পৃথিবী ঘুরছে বুঝি না কেন? ছিটকে পড়ি না কেন?

.

আমাদের পৃথিবী যে এত জোরে ঘুরছে সেটা আমরা বুঝতে পারছিনা কেন? ছিটকে পড়ে যাচ্ছিনা কেন? আমরা একটি সামান্য  নাগোরদোলায় চড়লে তার ঘোরাটা, গতিটা অনুভব করি, দেখতে পাই। 

নাগরদোলার দড়িটা ছিঁড়ে গেলে ছিটকে পড়ে যাবো বহুদূরে। 


অথচ আমাদের পৃথিবী নাগরদোলার চেয়ে বহুগুণ বেশি গতিতে ঘুরছে - ঢাকা শহর  ঘুরছে পৃথিবীর অক্ষের চারদিকে সেকেন্ডে ৪২৫ মিটার বেগে বা  ঘন্টায় প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার বেগে। শুধু তাই নয়,  পৃথিবীর একক জায়গা আবার ঘুরছে একেক গতিতে - কিন্তু আমরা এর কিছুই টের পাচ্ছিনা কেন? 


কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা আগের মত  মুখোমুখি ব
সে সাক্ষাতকার নিতে পারছিনা। 

তবে আজ এই নতুন ফরম্যাটে জুমের মাধ্যমে কথা বলবো  থিংকের বন্ধু জ্যোতির্বিদ ডঃ দীপেন ভট্টাচার্যের সাথে, জেনে নেব  এই প্রশ্নগুলোর উত্তর।   

কেমন আছেন দীপেনদা? আপনি যেখানে আছেন সেই জায়গাটা কত জোরে ঘুরছে? 


দীপেন -  ক্যালিফোরনিয়া থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা।  ভালো আছি।


ক্যালিফোরনিয়ার যেখানে আমি আছি সেটা  ঢাকা থেকে আরেকটু উত্তরে, তাই আমরা ঢাকা থেকে আরেকটু ধীরে ঘুরছি - প্রায় সেকেন্ডে ৩৮৫ মিটার বেগে।


বন্যাঃ  আজকে আপনার কাছ থেকে পৃথিবীর ঘোরা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের  উত্তর চাইব। 

আর থিংকের সাথে আপনি  সূর্য নিয়ে দুটো ভিডিও বানিয়েছিলেন। তার একটিতে একজন দর্শক প্রশ্ন করেছিলেন পৃথিবী যে ঘুরছে সেটা আমরা বুঝিনা কেন? ছিটকেই বা পড়ে যাইনা কেন? 


 

দীপেন - প্রশ্নটা শুনতে বেশ সোজা মনে হলেও উত্তরটা অতটা সোজা না। তুমি যদি গুগল বা ইউটিউবে অনুসন্ধান কর তাতে যে উত্তরগুলো পাবেন সেগুলোর কোনোটাই এই ব্যাপারটাকে পুরোপুরি ব্যাখ্য করে না। এটা বুঝতে হলে পৃথিবীর দু'ধরণের গতিকে বা ঘোরাকে  প্রথমে বুঝতে হবে। 

পৃথিবীর দু'ভাবে ঘুরছে - একটি হল নিজের অক্ষের চারদিকে যাকে আমরা বলি আহ্নিক গতি, অন্যটি হল সূর্যের চারদিকে সেটা হল বাৎসরিক গতি। প্রথমে পৃথিবী যে তার নিজের কক্ষের চারদিকে ঘুরছে সেটা দেখা যাক। বার্ষিক গতিতে পরে আসছি। 



আমাদের রাত আর দিন হয় এই ঘোরার জন্য, যেদিকটা সূর্যের দিকে থাকে সেদিকে দিন, সূর্যের উল্টোদিকে থাকলে রাত। আমরা যদি পৃথিবীর উত্তর মেরুর ওপর থেকে নিচের দিকে তাকাই তাহলে দেখবে এই আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবী ক্রমাগতই পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। 
এখানে একটা মজার ব্যাপার বলি - 


পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরতে অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরতে সময়ে নেয় ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড। একে আমরা বলি এক নক্ষত্র দিন। খেয়াল করে দেখুন,  আমি কিন্তু ২৪ ঘন্টা বলছি না। ২৪ ঘন্টাটা হল সৌরদিন। মনে করুন আজ আপনি বেলা বারোটার সময় সূর্যকে মাথার ওপরে দেখলেন। ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে আসার পরে তো সূর্যকে আবার মাথার ওপরে দেখার কথা তাই না? ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে নিজের অক্ষের ওপর ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরতে ঘুরতে কিন্তু পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একটা বাঁকা পথে বেশ কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছে। এর ফলে সূর্যকে মাথার ওপর আবার নিয়ে আসতে পৃথিবীকে আরো এক ডিগ্রী বা-দিকে  ঘুরতে হবে। আর এক ডিগ্রী ঘুরতে লাগে প্রায় চার মিনিট।

তাই ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিটের সঙ্গে যদি আমরা চার মিনিট যোগ করি আমরা পাই ২৪ ঘন্টা, একে আমরা বলি সৌর দিন।  


বন্যাঃ তার মানে পৃথিবী যে তার নিজের চারদিকে ঘুরছে সেই সাথে পৃথিবীর প্রতিটি বিন্দুও ঘুরছে তার অবস্থান থেকে। সেই হিসেবে ঢাকা শহর পৃথিবীর চারদিকে সেকেন্ডে ৪২৫ মিটার বেগে ঘুরছে।  


বন্যা -  এখন তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, বিষুবরেখায় কেন এই গতিবেগ সবচেয়ে বেশী, আর মেরুতেই বা এটা শূন্য কেন?   

দীপেন -  পৃথিবীকে একটা গোলক হিসেবে কল্পনা কর। তাহলে বিষুবরেখায় এর পরিধি হবে সবচেয়ে বেশী। ঢাকা শহরে এই পরিধিটা হবে একটু কম।আর উত্তর বা দক্ষিণ মেরুতে এই পরিধিটা হবে শূন্য 


বন্যা - ওহ আচ্ছা আমরা বিষুব রেখার উপর থাকলে অনেক বড় পরিধিতে ঘুরছি, ঢাকার উপর থাকলে আরেকটু কম, ক্যালিফোর্নিয়াতে আরো কম, তারপরে মেরুতে গিয়ে পরিধি শূণ্য হয়ে যাচ্ছে।

দীপেন -  হ্যাঁ, এই তো বুঝতে পারছ!

এখন বিষুবরেখায় অবস্থিত কোনো বিন্দু, ঢাকা শহর বা মেরু সবাই এক নক্ষত্র দিনে বা ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিটে ৩৬০ ডিগ্রী বা তাদের নিজদের পরিধি ঘুরে আসে। বোঝাই যাচ্ছে বিষুব রেখায় অবস্থিত কোনো বিন্দুকে ঢাকার চেয়ে একটু বেশি গতিতে ভ্রমণ করতে হবে তার বড় পরিধিটা অতিক্রম করতে। আর মেরুর বিন্দুকে কিছুই করতে হবে না, কারণ তার পরিধি শূন্য। তাই বিষুবরেখার ওপর কোন বিন্দু যেখানে ঘুরছে সেকেন্ডে ৪৬৪ মিটার বেগে, ঢাকা ঘুরছে আর একটু কম গতিবেগে ৪২৫ মিটার প্রতি সেকেন্ডে  আর উত্তর বা দক্ষিণ মেরুতে এই গতিবেগ একেবারে শূন্য! 

আমরা এই গতিবেগগুলো কেমন করে পাচ্ছি?  পৃথিবীর ওপর কোনো বিন্দু চক্রাকারে যে পরিধি অতিক্রম করে তাকে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড দিয়ে ভাগ করে। খেয়াল কোরো  আমরা কিন্তু ২৪ ঘন্টা দিয়ে ভাগ করছিনা।

 

বন্যা - সেটা না হয় বুঝলাম, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত জোরে যে আমরা ঘুরছি সেটা বুঝতে পারছি না কেন? একটা সামান্য নাগরদোলায় চড়লে তো মনে হয় নাগরদোলা আমাকে বাইরের দিকে ছুঁড়ে দিতে চাইছে? 


দীপেন - খুব ভাল প্রশ্ন। 

এখানে দুই ধরণের ঘোরা কেন অনুভব করছি না আলাদা করে বুঝতে হবে। প্রথমে আহ্নিক গতির ব্যাপারটা প্রথমে বলি, কারণ এই ব্যাখ্যাটা বেশ জটিলঃ 

দুটো উদাহরণ দিয়ে দেখি বোঝানোর চেষ্টা করিঃ 

নাগরদোলায় চড়লে মনে হয় নাগরদোলা আমাদের বাইরের দিকে ছুঁড়ে দিতে চাইছে, আসলে তো ছুঁড়ে দিতে চাইছে না, বরং আমরা যে নাগরদোলায় যে চেয়ারে বসি এবং আমাদের দেহ তার আগের পথে চলতে চায়, কিন্তু নাগরদলার কেন্দ্রের সাথে বাঁধা দড়ি ওই চেয়ারকে একটা বক্রপথ ঘোরায়। যে দড়িটা চেয়ারটাকে কেন্দ্রের সাথে বেঁধে রেখেছে সেটা কেটে দিলে চেয়ারটি নাগরদোলার চারদিকে যে গোলাকার পথে সে ঘুরছিল তার সঙ্গে যে স্পর্শক সেইদিকে চলে যাবে। 


আমরা যখন গাড়িতে চড়ি এবং চলন্ত গাড়ি যখন একদিকে মোড় নেয় আমাদের দেহ তার উল্টোদিকে যেতে চায়, সেটাও একই কারণে। 


বন্যা - আচ্ছা আমরা বুঝলাম নাগরদোলার দড়ি কেঁটে দিলে কী হবে কিন্তু পৃথিবীর তো এরকম কোন দড়ি দিয়ে আমাদের ধরে রাখছেনা। 


নাগরদোলার মত পৃথিবীও এক অর্থে আমাদের তার পৃষ্ঠ থেকে বাইরে ছুঁড়ে দিতে চাইছে। শুধু পার্থক্যটা হল নাগরদোলার ভেতরের দিকে কোনো মাধ্যাকর্ষণ বল নেই, সেইদিকে আমরা আকর্ষিত হইনা। অন্যদিকে পৃথিবীর তার কেন্দ্রের দিকে আমাদের তার বিরাট মাধ্যাকর্ষণ বল দিয়ে আকর্ষণ করে। এটাই হল আমাদের ওজন। পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে আমরা যে বাইরের দিকে ছিটকে যাবার কথা বলছিলাম সেজন্য ওই ওজনটা অল্প মাত্র কমে। কত কমে? 

যেমন একজন ১৩০ পাউন্ড ওজনের মানুষ বিষুবরেখায় প্রায় আধ পাউন্ড হাল্কা হবেন, আর ঢাকায় আরো একটু কম হাল্কা হবেন দশমিক চার পাউন্ডের মত। আর মেরুতে তার ওজন ১৩০ পাউন্ডই থাকবে, কারণ মেরূতে ঘূর্ণনের মাত্রা শূন্য।


বন্যা - তাহলে দেখছি এত কষ্ট করে ওজন কমানোর চেষ্টা করি,  ওজন কম দেখাতে হলে বিষুবরেখার ওপর বাস করলেই তো হয়।

দীপেন - হা হা, এতে খুব বেশি কমবেনা। আরো ভাল হয় যদি বিষুবরেখার ওপর কোনো পাহাড় পাওয়া যায়, সেই পাহাড়ের ওপর চড়লে ওজন আরো কম দেখাবে। তবে এটা বুঝতে পারছ যে তাতে কিন্তু তোমার সামগ্রিক ভরের কোনো পরিবর্তন হবে না। 


 
বন্যা - এখানে আপনি ওজনের কথা বললেন, আজকে ভর আর ওজণের পার্থক্যের প্রশ্নে না গিয়ে  ঘূর্ণণ নিয়েই কথা বলি। তাহলে আপনি বলছেন,  ঘূর্ণনের গতি যত বেশি হবে আমাদের এই ওজন তত কমবে, কিন্তু এই কমার মাত্রাটা আমাদের সামগ্রিক ওজনের চাইতে এতই কম যে সেটা আমরা বুঝতে পারি না।


দীপেন - একদম ঠিকপৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল যদি হঠাৎ শূন্য হয়ে যেত তাহলে আমরা ওই আধ পাউন্ড বলের জন্যই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দূরে সরে যেতাম, অর্থাৎ সত্যিই ছিটকে পড়তাম। 

-


বন্যা-  এখন তাহলে বলছেন,  পৃথিবীর বিশাল মাধ্যাকর্ষণ আমাদের শুধু এই ছিটকে পড়া থেকেই রক্ষা করে না, আমাদের বুঝতেও দেয় না যে বাইরের দিকে একটা ছোট বল কাজ করে।

দীপেন - হ্যা, আর পৃথিবী যদি সাংঘাতিক জোরে ঘুরত তবে আসলেই আমরা ছিটকে পড়তাম, সেজন্য বিষুবরেখার ওপর যে কোনো বিন্দুকে সেকেন্ডে ৮০০০ মিটার বা ৮ কিলোমিটার বেগে ছুটতে হবে, অর্থাৎ পৃথিবী তার কক্ষের ওপর ঘুরতে ৮৫ মিনিট মত সময়ে নেবে, অর্থাৎ এক দিনের সময় হবে এক ঘন্টা ২৫ মিনিট মত। তখন আসলেই আমরা বুঝরে পারব যে পৃথিবী ঘুরছে। হা হা।

বন্যা- এখন,  আমরা যে পৃথিবীর অক্ষের চারদিকে ঘুরছি সেটা বোঝার উপায় কী?

দীপেন - আমরা যে ঘুরছি সেটা তো দিন রাত্রির পরিবর্তন দেখলেই বোঝা যায়। দিনের বেলা সূর্যের পুব উদয় ও পশ্চিমে অস্ত অথবা রাতের আকাশে তারাদের পুব আকাশে উদয় ও ধীরে পশ্চিমে যাওয়া থেকেই বোঝা যায় পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘুরছে। 


আর ফুকো পেন্ডুলাম নামে এক ধরণের দোলক আছে যা দিয়ে ঘরে বসেই পৃথিবীর ঘূর্ণন বোঝা যায়।

বন্যা - আমি এই সম্বন্ধে শুনেছি। এই পেন্ডুলামের দোলনটি শুধু এক মাত্রায় সীমাবদ্ধ না থেকে  দুই  মাত্রায় দোলে- সেখান থেকেই কী বোঝা যায়?    

দীপেন - একদম ঠিক। একটি ধাতব গোলককে একটা সুতো দিয়ে ছাদের সঙ্গে ঝুলিয়ে তাকে ধাক্কা দিলে সে দুলতে থাকবে, কল্পনা করুন সে একটা তলে দুলছে।


এদিকে পৃথিবী তার নিচে ঘুরে যাচ্ছে, কিন্তু দোলকের তলটি তার আগের জায়গাটিতেই থাকতে চাইছে তার intertia বা জড়তার কারণে। আমাদের মনে হবে দোলকের তলটি ধীরে ধীরে ঘুরছে, কিন্তু আমরা যদি পৃথিবীর বাইরে থেকে এই তলটি দেখতাম তাহলে কিন্তু তলটির এই ঘোরা দেখতাম না, আমরা দেখতাম তলটি তার আগের জায়গাতেই থাকতে চাইছে ।

ঢাকা শহরে এই ঘূর্ণনের তলটি প্রায় ৬০ ঘন্টা পরে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে। আর মেরুতে ২৪ ঘন্টা পরে। আর বিষুবরেখায় কোনো পরিবর্তনই হবে না। Animation

বন্যা - তাহলে তো আমরা দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে বসেই পৃথিবীর ঘুর্ণন মাপতে পারি।

দীপেন - ঠিক, শুধু তাই নয়, আমাদের latitude বা অক্ষাংশও ফুকো পেন্ডুলামের দোলনের সময়কাল থেকে মাপতে পারি। 


বন্যা - তাহলে বোঝা গেল আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর  নিজের অক্ষের উপর ঘোরাটা বুঝতে পারছিনা কেন। এখন বাকি থাক্লো,  সূর্যের  চারদিকে আমরা যে ছুটছি সেটা আমরা বুঝতে পারি না কেন?

দীপেন - সেটার ব্যাখ্যা তুলনামূলকভাবে সহজ। আমরা যদি সমবেগে চলছে এমন বিমানে চলি, তাহলে যতক্ষণ আমরা জানালা দিয়ে বাইরেটা না দেখব আমাদের মনে হবে আমরা যেন স্থির হয়ে আছি। সূর্যের চারদিকে ছুটছি আমরা, কিন্তু পৃথিবীর সবকিছু - বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র, গাছাপালা, আমরা সবাই একই বেগে ছুটছি কাজেই যতক্ষণ না আমরা আকাশের দিকে তাকাচ্ছি আমাদের সেই গতি বোঝার উপায় নেই। 

সূর্যের তুলনায় আমরা সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে চলছি, কিন্তু আমরা যদি পৃথিবীর যে কোনো বিন্দুকে রেফারেন্স হিসেবে ধরি তবে সেটির তুলনায় আমাদের গতিবেগ শূন্য। সেজন্য এই গতিবেগটি আমরা বুঝতে পারছি না। 


বন্যা - শেষ প্রশ্ন। 

আমি ছোট বেলায় ভাবতাম সূর্যের মাধ্যাকর্ষণের কারণে পৃথিবী ঘুরতে বাধ্য হচ্ছে। আসলে তো তা না। পৃথিবী আগে থেকেই ঘুরছিল,  সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ তাকে শুধু বাধ্য করছে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে।  

প্রশ্ন হচ্ছে, সূর্যের চারদিকে আমরা যে ঘুরছি অথবা পৃথিবীর অক্ষের চারদিকে ঘুরছি সে তো গত সাড়ে চারশ কোটি বছর ধরে চলছে। এতদিন ধরে আমরা কেমন করে ঘুরছি, এত শক্তি কোথা থেকে আসছে? 


দীপেন - সেই যে আদিতে যে নীহারিকা থেকে আমাদের সৌর মণ্ডলের শুরু সেটি ঘুরছিল। সেই আদি ঘূর্ণন এখনো বর্তমান কারণ সেই ঘোরা ঠেকাতে হলে তার বিপরীতে আর একটি বল প্রয়োগ করতে হবে। সেটা তো নেই। নিউটনের প্রথম গতিসূত্র বলে কোন কোন বস্তু সমবেগে চলতে থাকলে তার ওপর কোনো বল প্রয়োগ না হলে সে চলতেই থাকবে। তাই সূর্যের চারদিকে আমাদের যে ভ্রমণ তার জন্য মূল দায়ী সেই সাড়ে চারশ কোটি বছর আগের নীহারিকার ঘুর্ণন। নিউটনের প্রথম গতিসূত্র বলে কোন কোন বস্তু সমবেগে চলতে থাকলে তার ওপর কোনো বল প্রয়োগ না হলে সে চলতেই থাকবে। 


বন্যা - অনেক ধন্যবাদ দীপেনদা। আজকের আলোচনায় অনেক প্রশ্নের উত্তর পেলাম, কিন্তু এখন আবার নতুন একগাদি প্রশ্ন আসছে মাথায় । যেমন আমাদের ঋতুর পরিবর্তনন কেন হচ্ছে, বা ধরেন স্যাটেলাইট বা উপগ্রহগুলো ঘোরে কেন পৃথিবীর চার পাশে, নভোচারীরা ভাসে কেন, পড়ে যায়না কেন? এগুলো নিয়ে আবার আরেকদিন কথা বলার ইচ্ছে রইল।

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles