃথিবীর অন্য যে কোনো স্থানের সাথে তুলনীয়।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের ৫ তারিখ - বেশ ঝরঝরে একটি সকাল। ৫ টি অত্যাধুনিক আমেরিকান এভেঞ্জারস বোমারু বিমান ফ্লোরিডা থেকে মহড়ার উদ্দেশ্যে উড়াল দিল আকাশে। ফ্লোরিডা থেকে বাহামা হয়ে বারমুডা গিয়ে আবার ফ্লোরিডা পর্যন্ত ত্রিভুজাকার একটি যাত্রাপথ। দলের কমান্ডার চার্লস টেইলর খেয়াল করলেন কম্পাস ঠিকমতো কাজ করছে না। কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ করলে তারা বললেন তখনকার অবস্থান কিওয়েস্ট থেকে উত্তরে সোজা মায়ামির দিকে চলে আসতে।
হঠাৎ, টেইলরের সাথে কন্ট্রোল টাওয়ারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল! পাঁচ পাঁচটি বিমান বেমালুম গায়েব! শুধু তাই নয়, এদেরকে উদ্ধার করার জন্য যে বিমানটি পাঠানো হলো তারও আর কোন খোঁজ পাওয়া গেলনা!
হ্যাঁ, এই সেই বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত জায়গা! ফ্লোরিডার মিয়ামি, পুয়েরটোরিকো এবং বারমুডাকে তিনটি বিন্দু হিসেবে ধরে একটি ত্রিভুজ বানালে আটলান্টিকের মাঝে যে জলসীমা পাওয়া যায়, তাকেই নাম দেয়া হয়েছে রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াংগেল! ভিনসেন্ট এইচ গ্যাডিস প্রথম এই নামটি দেন - ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, "The Deadly Bermuda Triangle" নামক প্রবন্ধে - তার পরপরই চারদিকে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়!
চলুন তাহলে আজ থিংকের এই ভিডিওতে দেখা যাক আসলে কতটুকু রহস্যময় এই বারমুডা ট্রায়াংগেল, আদৌ কি সে রসহ্যময়?
ভিডিও শুরু করার আগে একটা ছোট্ট অনুরোধ, আমাদের ভিডিও প্রকাশের সাথে সাথে নোটিফিকশন পেতে নিচের সাবস্ক্রাইব বাটনে এবং বেল আইকনটিতে ক্লিক করুন।
প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা - ১৯১৮ সাল সাইক্লোপস নামক একটি বিশাল জাহাজ উত্তর আটলান্টিকে উধাও হয়ে যায় - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাইক্লোপসের দুই সহোদর জাহাজ প্রোটিয়াস ও নিরিয়াসও উধাও হয়ে যায়!
এরপর আরও অনেক অদ্ভুতুড়ে ঘটনা - জাহাজ ও উড়োজাহাজ গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা শোনা যেতে থাকে - লোকমুখে আতংক ছড়ায়, আর এই জায়গাটার নাম হয়ে যায় ডেভিলস ট্রায়াংগেল বা শয়তানের ত্রিভুজ! জন্ম নেয় নানা অলৌকিক মতবাদ। কেউ বলেন সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে রহস্যময় কোন শক্তি বা শহর আটলান্টিস, কেউ বলেন এলিয়েনরা গুম করে দেয়, কেউ বলেন সেখানে ওয়ার্ম হোল টাইম ট্র্যাভেল করিয়ে অতীত বা ভবিষ্যতে নিয়ে যায়! অনেকে সেখানকার আবহাওয়া, মেঘ, তলদেশের গভীর খাদের কথা উল্লেখ করে প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন।
তবে এই রহস্য ভেদ করতে প্রয়োজন ছিলো জীবিত কারো অভিজ্ঞতা। পাইলট ব্রুস গারনন ১৯৭০ সালে আরো দুজনসহ এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ছোট্ট একটি বিমানে করে বাহামার আন্দ্রোস দ্বীপ থেকে রওনা দেন ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে । সাড়ে এগারো হাজার ফিট উপরে উঠার পর হঠাৎ তিনি দেখতে পান ঘন কালো মেঘ, যেটির মধ্য দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিদ্যুতের ঝলকানির মধ্যে খেয়াল করলেন বিমানটি এক মাইল ব্যাসার্ধের একটি ঘূর্ণি বায়ুর মাঝখানে - কম্পাসও কাজ করছে না, প্রাণপণে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলেন, হঠাৎ দেখতে পেলেন ছোট্ট একটি আলোর উৎস, সেই বরাবর গিয়ে মেঘের সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে দেখলেন বিশাল নীল আকাশ!
কন্ট্রোল টাওয়ারে সাথে যোগাযোগ করার পর বিস্ময়ে তাঁর চোয়াল ঝুলে গেলো - বিমানটি মায়ামির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে - ৯০ মিনিটের পথ তিনি পাড়ি দিয়েছে মাত্র ৪৭ মিনিটে! এমনকি যতটুকু জ্বালানী খরচ হওয়ার কথা ততটুকুও হয়নি! এর ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতে নিজেই একটি প্রকল্প দাঁড় করালেন যে তিনি বৈদ্যুতিক কুয়াশার মত মহাজাগতিক সুড়ংগ দিয়ে মায়ামি চলে এসেছেন - এ নিয়ে বই এবং দুটো সিনেমা পর্যন্ত বানানো হয়েছে!
অবিশ্বাস্য লাগছে ? তাহলে এইবেলা রহস্যে একটু পানি ঢেলে দিই। বাস্তবে যত না রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি ছড়িয়েছে সিনেমায়, বইয়ে, পত্রিকায়, ট্যাব্লয়েডে কারণ আমরা এতে রোমাঞ্চিত হই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতগুলো প্লেন ও জাহাজ উধাও হওয়ার ঘটনা কি মিথ্যা?
না মিথ্যা নয় - তবে, সবগুলোরই ব্যাখ্যা আছে।
শুরুতে যেই ফ্লাইট ১৯ এর কথা বলেছিলাম, সেগুলোর ছিলো পুরনো জঙ্গি বিমান, চারজন পাইলটও ছিলো শিক্ষানবিশ, আকাশটাও পরিষ্কার ছিলো না। কথিত আছে পাইলট টেইলর আগের রাতে নাকি মদ্যপান করেছিলেন। কম্পাস বিকল হওয়ার পর তাঁরা দক্ষিণ-পশ্চিমের বদলে দক্ষিণ-পূর্বে আরও গভীর সাগরের দিকে চলে যান, জ্বালানী শেষ হয়ে গিয়ে সবারই সলিল সমাধি হয়।
আর সেই উদ্ধারকারী বিমানটি?
ত্রুটিপূর্ণ ফুয়েল ট্যাংকের কারণে আকাশেই বিস্ফোরিত হয়, এই মডেলের বিমানের ট্যাংকে প্রায়ই সমস্যা হত বলে পরবর্তীতে তাদের ব্যবহৃত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা পর প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যেখানে টেইলরকেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়।
আর ব্রুস গারনন এর সময় পরিভ্রমণের ব্যাপারটা?
আকাশে ঝড়ে কম্পাস এবং রাডার কাজ না করা খুব স্বাভাবিক। ছোটবেলায় স্রোতের অনুকুল-প্রতিকুলের অংক নিশ্চয়ই করেছেন, ঝড়ের মধ্যে বাতাস অনুকুলে থাকলে ঠিক সেভাবে প্লেনের গতি বেড়ে যাওয়া খুব সম্ভব!
এর না হয় সমাধান হলো, কিন্তু এতগুলো বিমান, জাহাজ উধাও হওয়ার রহস্য কি? ধ্বংসাবশেষ কেন খুঁজে পাওয়া যায় না?
মহাসাগরে হারিকেন, সামুদ্রিক ঝড় এগুলো খুবই স্বাভাবিক বিষয়, এখানকার দুর্ঘটনার হার আসলে আটলান্টিক বা প্রশান্তের অন্য অংশগুলোর মতই যেগুলোর খবর অত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়না। তবে যে ব্যাপারটা সবচেয়ে মজার - সর্বোচ্চ জাহাজ ও বিমান চলাচল করা জায়গাগুলোর একটি হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াংগেল। এই দেখুন না ঠিক এই মুহূর্তে এখানে কতগুলো বিমান উড়ছে সেটির লাইভ ছবি। আর ওদিকে আমরা নিয়মিত শুনি যে এ জায়গা দিয়ে নাকি কোন বিমান বা জাহাজ যায় না!
একথা ভীষণ সত্যি, আটলান্টিক বা প্রশান্তের সুবিশাল জলরাশির অনেকটাই এখনো আমাদের অজানা, আর সেই অজানাকেই দখল করে নিয়েছে নানারকম অলৌকিক ও অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা। তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য আমাদের যতই রোমাঞ্চিত করুক না কেন এর মধ্যে আসলে কোন অলৌকিকতা নেই, সবকিছুই বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আপনাদের কাছে কোন অলৌকিক ঘটনা বা স্থান নিয়ে প্রশ্ন থাকলে জানান আমাদের কমেন্টবক্সে, আমরা সেগুলো বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো ভবিষ্যতের ভিডিওতে!