20 বছর ধরে আফগানিস্তানের যুদ্ধ এবং দখলের পরে আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার সাথে সাথে তালেবানরা দেশটা দখল করে নিল। আফগানিস্থানের সরকার কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই তালেবান সৈন্যদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট গানি তালেবানরা কাবুলে পৌছেছে শুনেই পালিয়ে যান। শোনা যায় তার ব্রিফকেসে নাকি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল মাস তো বটেই বছরও ঘুরে যেতে পারে তালেবানরা দেশের দখল নিয়ে নিতে।
২০০১ সালে আমেরিকার ওয়ালটার সেন্টারে আফগানদের আক্রমনের পরে আমেরিকার ওসামা বিন লাদেনকে ধরার জন্য আফগানিস্তান আক্রমণ করে। আমেরিকা প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এই যুদ্ধে । আমেরিকা জনগনের ট্যাক্স থেকে আসা এ টাকা কোথায় গেল? ফোলফ পত্রিকায় একটি হিসেবে বলছে এরমধ্যে মাত্র ১৪৫ বিলিয়ন ডলার গেছে দেশের পূনর্গঠনে আর নিরাপত্তায়। বাকিটা? তার মধ্যে মাত্র ৩৬ বিলিয়ন মত গেছে দেশ চালনায় আর উন্নয়নে আর মানবিক সাহায্যে। যে দেশে অর্ধেকের বেশি জনগন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে আর শুধু আমেরিকা যুদ্ধই তো নয়। প্রায় শত বছর ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটায় মানবিক সাহায্যে ব্যয় করা হয়েছে গত ২০ বছরে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার। আজকে আমাদের সাথে আছেন টেক্সাস এ এন এম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর মেহনাজ মোমেন।
বন্যা--মেহনাজ কেমন আছো?
মেহনাজ-- হ্যা ভালো আছি, ধন্যবাদ বন্যা।
বন্যা-- তালেবানরা তো এ সপ্তাহে আবার সরকার গঠন করল। সেখানে কোনো নারী তো দূরের কথা অন্য কোনো দলের সদস্যরা পর্যন্ত নেই। শুধু কর্টট তালিবানি এবং হাপ্তানি গ্রুপের নেতাদের নেয়া হয়েছে। নারীদের আবার ঘর থেকে না বেরোনোরও আদেশ দেয়া হয়েছে। তো আজকে মেহনাজ আমরা তোমার কাছে ৩ টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইব।
১.যে দেশ “গ্রেভইয়ার্ড অফ ইম্পায়ার” বা সাম্রাজ্যগুলোর কবরখানা নামে পরিচিত সে দেশে কেন এত কম প্রতিরোধে এত সহজে অত্যাচারী তালিবানদেরকে আবার মেনে নিল?
২. আফগানিস্তানের আজকের পরিস্থিতি ঠিকমত বুঝতে হলে কেন বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে দেশটার দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস বুঝতে হবে?
৩য় এবং শেষ প্রশ্ন হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কীভাবে বদলে গেছে যুদ্ধগুলো? সেই যে প্রচলিত রেগুলার ওয়ারফেয়ার ছিল তা থেকে কীভাবে একটা বিশেষ ধরনের সাম্রাজ্যবাদী ইররেগুলার ওয়ারফেয়ারে পরিণত করা হয়েছে সেই যুদ্ধগুলোকে?
তাহলে মেহনাজ চলো আজকে আমরা শুরু করি আফগানিস্তানের ইতিহাস দিয়ে। তার আগে আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করি। তুমিও কি অন্য সবার মত বা অনেকের মতই অবাক হয়েছ? এভাবে তালেবানদের হাতে রাতারাতি আফগানিস্তান চলে যাওয়ার জন্য?
মেহনাজ-- আফগানিস্তানের এত দ্রুত পতন এবং তালিবানদের ক্ষমতা গ্রহন করায় তারা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে যারা দুইটা মিথে বিশ্বাস করে একটা মিথ হচ্ছে আমেরিকার সুপার পাওয়ার আরেকটা মিথ হচ্ছে যেকোনো ধরণের পরিবর্তন বাইরে থেকে করা যায়। কিন্তু তুমি যদি আমেরিকার ইতিহাস দেখো আমেরিকার বিভিন্ন যুদ্ধগুলো দেখো তাহলে কিন্তু দেখবে যেগুলো যুদ্ধ ছিল রেগুলার ওয়ার যেখানে কিনা গিয়ে একটা জায়গা একটা টেরিটরি দখল করা হয়েছে এবং ওই টেরিটরিতেই অবস্থান করেছে সৈন্য। সেই রেগুলার ওয়ার আমেরিকা জয়লাভ করেছে আমেরিকার একচুয়ালি সেকেন্ড ওয়ার ঘটার পর থেকেই যতগুলো যুদ্ধের উদাহরণ সেগুলো সব ই ইররেগুলার ওয়ার যেমন ভিয়েতনাম কম্বোডিয়া ইভেন ইরাকেরও আমি বলব যদিও এখনো সৈন্য আছে এগুলো সব ই ইরেগুলার ওয়ার এখানে গিয়ে একটা উদ্দেশ্য থাকে রেজিম চেঞ্জ এবং আরেকটা উদ্দেশ্য থাকে এখানে প্রাধান্য বিস্তার করা। কিন্তু এই ইরেগুলার ওয়ারে জয়লাভ করা খুবই কঠিন কারণ এটার মেজর কীভাবে যে জয়লাভ করল কতটা প্রাধান্য বিস্তার করল সেটা খুবই কঠিন। প্লাস এখানে এত বছর পর্যন্ত সৈন্য মোতায়েন রাখা খুবই কঠিন। আর যেটা হয় লোকাল মানুষ থাকে অঞ্চলের মাউষ থাকে তারা কোনো না কোনো সময় তারা ফিরে আসে সবাই তো আর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। আবার তারা ক্ষমতা দখল করে।। কাজেই এই যুদ্ধে জয়লাভ করা অসম্ভব।
বন্যা-- আফগানদের নাকি একটা প্রোভার্ব আছে যেখানে ওরা বলে,”তোমার কাছে ঘড়ি আছে, আমাদের কাছে সময় আছে’।
মেহনাজ-- হ্যা, যেকোনো টেরিটরি দেখো শুধু যে এই মুসলিম বিশ্ব এশিয়ার দিকে না তুমি যদি ল্যাটিন আমেরিকাতেও তাকাও নিকারাগুয়া, এল সাল ভাদোর, গুয়াতেমালা এসব জায়গায় শীতল যুদ্ধের সময় কোর ওয়ারের সময় যেভাবে প্রক্সি ওয়ার হয়েছে এবং সেখানে গিয়ে তো চিলে এগুলি খুবই ভালো উদাহরণ যেখানে আমেরিকা গিয়ে একদম তাদের আভ্যন্তরীণ সমস্ত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সাংঘাতিক পরিবর্তন করতে চেয়েছে কিন্তু তারপর দেখা গিয়েছে তারপর যখন তারা চলে এসেছে ওই যে ধ্বংসযোগ্য করেছে ওইটার প্রভাব তারা এখনো বহন করছে কিন্তু আসলে ভিতর থেকে ওভাবে কোনোকিছু তারা পরিবর্তন করতে পারেনি।
বন্যা-- ঠিক কথা মেহনাজ। তাহলে আমরা আফগানিস্তানের ইতিহাসে ফেরত যাই। আজকে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্নভাবে তারা কত সাম্রাজ্যবাদী এবং ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করেছে যুদ্ধ করেছে।। এইসমস্ত কিছু যদি আমরা একতা পারস্পেক্টিভে ফেলে না দেখি তাহলে আজকে আফগানিস্তানে কিভাবে কি ঘটছে বা ঘটল সেটা ঠিকভাবে বোঝা যাবে না তাইনা?
মেহনাজ-- তোমার প্রশ্নটা বন্যা অনেক ব্যাপক। এখন আমেরিকার তুমি যদি মিডিয়ার দিকে তাকাও
তাহলে মনে হবে আফগানিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর ১১ থেকে। কিন্তু তা তো না। আফগানিস্তানের ইতিহাস অনেক অনেক পুরানো। এখন ভারতের সাথে তুমি যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কথা চিন্তা কর ভারতীয় উপমহাদেশ পুরাটাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য দখল করেছিল কিন্তু আফগানিস্তান হলো একমাত্র টেরিটোরি যেখানে তারা পুরোপুরি দখল করতে পারেনি ঠিক ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পরে ৫০/৬০ এর দশক। হয়ত ওই ক্ষুদ্র দুটি দশক ছিল আফগানিস্তানের জন্য একটু ভালো দশক যেখানে একটু পরিবর্তন এসেছে উন্নয়ন এসেছে কিন্তু যখন ব্রিটিশরা চলে গেল তখন বাই ডিফল্ট যেরকম করে পাকিস্তান ইন্ডিয়া হলো আফগানিস্তান বাই ডিফল্ট স্বাধীন হয়ে গেল কিন্তু তারপরেই আমরা দেখতে পাচ্ছি আফগানিস্তানের খুবই দূর্ভাগ্য যে যতগুলো বড় বড় আইডিওলজি। পুজিবাদ, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মীয় যেটা ইসলাম। এই তিনটা আইডিওলজি সবচেয়ে যে খারাপ দিকগুলো এই তিনটার জন্যই আফগানিস্তান সাফার করেছে তারপর আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সোভিয়েত আগ্রাসন যেটা সোভিয়েত প্রথমে ইন্ডীরেক্টলি আফগানিস্তানকে কন্ট্রোল করতে চাচ্ছে এবং সেটাও একটা কোল্ড ওয়ারের কন্ট্রিনিউএশন তখন আমেরিকা আফগানিস্তানে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সহায়তা দিয়েছে এবং একচুয়েলি তালিবানের জন্ম সেই সহায়তা থেকেই।
বন্যা-- তখনও তো মনে হয় তালিবানরা ছিল না তাইনা? মানে আমেরিকা সেই কোল্ড ওয়ারের সময় এই রাশিয়া যখন আফগানিস্তানকে দখন করে সৈন্য পাঠালো তখন তো তারা মুজাহীদীনদের প্রচুর অস্ত্র পাঠিয়েছিল পাকিস্তানের সাথে মিলে এবং তারপরে যখন রাশিয়া চলে যেতে বাধ্য হয় এবং তাদের বসানো সরকার ক্ষমতায় থাকে তার কয়েক বছর পরে ১৯৯৫ এর দিকে বোধহয় এই তালিবানরা ক্ষমতায় আসে।
মেহনাজ-- এবং তালিবানরা যে ক্ষমতায় আসল তার কারণ হচ্ছে তার আগের যে সরকার ছিল সেখানে প্রচন্ড পরিমাণে অরাজকতা ছিল সেজন্যই তালিবান ক্ষমতায় আসতে পেরেছে মানুষ যতরকমের তালিবানের শাসন প্রণালীত খুবই অপ্রেসিভ তবুও আফগানিস্তানের মানুষ সেটাকে প্রেফার করেছে তার কারণ তার আগের অরাজকতা সেটা আরো ভয়াবহ।
বন্যা-- হ্যা অরাজকতা দূর্নীতি এবং তার সাথে দারিদ্র্য এবং দূর্দশা।
মেহনাজ-- তারপর আমরা দেখতে পাই যে তালিবানের ক্ষমতা থাকার সময় সেখানে উদের যে ইন্টারপ্রিটেশন যেটা একটা ইসলামি একটা রাস্ট্র সেখানে তারা, উসামা বিন লাদেন এবং তাদের ধরণের মানুষ যারা তাদের যুদ্ধে সহায়তা করেছিল সেখানে তারা স্থান পেল।
বন্যা-- এই তালিবানদের সময়টা তো খুবই অপ্রেসিভ ছিল তাইনা? মানে আমরা নারীদের কথা শুনি মানে নারী অধিকারের কথা শুনি চড়মভাবে কিন্তু সামগ্রিকভাবে আজকে যে আধুনিক অর্থে মানবিক অধিকারের কথা ভাবি পুরুষ, নারী সবার সেটার অবস্থাও তো খুব খারাপ ছিল তখন আফগানিস্তানে। মনে হচ্ছিল যে একটা অন্ধকার যুগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তারা।
মেহনাজ-- হ্যা অবশ্যই এবং তালিবানদের যে মানে ওদের যে ইন্টারপ্রিটেশন মানে ইসলামের যে শরীয়া ল সেইরকম অপ্রেসিভ মানে প্রি ইসলামি যুগেও মানে সৌদি আরবেও এইরকম অপ্রেসিভ ছিল না। তো তারপরে দেখা গেল সেপ্টেম্বর ১১ এর পরে সারাবিশ্বই আমেরিকাকে সমর্থন করল কিন্তু সেই সময় তালিবান এই প্রস্তাব দিয়েছিল যে ওসামা বিন লাদেনকে তারা একটা ইন্টারন্যাশনাল বডির হাতে হ্যান্ডওভার করবে কিন্তু তখন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছিল যে আমরা টেরোরিস্টদের সাথে কোনো ডিল্ করি না। যখন আক্রমণ করল এবং আফগানিস্তান তো এমনিতেই অনেক পিছিয়ে পড়া একটি রাস্ট্র তাদের অনেক খনিজ সম্পদ আছে কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক অনেক অনুন্নত মানে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের আরো ১০০ বছর পিছিয়ে দেয়া হলো কিন্তু তখনো যুদ্ধের উদ্দেশ্য বলা হচ্ছিল যে আমরা উসামা বিন লাদেনকে ধরতে চাই। হ্যা তারপরেই জর্জ বুশের সময় যখন ইরাক যুদ্ধ শুরু হল তখন আফগানিস্তান থেকে সম্পুর্ণ মনোযোগ এবং সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট টাকা অর্থ চলে গেল ইরাকে। তখন বলা হত কেন আমরা আফগানিস্তানে আছি। তখন দেখা যাচ্ছে যুদ্ধের পার্পাস আমেরিকার রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বারবার চেঞ্জ হচ্ছে । কখনো বলা হচ্ছে টেরোরিস্টদের ধ্বংস করতে চাই। কখনো বলছে যে না আমরা আফগানিস্তানের এমন উন্নতি করতে চাই যেন আর কোনোদিন এখানে টেরোরিজম না হয়। আবার লরা বুশ শেষদিকে এসে বলেছে যে আমরা নারীদের উন্নতি করতে চাই। আমরা এ যুদ্ধে এসেছি নারী ও শিশুদের রক্ষা করার জন্য।
বন্যা-- মিডিয়া আর কি যারা এই আগ্রাসনের পক্ষে তাদের কথা শুনলে মনে হয় আফগানিস্তানে কি না যেন উন্নতি হচ্ছে শান্তি এসেছে সেখানকার মানুষ খুব ভালো ছিল নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে সমস্ত দেশে।
মেহনাজ-- সবাই খুব আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে যে আফগানিস্তানের মানুষ কেন তালিবানকে সমর্থন করল। কারণ যখন আফগান সরকার ছিল এবং আমেরিয়াকার এই দেশটার উপর আগ্রাসন ছিল তখন কত সহস্র মানুষ যে মৃত্যু বরণ করেছে ড্রোনের আঘাতে ড্রোন যুদ্ধে। এখন এটার হিসাবটা খুবই কঠিন কারণ বেশিরভাগ সময় আমেরিকা সরকার এটা দাবী করে যে এটা তালিবান সৈন্য মারা গেছে। তাও বিভিন্ন হিসেবে দেখা যায় এটলিস্ট ৫০-৭০ হাজার সাধারণ মানুষ মারা গেছে এর মধ্যে ২৫ হাজার শিশু হয় তারা মারা গেছে নাহয় তারা জীবনের মত পংগু হয়ে গেছে ।
বন্যা-- গত ২০ বছরে বলা হচ্ছে যে হাফ আ মিলিয়নের বেশি আফগান ডিস্প্রেসড হয়েছে রেফিউজিতে পরিণত হয়েছে তারা পাকিস্তান তুর্কি এরকম বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে আর এখন এই আমেরিকা প্রত্যাহার করার সময় যে কত মানুষ ডিস্পেইসড হয়ে গেল কে জানে ।
মেহনাজ-- আমেরিকার আগ্রাসনের সময় যে ২০ বছর ধরে একটা শান্তিপুর্ণ অবস্থা চলছিল আফগানিস্তানে তা কিন্তু একদমই না আফগানিস্তানের যুদ্ধ প্রথম থেকেই সাংঘাতিক রকমের ইন্সটেবিলিটি এবং ভয়াবহরকম নিরাপত্তাহীনতায় ছিল এটা সবসময় ছিল ২০ বছর ধরে ছিল এখন কাবুলে এটা হয়ত কম ছিল কিন্তু কাবুল থেকে ৫০ মেইল দূরে গেলে এটাই সত্য ছিল। তালিবানের আসাটা এটা একটা সাংঘাতিক অরাজকতা তা কিন্তু না। তারা অরাজকতার মধ্যেই ছিল।
বন্যা-- হ্যা তার সাথে যোগ কর যে কি রকমের একটা কোরাপ্ট সরকার জনগনের উপর অত্যাচার তো করছে তার উপর আবার তিন লাখ সৈন্যের কথা বলা হচ্ছে মানে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে তার মধ্যে বহু সৈন্য ইন রিয়েল লাইফ এ নেই। এক্সিস্ট করে না কারণ ওদের ভুয়া নাম দেখিয়ে ওদের ভেতরে নেয়া হচ্ছে।
মেহনাজ-- আমেরিকার যে সরকার ছিল, আফগান সরকার ছিল সেই সরকার ও বহু ধরনের নিপীড়ন করেছে সেখানে হয়ত নারী অধিকার নিয়ে নিপীড়ন করেনি হ্যা নারী অধিকার নিয়ে যে সময়টা কাবুলে স্কুল কলেজে নিরাপদে মানুষ পড়াশোনা করেছে চাকরি করেছে। কিন্তু এ সময়টা বাকি যেদিকে দেখো আফগান সরকার সাংঘাতিক নিপীড়ন করেছে, জনগনের কাছ থেকে কারণে অকারণে অর্থ আদায় করেছে।
বন্যা-- শুধু তো তাই না আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা সাংঘাতিকভাবে করুণ বলা যায় আর কি। এই আমেরিকা যখন ছেড়ে চলে আসছে ২০ বছর ধরে ওখানে থাকার পরে বলা হচ্ছে যে ৪৭.২/৩ পার্সেন্ট মানুষ নাকি দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে অথচ এই যুদ্ধের পিছনে নাকি আমেরিকা প্রায় ২.৩ ট্রিলিয়ন ডোলার খরচ করেছে।
মেহনাজ-- এগুলো হচ্ছে আমেরিকার ট্যাক্স পিয়ারের টাকা। এগুলো গেছে আফগানিস্তানে যুদ্ধের কারণে এবং সেখানে ১০% ও যদি আফগানিস্তানে উন্নয়নের জন্য খরচ করা হত তাহলে আজকে আমরা একদমই একটা ভিন্ন চিত্রে দেখতে পেতাম। এই টাকা যেটা গেছে এটা গেছে ওয়াশিংটন থেকে আফগানিস্তানে। এটা ফেরত এসেছে ৯০% এই টাকা ফেরত এসেছে নর্দান ভার্জিনিয়ায় যেখানে প্রাইভেট ডিফেন্স কন্ট্রাক্টররা থাকে। এই যুদ্ধে বিপুল পরিমাণে প্রফিট করেছে। এই জিনিসটা আরেকটা জিনিস তোমাকে আইডিওলজি দিয়ে দেখতে হবে যেটাকে আমরা পুজিবাদ হিসেবে জানতাম ক্যাপিটালিজম আমেরিকা কিন্তু সেই ক্যাপিটালিজম থেকে অনেক সরে গেছে কিন্তু আমেরিকার যেটা হয়েছে সেটা অন্য দিক আমরা বলি মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স তো এই সমস্ত যুদ্ধ যেটা ইরাক, আফগানিস্তান যেখানে হচ্ছে সেখানে এই যুদ্ধের খরচ বহন করে আমেরিকার জনসাধারণ কিন্তু এটার প্রফিটটা পায় খুবই কম সংখ্যক মানুষ যারা মিলিটারি কন্সট্রাক্টর যারা অস্ত্র বানায় বা যেভাবেই হোক এই যুদ্ধের সাথে সংযুক্ত থাকে সেখানে মিডিয়াও অন্ত্ররভুক্ত। কারণ তুমি যদি দেখো মিডিয়া কাদের মালিক হলো এই সমস্ত কম্পানি যারা যুদ্ধ করে সেইজন্য আমেরিকার মিডিয়াতে এখন দেখবে আফগানিস্তানে যাতে আমেরিকা যায় সেটার জন্য কীভাবে পুশ করা হচ্ছে । আরেকটা জিনিস এবার তালিবানদের কথা শুনে যেটা বুঝা যাচ্ছে একটু তাদের পলিটিক্যাল ম্যাচিউরিটি হয়েছে এভাবে করে তারা সারা দেশকে বা জনগণকে দমন করতে পারবে না কিন্তু এখানে সাবধানতা আছে তারা মুখে যেটা বলছে তারা আসলেই তা করবে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে সংশয় আছে।
বন্যা-- এখন আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে বলে তুমি মনে করছ?
মেহনাজ-- এখন এই পরিস্থিতিতে এখন নতুন এই মঞ্চে যারা আসবে তাদের একজন হলো পুরাতন রাশা আরেকজন চায়না। চায়নার পুজিপাট্টা খুবই ইন্টেরেস্টিং কারণ এটা কোন আইডিওলজি ডিপেন্ড না এটা পিউর ক্যাপিটালিজম যেখানে তারা পিউর প্রফিট করতে পারবে সেখানেই যাবে যেমন তারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে।। এশিয়াতেই তুমিতো বাংলাদেশের কথা নিশ্চই জানো অনেক অর্থ তারা বিনিয়োগ করছে এবং এটা থেকে তারা বিপুল পরিমাণ প্রফিট পাবে। এটার কিছু ভালো দিক হলো বিপুল পরিমাণ অর্থ চায়নায় চলে যাচ্ছেই তবুও কিছু পরিমাণ প্রফিট যেখানে অর্থ বিনিয়োগ করছে সেখানে হচ্ছে। কিন্তু চায়নাও যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আসবে কোনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই আসলে কোনো ভালো জিনিস না। তাদের অভ্যন্তরীণ রেকর্ডো খুবই খারাপ। উইঘুর মুসলিমদের অত্যাচার এবং তালিবানদের এখানে আসার আগে প্রথম যে ডিলটা তালিবানদের সাথে চায়নার হয়েছে সেটা হল তালিবান উইঘুর নিয়ে কোনো কথা বলবে না। এবং উইঘুদেরকে আশ্রয় ও দিবে না। তো এটাও খুব ইন্টেরেস্টিং।
বন্যা-- এছাড়াও শোনা যাচ্ছে যে আফগানিস্তানে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মত খুব মুল্যবান টেকনোলজির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থ আছে। যেটাতে চায়না এখন ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মেহনাজ-- তো এটাই ইংগিত দেয় যে চায়না হয়ত বিপুল পরিমানে বিনিয়োগ এখন আফগানিস্তানে করবে। কিন্তু বিনিয়োগের একটা ব্যাপার আছে একতা শান্তিপুর্ন একটা অবস্থা ছাড়া এই বিনিয়োগ কেউ করতে চায় না কারণ তাতে কোনো গ্যারান্টি নাই যে সে তাকাটা ফেরত পাওয়া যাবে। এবং এখনো আমি বলব আফগানিস্তানের পদ এখন একতা বিশেষ পদ সেখানে যদি নারী সমাজের কথা চিন্তা কর।। ইন দ্যা শর্ট টার্ম আমি ভাল কিছু দেখি না। কিন্তু লং টার্ম যদি শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি হয় এটা ইতিহাসে নজির নাই যে শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি হবে বাট সামাজিক বা কালচারের সাথে সেটার কোনো প্রভাব পড়বে না। এটা হতে পারে না।। এটা একটা বড় জিনিস। বাইরে থেকে আফগানিস্তানের নারিদের মুক্ত করে দিলাম এভাবে কোন সামাজিক পরিবর্তন হয় না। ভিয়েতনামে আমেরিকা ৫৬ হাজার সৈন্য হারিয়েছে। আর ভিয়েতনামে কম্বোডিয়ার কত মানুষ মারা গিয়েছে সেটার হিসাব আর নাই। সেই যে কারণে ওরা গেছিল যাতে ভিয়েতনামে আর সোস্যালিজম না আসে তাইতো।। ভিয়েতনাম এখন এশিয়ার অর্থনীতিতে প্রথম ১০ টা সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে একটা এবং এই কোভিডের সময় তারা খুবই স্বার্থকভাবে কোভিডের মোকাবেলা করেছে।
বন্যা-- তো শুধু তো আমেরিকার ই না।। ভারতেরও অনেক স্টেট আছে আফগানিস্তানে অদিকে রাশিয়া চীন কাতার অ আছে। আর পাকিস্তানের তালিবানদের সাথে ইনভল্ভমেন্ট বহুদিনের বহু আফগান এখন দেশের ভিতরেই পাকিস্তানদের সাহায্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করছে।
মেহনাজ-- আমেরিকার জন্য যেমন এটা বড় পরাজয়। ভারতের জন্যও এটা বড় পরাজয়। তালিবান ক্ষমতায় আসা। কারণ ভারত আফগানিস্তানে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। কাজেই এই সমস্ত দিক দিয়ে দেখতে গেলে এখন আমার কাছে যেটা মনে হয় এখন আফগানিস্তানে যেটা হবে সেখানে আঞ্চলিক রাজনীতি খুবই ইম্পরট্যান্ট চায়না রাশিয়া ইন্ডীয়া পাকিস্তান এদের সম্পর্ক কিভাবে এরা সমোঝোতা করতে পারে। এবং তালিবানের পলিটিক্যাল ম্যাচুরিটি কতটা হয়েছে তারা কিভাবে করে ডিল করতে পারে নেগোশীয়েট করতে পারে এটার উপর ডিপেন্ড করছে।
বন্যা-- হ্যা। সবকিছুর শেষ কথা এই যে রাজনীতির খেলা এত যুদ্ধ সবকিছুর ভুক্তভুগি শেষপর্যন্ত সাধারণ জনগন।।