করোনা ভাইরাস: আপনিই পারেন সংক্রমণ থামাতে | How You Can Fight the Coronavirus | Think Bangla

.

সকাল বেলা বেশ খুশি মনে ঘুম থেকে উঠলেন। আপনি একজন সুস্থ, স্বাস্থ্যবান মানুষ, শরীরে কোভিড নাইন্টিনের কোনো লক্ষণই নেই। ঝরঝরে শরীর মন নিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলেন, আড্ডা দিলেন, ফিরেও এলেন।আপনার বন্ধুদের কারো কারো আবার সন্ধেবেলায় দাওয়াত আছে। সেখানে আরো কিছু লোকজনের সাথে খাওয়া দাওয়া, আড্ডা হবে।সবাই সুস্থ। কোনো সমস্যা নেই, তাই না? 


আছে। শুধু সমস্যা না। বরং মূল, এবং একমাত্র সমস্যাটা এখানেই।আপনি অসুস্থবোধ করছেন না, তাই ভাবছেন কোভিড নাইন্টিনে আক্রান্ত হননি। শুধু আপনি নন, সংক্রমিত মানুষদের আশি শতাংশের মধ্যে খুব সামান্য লক্ষণ বা এমনকি একেবারেই কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা, দেখতে পারছেন না, বুঝতে পারছেন না, অনুভব করছেন না কিন্তু দিব্যি শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এবং ছড়িয়ে দিচ্ছেন এই ভয়ংকর ভাইরাস। কারণটা বোঝা কিন্তু খুব কঠিন নয়। করোনা ভাইরাসের থেকে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সেদিন যে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছিলেন, তাদের কাউকে কাউকে সংক্রমিত করলেন আপনি। তারা আবার তাদের বন্ধুদের সংক্রমিত করলেন। আর তাঁরা সবাই বাসায় গিয়ে আপনার দেয়া সেই ভাইরাসটি ভাগাভাগি করে নিলেন পরিবার পরিজনের সাথে যাঁদের মধ্যে থাকতে পারেন বয়স্ক মা বাবা, দাদা দাদি, নানা নানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং তাঁদের বিপদই সবচেয়ে বেশি।


কোভিড নাইন্টিন খুব দ্রুত ছড়ায়, মৌসুমী ফ্লুর চেয়েও অনেক দ্রুত। আবার এতে মৃত্যুর হার প্রায় ১০ গুণ বেশি। ৭ দিনের মধ্যে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে তা ছড়িয়ে যেতে পারে আরও ২ থেকে ৩ জনের মাঝে। তারপর ৩জন থেকে ৯ জন, ৯  জন থেকে ২৭জন, আর ২৭ থেকে ৮১ জন। এভাবে প্রতি ধাপে ৩৩ শতাংশ হারে বাড়তে থাকে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা। দেখুন, সেদিন আপনি যদি বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে না যেতেন, দাওয়াত না খেতেন তাহলে এতগুলো মানুষ সংক্রমিত হতো না, অসুখটি আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। এই মারণ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া সেখানেই থামিয়ে দেওয়া যেত। আর এভাবেই ভাঙতে হবে এই ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ংকর চক্র। এটাই একমাত্র উপায়। ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমিতের সংখ্যা মার্চের ২৮ তারিখে। মারা গেছে প্রায় ৩০ হাজার। 


আমরা এখন এই মৃত্যুর মিছিল থামাবো কিভাবে? 

আমাদের এখন শত বাধা সত্ত্বেও কতগুলো নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। খাবার ও ওষুধ কেনা, বা ভীষণ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার মত নিতান্ত প্রয়োজন না হলে সর্বক্ষণ বাড়ির ভেতরে থাকুন। মানুষের সাথে সব রকম দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ রাখুন সম্পূর্ণভাবে। ইতালি এবং নিউ ইয়র্কের সাথে আমাদের কিছু দিকে অনেক মিল। আমাদের মত ইতালীয়রাও একান্নবর্তী সমাজে বাস করে। আবার আমাদের মতই নিউ ইয়র্ক শহরও ঘনবসতিপূর্ণ। এবং এই দুই জায়গায়ই কোভিড-19 ছড়িয়ে পড়েছে বুলেট ট্রেনের মত। এরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে এই রোগের ভয়ঙ্কর স্বরূপ। সে তুলনায় আমাদের উপমহাদেশের জনঘনত্ব আরও বেশি অর্থাৎ আমাদের বিপদও কয়েক গুণ বেশি!


এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, যে সব দেশ ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছে, তারাই ভুগেছে সবচেয়ে বেশি। আর ওদিকে যেসব দেশ দ্রুত গতিতে, টেস্টের মাধ্যমে, রোগীদের সনাক্ত করে সেবা প্রদান এবং তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করা, সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউনের মত নিয়মগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা এসব পেরেছে, তারাই দ্রুত রোধ করতে পেরেছে, এই রোগের সংক্রমণ। তবে এটাও ঠিক যে  আমাদের দেশে সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গরোধ, বিশেষ করে লকডাউনের মানে হলো  লোকজনের পেটে খাবার জুটবে না। কিন্তু এ ছাড়া বাঁচারও তো উপায় নেই। 


তাহলে এখন দরকার, সঞ্চয়হীন, দিন-এনে দিন-খাওয়া যে মানুষগুলো ব্যবসা বা কাজ হারিয়েছেন, ঘরবন্দি হয়েছেন, তাঁদের জন্যে অবিলম্বে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা, বাইরে বেরুলে পুলিশের পেটানো নয়, গণ-অপমান করা নয়তাঁদের খাবার ও আশ্রয়ের জন্য সরকারের ওপর চাপ দিন, নিজেরা এগিয়ে আসুন, অসহায় মানুষদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করুন, এবং যাঁরা খাবার পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁদের আর্থিক সহায়তা করুন। অনেকেই ভাবছেন আমাদের উপমহাদেশের উষ্ণতা, আর্দ্রতা ও নিজেদের সংক্রমণ-প্রতিরোধক্ষমতা বা Immunity আমাদেরকে বাঁচিয়ে দেবে। এই নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে তবে বিশেষজ্ঞরা এখন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি। হলে তো ভাল, না হলে? এই মুহূর্তে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নিছক প্রমাণহীন আশাবাদের ওপর নির্ভর করে বসে থাকাটা কি ঠিক হবে?  


প্রাকৃতিক নিয়মকে ব্যাখ্যা করাই বিজ্ঞানের কাজ। তাই প্রাকৃতিকভাবে বিবর্তিত এই মারণ ভাইরাস কীভাবে কাজ করে এবং ছড়ায় তা বৈজ্ঞানিকভাবে বোঝা দরকার। এবং দরকার মানুষকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভাবতে শেখানো, যাতে চারদিকের কুসংস্কার বা গুজবে কান না দিয়ে পরিকল্পনা মেনে করোনাভাইরাসকে ঠেকানোর পথে আগানো যায়।সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন, মাথা ঠান্ডা করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাছে টেনে নিন মানবতাকে। 

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles