অজানা ডার্ক ম্যাটার

.

১৯৬৮ সাল। অ্যারিজোনা মরুভূমির একটি উষ্ণ রাত। কিট পিক ন্যাশনাল অবজারভেটরিতে যেন খানিক আশার আলো দেখলেন জ্যোতির্বিদ ভেরা রুবিন আর তাঁর সহকর্মী কেন্ট ফর্ড। আমাদের সবচে' কাছের ছায়াপথ এনড্রোমিডায় বিভিন্ন নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তাঁরা আবিষ্কার করলেন নিশুতি রাতের এনড্রোমিডা বেশ রহস্যময়। বিভিন্ন দিক থেকেই এনড্রোমিডার সাথে আমাদের পৃথিবীর ছায়াপথ মিল্কিওয়ের বেশ মিলও আছে, ফলে এন্ড্রোমিডা দর্শন আমাদেরকে আমাদের অস্তিত্বের এই ‘ছুটে চলা’ সম্পর্কে ধারণা দেয়, যেন নিজেদেরই জানছি ক্রমে। এন্ড্রোমিডাকে নিজ গণ্ডির বাইরের জগত সম্পর্কে জানার উৎসও বলা যেতে পারে। জ্যোতির্বিদ রুবিন কিংবা ফর্ড তখনো ঠিক বুঝতেই পারেননি তাঁরা কী যুগান্তকারী আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে ঘুরছেন।  

 

জ্যোতির্বিদ রুবিন আর ফর্ড স্পেকট্রা বা বর্ণালী সম্পর্কিত তথ্যের নোট নিতে থাকেন। স্পেকট্রা মূলত একটি নক্ষত্র কীভাবে আলো ছড়ায় এবং কেমন গতিতে ছায়াপথকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে তার তথ্য দেয়। এন্ড্রোমিডাকে কেন্দ্র করে নক্ষত্রের এই ছুটে চলা এবং কেন্দ্রের সাথে মেনে চলা দূরত্বের তালিকা তৈরি করে রুবিন এবং ফর্ড রোটেশন কার্ভ নামের যে চিত্র দাঁড় করান, সেটি ছায়াপথের ভর নির্ণয়ে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে যেন খটকা থেকে যাচ্ছে এই চিত্রে। এটির উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কেন জানি দ্বিধা কাটছে না। তাঁরা দেখলেন, এই হিসেব নিকেশ যদি সঠিক হয়, তাহলে এটি ডার্ক মেটার সম্পর্কে এমন অভাবনীয় নতুন কিছু ইঙ্গিত করছে যেটি নিয়ে বিগত ৪০ বছরে বিজ্ঞানী মহল তেমন ভাবেইনি। 

 

এদিকে সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিটজ জুইকি ১৯৩৩ সালে একটি গবেষণা পত্রে বিস্ময়কর একটা পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করেছিলেন এবং আশা করেছিলেন এটি জ্যোতির্বিদ মহলে আলোড়ন তুলবে। অনেকটা  রুবিন আর ফর্ডদের মতো জুইকিও একটি নির্দিষ্ট নক্ষত্রের বর্ণালী বিশ্লেষণের চেয়ে গোটা কোমা ক্লাস্টারের গতিবিধির উপর পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন তখন।  

 

ক্লাস্টারগুলো অনেকটা রাতের আকাশের দানবের মতো। যেন হাজার হাজার মিল্কিওয়ে একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে উপলক্ষ করে ঘুরছে। প্রচলিত ধারণা থেকে জুইকি ধরে নিলেন ছায়াপথের এই ছুটে চলা তার সাথে সংশ্লিষ্ট মাধ্যাকর্ষণ বলেরই প্রকাশ। মানে কোমা ক্লাস্টারের ভরের উপর এর গতি নির্ভর করছে। কিন্তু হিসেব যেন মিলে না একটা যায়গায়, গোলমেলে ঠেকে। তিনি দেখলেন, কোমা ক্লাস্টারের ভর সংশ্লিষ্ট ছায়াপথগুলোর সমন্বিত ভরের চেয়েও ৪০০ গুণ বেশি ইঙ্গিত করছে তথ্যে। এই বাড়তি মাধ্যাকর্ষণ বল বা ভরের তারতম্যটা তাহলে কীভাবে হচ্ছে? জুইকি বললেন, উহু, এখানে অবশ্যই দৃশ্যমান বস্তুর চেয়েও অদৃশ্য কোনো বস্তু বা ডার্ক ম্যাটার মাধ্যাকর্ষণ বল তৈরিতে প্রভাব ফেলছে অস্বাভাবিক মাত্রায়, যেটি প্রবলভাবে প্রভাবিত করছে ক্লাস্টারের আচরণকে। জুইকির এই পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ্যার জন্য একটি যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ হতে পারতো। কিন্তু কেন যেন মানুষ জুইকির কথায় তেমন গুরুত্ব দিলো না, হতে পারে জুইকির প্রদত্ত তথ্য পর্যাপ্ত ছিলো না, হতে পারে কোমা ক্লাস্টারকে তখনো অদ্ভুত আউটলায়ার হিসেবে দেখা হতো, কিংবা জুইকি সম্পর্কে প্রচলিত কিছু নেতিবাচক ধারণার কারণে জ্যোতির্বিদ মহলে উনি পাত্তা পাননি...... কে জানে!

 

৩৫ বছর পর, ভেরা আর রুবিনের পর্যবেক্ষণ জুইকির কোমা ক্লাস্টার পর্যবেক্ষণকেই যেন নতুন আঙ্গিকে টেনে আনল আমাদের সামনে। রুবিনদের দেয়া তথ্য থেকে পাওয়া রোটেশন কার্ভ কেমন অদ্ভুত ভাবে একই মাত্রার গতিকে ইঙ্গিত করছে, মনে হচ্ছে- কেন্দ্রের কাছাকাছি নক্ষত্রগুলো দূরবর্তী ছায়াপথের নক্ষত্রগুলোর মতো একই গতিতে আবর্তিত হচ্ছে।  

 

এটি বুঝার জন্য চলুন আমরা হাই স্কুল পর্যায়ে যে ফিজিক্স পড়েছিলাম সেটির আলোকে একটূ চিন্তা করি। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ বলের সূত্র অনুসারে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণা দ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।    

 

আমরা জানি সাধারণ ছায়াপথে নক্ষত্রের আলোক বিচ্ছুরণের একটা বড় অংশ থাকে ছায়াপথের কেন্দ্রমুখী এবং ছায়াপথের প্রান্তের দিকে আলোকছটা ক্রমে কমে আসে। অর্থাৎ, বুঝা যাচ্ছে দৃশ্যমান ভর মূলত কেন্দ্রের দিকেই থাকে।   

আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্রকে যদি আমরা মাধ্যাকর্ষণ বলের মূল উৎস বিবেচনা করি, তাহলে ছায়াপথের প্রান্তের দিকে মাধ্যাকর্ষণ বল কমে আসা উচিৎ এবং ছায়াপথের প্রান্তের দিকের নক্ষত্রগুলোর আবর্তন কেন্দ্রের দিকের নক্ষত্রের চেয়ে কম গতির হবার কথা। কিন্তু রুবিন এবং ফর্ডের পর্যবেক্ষণে নক্ষত্রের এমন আচরণের তথ্য আমরা পাই না। বরং আমরা দেখি সব নক্ষত্রই মোটামুটি একই গতিতে ঘুরছে, যেন গ্যালাক্সির বাইরের আলাদা কোনো উৎস থেকে প্রান্তের দিকের নক্ষত্রগুলো বাড়তি মাধ্যাকর্ষণ বল লাভ করছে। 

 

কিন্তু, আমরা এই ধরণের কোনো আলাদা উৎস গ্যালাক্সিতে দেখি না, বরং এটা হতে পারে জুইকির বর্ণিত সেই ডার্ক ম্যাটারের প্রভাব, যেটি গ্যালাক্সিতে প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণ বলের সৃষ্টি করছে, যেই অদৃশ্য বস্তু আমাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়ছে না।  

 

জুইকির দেয়া চার দশক আগের ডাটার সাথে রুবিন এবং ফর্ডের তথ্যগুলো মিলিয়ে ডার্ক ম্যাটার নিয়ে নব উদ্যমে গবেষণা শুরু হলো। ডার্ক ম্যাটার বা অদৃশ্য বস্তু হলো এমন কিছু সাধারণ বস্তু যা আলোর সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। এগুলো ঠিক প্রকৃতির অন্যান্য পদার্থের মতো না। তাহলে কী দাঁড়ালো? কী যে দাঁড়ালো সেটা জুইকির আলাপের একশ বছর পরও ডিফাইন করা আসলে খানিকটা মুশকিল বটে। কিন্তু ধারণা করা এটা ইলেকট্রন এবং প্রোটনের মতো মৌলিক কোনো পদার্থ। কিন্তু এটি আলোর সাথে, ইলেকট্রিক ফিল্ড বা চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে প্রতিক্রিয়া না, শুধুমাত্র মাধ্যাকর্ষণ বলের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায়। ফলে এটি নিয়ে গবেষণাও বেশ দুষ্কর। 

 

ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব নিয়ে প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখানো না গেলেও এদের উপস্থিতির পরোক্ষ প্রমাণ কিন্তু বেশ শক্তিশালী। 

 

আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতির ব্যাপারটি ধরতে পারি। আমরা দেখি যেখানে এই ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি বিদ্যমান সেখানে আলোর পথটা বেঁকে যাচ্ছে। আলোর চলার পথে বাঁধা পড়লে যেমন পথটা বেঁকে যায়, ঠিক তেমন । অনেকটা চোখের সামনে ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস ধরলে যে ব্যাপারটা ঘটে, তেমনই। 

 

Hubble Space Telescope এর মতো শক্তিশালী কোনো মাধ্যমের সাহায্যে নেয়া মহাশূন্যের গভীর কোনো ছবি যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাবে দূরবর্তী ছায়াপথগুলো ঠিক স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না। কিছু যায়গায় আলোর গতিপথ হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু ঐ নির্দিষ্ট যায়গায় কোনো পদার্থের উপস্থিতি দৃশ্যমান না। মানে ঐ যায়গায় অদৃশ্য কিছু বা ডার্ক ম্যাটার বলে যেটা বলছি সেটার উপস্থিতি বিদ্যমান।  

 

আমাদের চারপাশের বর্তমান ছায়াপথগুলোর চেয়ে, শুরুর দিককার মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণে আমরা এই ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতির ব্যাপারটা অনেক বেশি বুঝতে পারি। মহাবিশ্বের বয়স যখন মাত্র চার লাখ বছর ছিলো, তখন এটির চেহারা আজকের মতো ছিলো না। সেখানে আজকের মতো এতো নক্ষত্র রাশি কিংবা ছায়াপথ ছিলো না, ছিলো শুধু মৌলিক পদার্থ। বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্ট মহাবিশ্ব ছিলো মৌলিক পদার্থে টইটুম্বুর  চরম ঘনত্ব-পূর্ণ একটি পরিমণ্ডল, যা ছিলো তীব্র তেজস্ক্রিয়তায় ভর্তি। 

 

মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত টেলিস্কোপগুলোতে giant microwave radiation receivers ব্যবহার করে আমরা সৃষ্টি পরবর্তী আদিম মহাবিশ্বের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বের করতে সক্ষম হয়েছি, ১৪ বিলিয়ন বছর ধরে যে তেজষ্ক্রিয়তা বহমান  ছিলো। সামগ্রিক দিক থেকে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করে আমরা গড়ে ০.০০০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তারতম্য দেখতে পাই এতে। তাপমাত্রার এই চার্ট থেকে আমরা চার লক্ষ বছর আগের মহাবিশ্বের পরিবেশের একটি চিত্র খুঁজে পাই। 

 

এই তেজষ্ক্রিয়তা, যেটি  cosmic microwave background নামে পরিচিত, সেটি আমাদের আদিম মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়। জ্যোতির্বিদরা একটা চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন, তাঁরা বলছেন প্রোটন, ইলেকট্রন এবং নিউট্রনের মতো পরিচিত মৌলিক উপাদানগুলো পরিমাণ মহাবিশ্বে মাত্র ৫%! ভাবুন তো! আমরা যা দেখি, ছুঁতে পারি, স্বাদ পাই বা অনুভব করতে পারি এমন সমস্ত উপাদান মিলে মাত্র ৫%! তাহলে বাকী ৯৫% কী?! আমরা জানিই না, বাকী ৯৫% কী! মানে ইনভিসিবল বা অদৃশ্য বস্তু। এর মধ্যে ২৫% হলো আমাদের আলোচনার ডার্ক ম্যাটার এবং বাকী ৭০% হচ্ছে ডার্ক এনার্জি। ডার্ক এনার্জি  ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে না পারলেও মহাবিশ্ব বিস্তৃত হওয়ায় এটি ভূমিকা রাখছে। আবার এই মহাবিশ্ব গড়ে উঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে ডার্ক ম্যাটার। ডার্ক ম্যাটার ছাড়া নক্ষত্র, ছায়াপথ, গ্রহ কিংবা জীবন কিছুর সৃষ্টিই সম্ভব হতো না। এভাবেও ভাবা যায় যে, দৃশ্যমান মহাবিশ্ব ডার্ক ম্যাটারের উপর ভিত্তি করেই গঠিত।   

 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ডার্ক ম্যাটারের উপাদানগুলোর উপর মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে এবং এগুলো একে অন্যকে আকর্ষণ করতে পারে, আবার সামগ্রিক মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র অন্যান্য সাধারণ পদার্থকেও আকর্ষণ করতে পারে।   

 

মহাবিশ্ব সৃষ্টি হবার সময় এটি ছিলো তেজস্ক্রিয় পদার্থে পূর্ণ, ছিলো প্রোটন, নিউট্রিনো ইত্যাদি, সেই সাথে আজকের আলোচনার ডার্ক ম্যাটারের উপাদান গুলোও। আবার সৃষ্ট মহাবিশ্বের সব স্থানে সব উপাদান একই মাত্রায় ছিলো এমন না। কোনো স্থানে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি ছিলো, কোনো স্থানে কম আবার কোনো স্থানে অন্যান্য উপাদানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে। যেটি আমরা তখনকার মহাবিশ্বে স্থানভেদে তাপমাত্রার হেরফের দেখে বুঝতে পারি।  

 

যেই অঞ্চলে অতিরিক্ত ডার্ক ম্যাটার ছিলো, স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে মাধ্যাকর্ষণ বলও বেশি ছিলো। ফলে এই অঞ্চলগুলো ক্রমে নিজে নিজেই ভেঙে পড়তে শুরু করে, টানতে থাকে আরো ডার্ক ম্যাটারকে। বিপরীতে যেখানে ডার্ক ম্যাটার কম ছিলো সেটি আরো খালি থাকে। এই প্রক্রিয়ায় ঘনত্ব-পূর্ণ এলাকাগুলোর ঘনত্ব আরো বাড়তে থাকে এবং কম ঘনত্বের অঞ্চল আরো বেশি ফাঁকা হতে থাকে। ক্রমে তৈরি হতে থাকে একটি আপাত স্বচ্ছন্দ মহাবিশ্ব এবং একটি সুসংহত কাঠামো, যেখানে সময়ের সাথে সাথে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি ক্রমে কমে আসে।  

 

গ্যালাক্সি তখন সৃষ্টি হলো যখন ডার্ক ম্যাটার তার চলার পথে অসম্ভব মাধ্যাকর্ষণ বলের মাধ্যমে একই সাথে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম সংগ্রহ করতে থাকলো, যা নক্ষত্র সৃষ্টির মূল জ্বালানী। জড়ো করা এসব জ্বালানীতে যে ডার্ক ম্যাটারের মাধ্যাকর্ষণ বলের কূপ তৈরি হয় তাতে সংকুচিত এবং ঠাণ্ডা হতে থাকে গ্যাসগুলো, যেটি থেকে নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। এমন অনেক নক্ষত্রের সমাহারকেই আমরা গ্যালাক্সি নামে ডাকছি। ব্যাপারগুলো হুট করে ঘটে যায় এমন না, বিলিয়ন বছর ধরে এটি একটি পর্যায়ে আসে মাধ্যাকর্ষণের মাধ্যমে।

 

তো, ডার্ক ম্যাটার আসলে কী? আমরা যেমনটা ভাবছি এটা কি আসলেই এমন কিছু?

 

মৌলিক ভাবনা থেকে আমরা যেটা বুঝি তা হলো, ১.এগুলো কিছু অতি-পারমানবিক মৌলিক পদার্থ বিশেষ, অনেকটা ইলেকট্রন এবং প্রোটনের মতো, ২. সাধারণ পদার্থের সাথে এর কোনো (থাকলেও খুবই সামান্য) প্রতিক্রিয়া নেই, অভিকর্ষ ছাড়া। হতে পারে, ডার্ক ম্যাটারের এমন কোনো বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য আছে যেটি আমরা এখনো ধরতে পারিনি। যেমন, ডার্ক ম্যাটার উপাদান গুলো একে অন্যকে ছিটকে দিতে পারে, যেমনটা বিলিয়ার্ড বল দেয়। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ডার্ক ম্যাটারের ভিন্ন ধরণের আচরণ মহাবিশ্বের কার্যক্রমে ভিন্ন রকমের প্রভাব ফেলছে। যেমন ভাবে বিভিন্ন গবেষক ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মহাবিশ্বকে জানার চেষ্টা করে এবং সেটাকে পরে মূল মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করে দেখে ঠিক কোন মডেলটি কাজ করছে। যদি কোনো মডেলের সাথে মূল মহাবিশ্বের বড় ধরণের অমিল দেখা যায় তাহলে আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হয়, এভাবে তো মিলছে না, তাহলে ডার্ক ম্যাটারের কোন বৈশিষ্ট্যটা আমাদের ভাবনার চেয়ে ভিন্ন? 

 

এমন ভাবার দরকার নেই যে আমরা ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে কিছুই জানি না, বিজ্ঞানীরা মূলত ডার্ক ম্যাটার কী সেটা জানার চেয়ে ডার্ক ম্যাটার কী না সেটি নিয়েই বেশি কাজ করছেন। যেটি আমাদের আলটিমেটলি ডার্ক ম্যাটার কী সেটা জানতে সাহায্য করবে।

 

বিভিন্ন সিমুলেশনের সাথে বাস্তব বিভিন্ন তথ্যের তুলনা করে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা বুঝতে পেরেছি ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে। সেটা হলো এই উপাদানগুলো শুরুতে খুব বেশি গতিতে চলাচল করতো না। ১৯৮০ সালে নিউট্রিনোকে ভাবা হলো ডার্ক ম্যাটারের উপাদানগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে। ডার্ক ম্যাটারের মতো নিউট্রিনোও আলোর সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায় না, ফলে নিউট্রিনোও আমরা দেখতে পাই না, যেটি ডার্ক ম্যাটারের ক্ষেত্রেও সত্য। নিউট্রিনোর ভর শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি হওয়ায় এটি আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে ছুটতে পারে। অর্থাৎ, নিউট্রিনোর এই প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক গতির কারণে অভিকর্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয় না, ফলে নিউট্রিনোও ডার্ক ম্যাটারের মতো হাইড্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে এবং নক্ষত্র তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। সিম্যুলেশনের মাধ্যমে নিউট্রিনোর প্রভাব দিয়ে বানানো মহাবিশ্ব ঠিক আমাদের চারপাশের মহাবিশ্বের মতো না অবশ্যই। 

 

আমাদের পৃথিবীতে বসে এই পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেও আমরা জানি ডার্ক ম্যাটার অন্যান্য সাধারণ পদার্থের সাথে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় না, নইলে হয়তো এতোদিনে আমরা ডার্ক ম্যাটার  চিহ্নিত করে ফেলতে পারতাম। তাই আমরা বলতেই পারি যে, ডার্ক ম্যাটার আমরা দেখছি না কারণ সেটা পদার্থের এমন কোনো বৈশিষ্ট্যের কথা ইঙ্গিত করছে, যেটি পদার্থের  বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই  নেই।

 

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles