আসলেই কি মাউন্ট এভারেস্টের চুড়ো পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু?
চোখ বন্ধ করেই সবাই হয়তো হ্যাঁ বলবেন, কিন্তু আসলে উত্তরটা হল
-- হ্যাঁ এবং না, দুটোই।
হ্যাঁ এবং না, দুটোই আবার এক সাথে হয় কীভাবে?
আর এভারেস্ট সবচেয়ে উঁচু না হলে পৃথিবীতে কোথায় আছে এর চেয়েও উঁচু পর্বতশৃঙ্গ?
আসুন, আজকে থিংকের বন্ধু, Florida International University-র ভূতত্ত্বের প্রফেসর ড. নেপচুন শ্রীমালের সাথে আমরা জেনে নেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর।
সালটা ছিল ১৮৫২।
রাধানাথ শিকদার নামের এক বাঙালি, কলকাতায় বসে, মাপজোখ করে দেখালেন যে, কাঞ্চনজঙ্ঘাকে তখন সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ বলে মনে করা হলেও আসলে কিন্তু সেটা সবচেয়ে উঁচু নয়, পিক-১৫ নামের হিমালয়ের যে শৃঙ্গটি আছে সেটি আসলে কাঞ্চনজঙ্ঘার চাইতেও উঁচু - এর উচ্চতা হবে ২৯,০০০ ফুট বা ৮,৮৩৯ মিটার।
এর পরপরই বৃটিশ ভারতের জরিপ বিভাগের জর্জ এভারেস্টের নামে এই শৃঙ্গের নামকরণ করা হয় এভারেস্ট। ->যদিও তিব্বতে প্রাচীনকাল থেকেই স্থানীয়ভাবে এর নাম ছিল Cha-mo-lung-ma, যার অর্থ Goddess Mother of the World বা বিশ্ব-মাতৃদেবী। আর নেপালে এর নাম ছিল সাগরমাথা, মানে আকাশের সর্বোচ্চ স্থান।
সেই ঔপনিবেশিক সময়ের প্রথা মেনে, এখানেও অবজ্ঞা করা হলো দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় মানুষদের দেওয়া নামগুলোকে।
১৯৫৫ সালে ভারতীয় একটি জরিপ, আরো ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে জানালো যে, এই এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার। সম্প্রতি চিন-নেপালের যৌথ একটি দলও দেখিয়েছে, এর উচ্চতা এখন ৮,৮৪৮ দশমিক ৬ মিটার।
তাহলে দেখা যাচ্ছে,
প্রথমত, রাধানাথের হিসেবে তেমন ভুল ছিল না আর
দ্বিতীয়ত, এভারেস্ট পর্বত উচ্চতায় এখনো বেড়ে চলেছে।
ভূমি জরিপের স্বীকৃত প্রথা অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের উচ্চতা মাপা হয় গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ মানে -> mean sea level থেকে।
সে অনুযায়ী হ্যাঁ, এভারেষ্ট সত্যিই ভূপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে ‘না’ আবার হয় কি করে?
না হয়!!
যদি উচ্চতা গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত হিসেব করা হয়।
যেমন ধরুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের আগ্নেয়গিরি মাউনা কেয়া।
এই আগ্নেয়গিরির গোড়া থেকে ডগার ->উচ্চতা হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে এই পাহাড়টির উচ্চতা এভারেস্টের উচ্চতার চেয়ে ১৩৬২ মিটার বেশি। কিন্তু যেহেতু মাউনা কেয়া পর্বতের ৬,০০০ মিটারই পানির নিচে বা গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে, সংজ্ঞা অনুযায়ী একে আর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলা যাচ্ছে না ।
এভাবে আমরা যদি আগা থেকে গোড়া হিসেব করি, তাহলে কিন্তু, এভারেস্টকে প্রথম বিশটা উঁচু শৃঙ্গের ভেতরেও ফেলা যাবেনা।
আবার ওদিকে, উচ্চতাকে যদি পৃথিবীর ->কেন্দ্র থেকে মাপা হয়, তাহলেও কিন্তু এভারেস্টের শৃঙ্গ পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দু থাকেনা। এভাবে হিসেব করলে দক্ষিণ আমেরিকার একুয়েডরের পর্বতমালার চিম্বো-রাযো শৃঙ্গ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু।
পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু থেকে হিসেব করলে মাউন্ট এভারেস্টের শৃঙ্গের চাইতে চিম্বো-রাযোর শৃঙ্গ আরো ২,১৬৩ মিটার ওপরে।
এর কারণ হল, আমরা সাধারণভাবে পৃথিবী গোল বললেও পৃথিবী কিন্তু পুরাপুরি গোলাকার নয়। বিষুবীয় অঞ্চলে এটার পেটটা বেশ মোটা ->আবার দুই মেরুতে কমলালেবুর মত সামান্য চাপা। আর চিম্বো-রাযো ওই ফোলা পেটের ওপর বসে রয়েছে বলে এটার মাথা আকাশে সবচে উঁচুতে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।
তবে আমাদের প্রচলিত ভৌগোলিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, অর্থাত আটির উপর থেকে উচ্চতা হিসেব করলে এভারেস্টই কিন্তু -> পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। তাকে মনে হয় না এই শিরোপা থেকে খুব সহজে হটানো যাবে।
এর পরের থিংকের ভিডিওতে আরা জেনে নেব কী করে তৈরি হলো এভারেস্টের মত এত্ত বড় পর্বত।