আমরা ডঃ দীপেন ভট্টাচার্যের সাথে আমাদের সৌরজগতের এক্কেবারে প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম থিংকের সৌরজগতের সিরিজের শেষ পর্বে। ভয়েজার ১ এবং ২ ও আমাদের সৌরজগত ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে।
কিন্তু আমরা যদি পুরো মহাবিশ্ব বা এমনকি আমাদের গ্যালাক্সি সাপেক্ষে চিন্তা করি আমাদের এই সৌরজগত একটু ছোট্ট বিন্দু বই আর কিছু নয়। আমাদের মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি আছে লক্ষ কোটি আর নক্ষত্রের সংখ্যা তো অসংখ্য।
আমাদের এই নতুন জ্যোতির্বিদ্যার সিরিজে, দীপেনদার সাথে আমরা ধীরে ধীরে জানবো, সেই আমাদের গ্যালাক্সির গঠন, সেখানে সূর্যের গঠন্ন এবং গতিপথ এবং মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্যালাক্সি সম্পর্কেও।
বন্যা-> গ্যালাক্সির সংজ্ঞায় আসার আগে একটা জিনিস পরিস্কার করি, আমরা যে প্রায়ই গ্যালাক্সির বাংলা করি ছায়াপথ। আমরা বাংলা উইকিপডিয়াতেও দেখছি ওনারা গ্যালাক্সির বাংলা করেছেন ছায়াপথ। আবার অনেকে আকাশগঙ্গা বলছেন।
দীপেন-> প্রথম দৃষ্টিতে গ্যালাক্সি হল তারাদের সমাবেশ বা দ্বীপ। আমাদের গ্যালাক্সির বাইরে যে অন্য গ্যালাক্সি আছে সেটা আমরা জানলাম মাত্র ১৯২৪ সনে। আমাদের গ্যালাক্সি যে মহাবিশ্বের অগণিত গ্যালাক্সির মধ্যে একটা সেটা তার আগে আমরা জানতাম না।
এবার দেখি ঐতিহাসিকভাবে ছায়াপথ বলতে আমরা কী বুঝি। এটি হচ্ছে একটি মেঘলা পথ যা কিনা কোটি কোটি তারার সমষ্টি। এটা আমাদের সৌর মণ্ডলের যে তল যাকে আমরা ইংরেজীতে ecliptic বলি তার সঙ্গে ৬৩ ডিগ্রী কোণ করে থাকে। ১৬১০ সনে গ্যালিলেও দূরবীন দিয়ে দেখলেন এই মেঘলা পথ আসলে তারার সমষ্টি। এই মেঘের মত দেখতে জিনিসটাকে প্রাচীন কাল থেকে আমরা ছায়াপথ ও মাঝে মাঝে আকাশগঙ্গা বলে আসছি। ছায়াপথ কেন, কারণ এটা আবছায় দেখা যায়, এটা হল আমাদের গ্যালাক্সির তল। একটা চ্যাপটা রুটির একদিকে যদি একটা গোলাকার ছিদ্র করা হয় এবং সেখানে একটা পিঁপড়েকে ছেড়ে দেয়া হয়, পিপড়ে দেখবে তার চতুর্দিকে একটা গোলাকার বৃত্ত, ছায়াপথটাও তাই - আমাদের থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে যে সমস্ত তারা আছে সেগুলো দিয়ে এই ছায়াপথ গঠিত। এর ইংরেজী নাম হচ্ছে Milky Way। আমরা যখন Milky Way গ্যালাক্সি বলি আমরা আমাদের গ্যালাক্সিই বোঝাই। এখন মনে কর তুমি বললে মহাবিশ্ব কোটি কোটি Milky Way দিয়ে গঠিত। তা তো আমরা বলছি না, আমরা বলছি কোটি কোটি গ্যালাক্সি দিয়ে গঠিত, যদিও galaxy কথাটা গ্রীক এবং এর সঙ্গে দুধের একটা সম্পর্ক আছে ।
কিন্তু বাংলায় ছায়াপথের একটি নির্দিষ্ট অর্থ আছে, এটি দেখতে আসলেই একটি আবছায়া পথের মত এবং এর একটি জ্যামিতিক আকার আছে যা নাকি শুধুমাত্র আমাদের অবস্থান থেকেই দেখা যায়। কাজেই এই জ্যামিতিক সংজ্ঞাটা অন্য গ্যালাক্সিতে আরোপ করা ভুল। আমাদের বন্ধুরা এটা গত দশ-পনেরো বছরে উইকিপিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে গ্যালাক্সির বাংলা ছায়াপথ করতে চাইছেন, এটা করে ছায়াপথ বলতে আমরা অতি প্রাচীন কাল থেকে যে জিনিসটা ভেবেছি তাই বদলে দিতে চাইছেন।বন্যা -> তাহলে গ্যালাক্সির সংজ্ঞা কী দাঁড়ালো? গ্যালাক্সিকে তো নক্ষত্রপুঞ্জ বলা যাবেনা, গ্যালাক্সিতে তো নক্ষত্র ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে?
দীপেন-> গ্যালাক্সি হল মাধ্যাকর্ষণ বল দিয়ে আবদ্ধ একটি সংঘবদ্ধ জিনিস যার মধ্যে রয়েছে তারা বা নক্ষত্র, তাদের চারপাশের গ্রহমণ্ডলী, গাসীয় নীহারিকা যেখানে তারারা সৃষ্টি হয়, তারাদের অবশেষ, তার মধ্যে আছে শ্বেত বামন, নিউট্রন নক্ষত্র, কৃষ্ণ গহ্বর, আছে তারা থেকে উৎক্ষিপ্ত গ্যাস এবং ধূলা,, আছে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম - যা কিনা খুবই অল্প ঘনত্বের গ্যাস। আর এছাড়া হয়তো আছে কৃষ্ণ বস্তু বা Dark matter যা কিনা আমরা সরাসরি এখনো পর্যবেক্ষণ করতে পারিনি।
বন্যা ->কত ধরণের গ্যালাক্সি আছে?
দীপেন-> মোটামুটিভাবে গ্যালাক্সিদের তিন প্রকারে ভাগ করা হয় spiral বা সর্পিলাকার, elliptical বা উপাবৃত্তাকার এবং বিবিধ। বিবিধর মধ্যে পড়বে বামন গ্যালাক্সি বা নির্দিষ্ট গঠন নেই এমন গ্যালাক্সি।
বন্যা ->আমাদের গ্যালাক্সির নাম আমরা জানি ছায়াপথ বা Milky Way গ্যালাক্সি। এটি একটি সর্পিলাকার গ্যালাক্সি। আমরা সৌরজগতের ওর্ট ক্লাউড থেকে বের হয়ে এখন এক গ্যালাক্সির মধ্যে ভ্রমণ করব, আমরা কোথায় যাব কোনদিকে যাব এসব ঠিক করার আগে কি আমাদের গ্যালাক্সিটির গঠন সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া ভাল নয়?
দীপেন->নিশ্চয়, প্রথমে মোটা দাগে বলি, পরে আমরা ছায়াপথের প্রতিটি বাহুতে বেরাতে বের হব। মনে কর তুমি একটা বড় ফ্ল্যাটবাড়িতে থাক। তোমার ঘরে বসে তোমার বাড়িটার আকার বুঝতে পারবে না, কিন্তু জানালা দিয়ে উল্টোদিকের বাড়িটা দেখে যে বাড়িতে থাক সেটার সম্বন্ধে কিছু ধারণা করতে পারবে। সেরকমভাবে আমরা যখন আকাশে অন্য গ্যালাক্সি দেখি তার থেকে আমাদের গ্যালাক্সির আকার সম্বন্ধে ধারণা করতে পারি।
https://apod.nasa.gov/apod/ap151008.html
ধরো এই গ্যালাক্সিটির কথা - এর নাম হল মেসিয়ার ৮৩ - M 83। দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে ভাল দেখা যায়, এর আর একটি নাম হল Southern Pinwhell Galaxy। আমাদের থেকে ১৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, অর্থাৎ আলো এখান থেকে আমাদের কাছে পৌঁছতে প্রায় দেড় কোটি বছর লেগে যায়। আর আমরা একে অপরের কাছ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ কিলোমিটার বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। এর ব্যাস আমাদের গ্যালাক্সি থেকে একটু ছোট, ৫৫,০০০ আলোকবর্ষের মত, অর্থাৎ আলো এটার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ৫৫,০০০ বছর নেয়, আমাদের গ্যালাক্সির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় নেবে এক লক্ষ বছরের একটু বেশি। কিন্তু যে কারণে এই ছবিটি দেখাতে চাইছি সেটা হল যে, এই ধরণের সর্পিলাকার গ্যালাক্সিকে বলা হয় grand design spiral galaxy। grand design galaxyগুলো দেখতে খুব সুন্দর হয়, এর মূল বৈশিষ্ট হল এদের বাহুগুলো খুব ভাল করে দেখা যায় মূলতঃ দুটি বাহু থাকে। বাহুগুলোর মধ্যে কি তারা নেই, অবশ্যই আছে, কিন্তু সেগুলো বেশ ম্রিয়মান, বাহুগুলোতে নতুন তারা জন্ম নিচ্ছে, যাদের আমরা population one তারা বলি, সেগুলো উজ্জ্বল এবং সেজন্য বাহুগুলোও উজ্জ্বল। কোটি কোটি বছর ধরে কেমন করে বাহুগুলো টিঁকে থাকে সেটি নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক তত্ব আছে, সেগুলো নিয়ে না হয় আমরা পরে কথা বলি। আর দুটি বাহু একটি রেখা বা দণ্ডের মত গঠন দিয়ে যুক্ত। যেহেতু কেন্দ্রে একটি bar আছে সেজন্য এগুলোকে বলা হয় barred spiral - বা দণ্ডসহ সর্পিলাকার বা বক্রাকার গ্যালাক্সি।
বন্যা ->তাহলে আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সিও কি grand design spiral?
দীপেন-> এটা খুব ভাল প্রশ্ন। অনেক জ্যোতির্বিদের মতে grand design এর জন্য দরকার গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটা bar বা দণ্ডের মত গঠন যার দুদিক দিয়ে দুটো সর্পিল বাহু বের হবে। এটা আমরা M81 গ্যালাক্সির ছবিতে দেখেছি। আর একটি উদাহরণ দিই NGC 1300 - আমাদের থেকে ৬১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, এর আকারটা আমাদের গ্যালাক্সির সমানই বলা চলে। কালো লম্বা রেখাটা দিয়ে আমরা যাকে bar বা দণ্ড বলছি সেটা দেখানো হয়েছে। এবং মাঝখানে একটি গোলাকার স্ফীত অংশ দেখা যাচ্ছে যাকে আমরা bulge বলছি যেখানে হয়তো পুরোনো তারা থাকতে পারে।
https://sites.google.com/a/vt.edu/vt-extragalactic-research/home/bar%20+%20bulge%20+%20arms2.jpg
এই ছবিটি খেয়াল কর। এটা আমাদের গ্যালাক্সির একটি নক্সা। ওপর বা নিচ থেকে দেখলে গ্যালাক্সির তলটা এরকম দেখাবে। আমাদের গ্যালাক্সির মধ্যেও এরকম একটা দণ্ড আকারের গঠন আছে যেখানে প্রচুর তারা জন্ম গ্রহণ করছে। এবং আমাদের গ্যালাক্সির দুটি প্রধান বাহু স্কাটাম-সেন্টরাস ও পারসিয়াস এই দণ্ডের দু দিক থেকে বের হয়েছে। কিন্তু শুধু দুটো মূল বাহু ছাড়াও আরো ছোট ছোট বাহু আছে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way#/media/File:Artist's_impression_of_the_Milky_Way_(updated_-_annotated).jpg
বন্যা-> এই গ্যালাক্সির মধ্যে তো আমরা দুটো জিনিস দেখছি মোটা দাগে, উজ্জ্বল বাহুগুলো এবং তাদের মাঝখানে মেঘের মত অংশ, এরা কী?
https://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way#/media/File:Milky_Way_Arms.svg
এটা তো খুব ইন্টারেস্টিং একটা চিত্র, এখানে আমাদের অবস্থানটা ঠিক কোথায়?
দীপেন-> ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে আমাদের সৌর জগৎ কেন্দ্রের নিচে স্কাটাম-সেন্টরাস যাকে অনেক সময় ক্রাক্স সেন্টরাসও বলে এবং পারসিয়াস বাহুর মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু এখানে একটি ছোট বাহু আছে যার নাম হল অরায়ন-সিগনাস বা কালপুরুষ-হংস বাহু, আমরা সেটির কোল ঘেঁষে অবস্থান করছি। আমাদের থেকে গ্যালাক্সির কেন্দ্র প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে।
বন্যা-> গ্যালাক্সির ওই ছবিটা তো দেখলাম, আরেকটু পরিষ্কার করে যদি হাতে এঁকে নির্দিষ্ট করে দেখাই তাহলে কিন্তু অনেকগুলো আপনি বলছেন দুটি বাহুর কথা - পারসিয়াস ও স্কাটাম, কিন্তু এখানে তো আমি আরো অনেক বাহু দেখছি যেমন ক্যারিনা-সাজিটেরিয়াস।
দীপেন-> ঠিক। পারসিয়াস ও স্ক্যাটাম ছাড়াও আরো দুটো বাহু আছে স্যাজিটেরিয়াস ও নরমা। এরা ভেতরের যে bar বা দণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নয়, এবং এখানে সেরকমভাবে নতুন তারা জন্মাচ্ছে না, কাজেই এই দুটো বাহুকে অপ্রধান বলে ধরা হয়।
শীতকালে যখন কালপুরুষ বা অরায়ন নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে তাকাই তাহলে আমরা গ্যালাক্সির বাইরের দিকে তাকাই। সেদিকে যে ছায়াপথ দেখি সেটি অরায়ন এবং পারসিয়াস বাহুর তারাদের দেখি।
https://skyandtelescope.org/online-gallery/orion-and-milky-way/
বন্যা -> তাহলে একটু আগে আপনি যে বললেন আমরা যখন কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে তাকাই আমরা গ্যালাক্সির বাইরের দিকে তাকাচ্ছি, সেখানে যে ছায়াপথের যে অংশ দেখছি, সেটা পার হলে কি শূন্যতা?
https://en.wikipedia.org/wiki/Orion_Arm
https://www.newscientist.com/article/dn8436-spiral-arm-of-milky-way-looms-closer-than-thought/
দীপেন-> অনেকটা তাই, তবে সেটা বোঝার জন্য আমরা zoom-in করব অরায়ন বা কালপুরুষ বাহুর ওপর। ওপরের স্কেলটা খেয়াল কর, সেটা হল ১,০০০ আলোক বর্ষ। আমাদের থেকে কালপুরুষের উজ্জ্বল লাল তারা বেটেলজুস বা বাংলায় আমরা যেটাকে বলি আর্দ্রা সেটার দূরত্ব হল ৬৫০ আলোকবর্ষের মত, অরায়নের বেল্ট বা কালপুরুষের বেল্টের তারারা ১২০০ আলোক বর্ষ দূরে, আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল তারা cygnus নক্ষত্রমণ্ডলীর দেনেব তারাটি আড়াই হাজার আলোকবর্ষের ওপর দূরত্বে। এই ছবিটাই আমরা যদি একটু zoom out করে দেখি -
https://en.wikipedia.org/wiki/Orion_Arm
তাহলে দেখব যে সমস্ত বিখ্যাত নিহারীকা বা nebulaদের আমরা জানি সেগুলো আমাদের গ্যালাক্সির এই প্রান্তেই কয়েক হাজার আলোকবর্শের মধ্যেই অবস্থিত। আমরা পরে এই নীহারিকাগুলোর কাছে ফিরে আসব, সেগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে, তাদের বৈষিষ্ট্য কী সেগুলো জানতে। আপাতত তোমার প্রশ্নে ফিরে আসি, কালপুরুষ ছাড়িয়ে পারসিয়াস বাহু পার হয়ে গেলে আমরা মোটামুটি গ্যালাক্সির বাইরের দিকে চলে যেতে থাকব যদিও outer arm বলে খুব অল্প ঘনত্বের অর্থাৎ কম তারার একটা বাহু আছে সেটা পার হতে হবে। যারা আকাশের তারা চেনেন তাদের বলি আপনি যদি ক্যাসিওপিয়া, পারসিয়াস, অরিগা, কালপুরুষ, বৃহৎ সারমেয় যেখানে আকাশের আপাতদৃষ্টিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা অবস্থিত সেইসব নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে তাকান সেখানে যে ছায়াপথ দেখছেন তা কালপুরুষ ও পারসিয়াস বাহুর মিশ্রিত ফল। এরপরে আমরা গ্যালাক্সির বাইরে বের হয়ে যাব। উত্তর গোলার্ধ থেকে শীতের সময় এই জায়গাটা ভাল করে দেখা যায়।
https://www.pinterest.com/pin/36239971971201963/visual-search/
আমরা তো গ্যালাক্সির বাইরের দিকে চলে গেলাম, এবার ভেতরের দিকে চাইলে আমরা কী দেখব?
আমাদের গ্যালাক্সির ভেতরের দিকের ছায়াপথ দেখার উপযুক্ত সময় হল গ্রীষ্মকাল। এই সময়ে আমাদের রাতের আকাশ গ্যালাক্সির ভেতরের দিকে মুখ করে থাকে।
https://physics.stackexchange.com/questions/276958/what-angle-does-our-solar-system-make-with-the-milky-way
উত্তর গোলার্ধে মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত স্যাজিটেরিয়াস বা ধনু নক্ষত্রমণ্ডল এবং স্করপিও বা বৃশ্চিক নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে তাকালে আমরা উজ্জ্বল ছায়াপথ দেখব। উজ্জ্বল কারণ এদিকে ছায়াপথ গ্যাল্ক্সির কেন্দ্র অবস্থিত যদিও কেন্দ্র থেকে দৃশ্যমান আলো আমাদের কাছে পৌঁছায় মাঝখানের গ্যাস ও ধূলো থাকার কারণে।
https://www.toledolibrary.org/blog/318-the-milky-way-and-non-fiction
https://northstarastronomy.wordpress.com/2020/06/25/sagittarius-the-centaur/
কিন্তু আমরা যদি কেন্দ্র না দেখতে পাই তাহলে আমরা কী দেখছি? আমরা মূলতঃ দেখছি সাজিটেরিয়াস বাহুর তারাদের, নীহারিকাদের এবং ধূলো। এখানে আমরা কিছু অন্ধকার জায়গা দেখতে পাচ্ছি, এই জায়গাগুলোকে বলা হয় Dark Rift বা অন্ধকার চিড় বা ফাটল, এগুলো আসলে হাইড্রোজেনের একটি পরমাণু ও দুটি হাইড্রোজেনের মিলিত অণু অর্থাৎ molecular diatomic hydrogen এবং ধূলোর মেঘ যারা পেছন থেকে আসা আলো শোষণ করে নেয়। এই মেঘগুলো স্যাজিটেরিয়াস বা ধনু বাহু ও আমাদের অরায়ন বা কালপুরুষ বাহুর মধ্যে অবস্থিত, হয়তো আমাদের থেকে শ তিনেক আলোক বর্ষ দূরে।
https://courses.lumenlearning.com/astronomy/chapter/cosmic-dust/
এই ধরণের মেঘ পুরো ছায়াপথ জুড়ে আছে। একটি ভাল উদাহরণ হল Barnard 68 নামে একটি বস্তু। এটি একটি হাইড্রোজেন অণু ও ধুলোর সমষ্টি যা কিনা পেছন থেকে আসা তারাদের আলো শোষণ করে নেয়। এগুলোকে অনেক সময় Bok Globuleও বলা হয়। Barnard 68 আমাদের থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটিও হয়তো আমাদের বাহু এবং সাজিটেরিয়াসের মধ্যে অবস্থিত। যেটা ইন্টারেস্টিং সেটা হল অবলোহিত তরঙ্গে আমরা এই অন্ধকার বটিকা বা বিন্দুটির পেছনে কী আছে সেটা দেখতে পাই।
এই গ্যাস ও ধুলার মেঘ দৃশ্যমান আলো শুষে নিলেও অবলোহিত বা অতিলাল আলো যা আমরা চোখে দেখি না সেটাকে অত শুষতে পারে না। জ্যোতির্বিদরা ধারণা করছেন এটার মধ্যে দুই থেকে তিনটি সূর্যের সমান ভর আছে এবং এটির আকার অর্ধেক আলোকবর্ষের মত। এবং ধীরে ধীরে এটি আগামী কয়েক লক্ষ বছরের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে একটি তারা হতে থাকবে। এটির ঘনত্ব হল প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে প্রায় ২৫০,০০০ লক্ষ কণা। ঘন সেন্টিমিটারে আড়াই লক্ষ কণা কি খুব বেশি না কম একটা সংখ্যা?
আমাদের এইখানে এক ঘন সেন্টিমিটারে ঘনত্ব হল ২৫ বিলিয়ন বিলিয়ন কণা, অর্থাৎ ২৫ এর পরে ১৮টা শূন্য বসাতে হবে। আমার এই দুই হাতের মুঠোয় অন্তত ১০০ বিলিয়ন বিলিয়ন কণা আছে। আমি যত ওপরের দিকে উঠব তত এই সংখ্যাটা কমে আসবে। আমরা যদি দুটি গ্রহের মধ্যে পৃথিবী থেকে দূরে তাহলে এই সংখ্যাটা কমে ঘন সেন্টিমিটারের ৫ থেকে ১০০ মত হবে। আর আমরা যদি দুটি তারার মধ্যে যাই তাহলে এটা দাঁড়াবে ঘন সেন্টিমিটারে একটি। অর্থাৎ প্রায় শূন্য। মহাকাশ যদি এত কম ঘনত্বের না হত তাহলে আমরা পৃথিবীর বাইরে কিছুই দেখতে পেতাম না। আমাদের বায়ুমণ্ডল যদি চাঁদ পর্যন্ত বিস্তৃত হত সূর্য পুরো অদৃশ্য হয়ে যেত, আর যদি barnard 68 র মত মাঝারি ঘনত্বের মেঘ থাকত তাহলেও সূর্যকে খালি চোখে দেখা যেত না। এবার বলি আমার এই হাতের মুঠোয় যত অণু পরমাণু আছে, মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরে যে গ্যালাক্সি আমরা দেখতে পেয়েছি যার থেকে আলো আসতে ১৩০০ কোটি বছর লাগছে, আমি যদি একতা এক বর্গ সেন্টিমিটার সমচ্ছেদের একটা কলাম বা থাম্বা আমাদের থেকে ওই গ্যালাক্সি পর্যন্ত বিস্তৃত করি এবং তার মধ্যে সমস্ত কণাদের গণনা করি সেটি আমার এই হাতের মুঠোয় যত না কণা আছে তার থেকে সামন্য বেশি হতে পারে। তাই মহাবিশ্বের ঘনত্ব কম, যদি না হত আমরা কিছুই দেখতে পারতাম না।