বন্যাঃ বিশ্বের যে যেখান থেকে আজকের থিংক বাংলার লাইভে যোগ দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। পুরো পৃথিবীতে আত্মহত্যা অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা, প্রায় আট লক্ষ মানুষ প্রতি বছর আত্মহত্যায় মারা যান। আজকাল বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক আত্মহত্যার খবর দেখছি। আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী আমরা জানি যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই শুধু ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া বহু আত্মহত্যার খবরতো আমরা জানতেও পারিনা।
অ্যামেরিকাতে মৃত্যুর কারন হিসাবে আত্মহত্যা দশ নাম্বারে - সারা বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি মানুষ আত্মহননের কথা চিন্তা করেন। ২০১৭-এর একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমেরিকাতে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং ৪৭,০০০ মারা গিয়েছেন।
আজ আমরা আত্মহত্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো প্রিয় ক্যামেলিয়া গ্রুপের সাথে সংযুক্ত এবং আমেরিকায় কর্মরত ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ড. স্বাতী আহমেদের সাথে। আত্মহত্যা খুব সংবেদনশীল একটি বিষয়, তাই শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটা কথা বলে নেই...
আপনার বা আপনার পরিচিত কারো যদি আত্মহত্যার চিন্তা আসে, দয়া করে এই মুহুর্তে
কান পেতে রই হেল্প লাইনে নিমোক্ত নম্বরে যোগাযোগ করুন। এরা দুপুর ৩টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত প্রতিদিন খোলা থাকে।
GP: 01779- 554391
Airtel: 01688-709965
Banglalink: 01985-275286
Rabi: 01852-025634
Teletalk: 01517-969150
সমালোচনা না করে, আন্তরিকভাবে তার পাশে থাকুন (optional)। নিজের এবং অন্যের জীবন রক্ষা করুন!
আমাদের সমাজে সাধারণত ভাবা হয় যে একজন মানুষ যখন সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার সব ভরসা/সাপোর্ট হারিয়ে ফেলে তখন সে আত্ম্যহত্যার পথ বেছে নেয়। আসুন তাহলে আমরা আজকে ড.এর মত একজন প্রফেশনাল সাইকোলজিস্টের কাছ থেকে কেন মানুষ আত্মহত্যা করে বা চিন্তা করে, কি কি রিস্ক ফ্যাক্টর এর পেছনে কাজ করে, কিভাবে এটা প্রিভেন্ট করা যায়, আমরা আমাদের আপনজনদের জন্য কী কী করতে পারি, এর কোন চিকিৎসা আছে কিনা।
ড. স্বাতী আহমেদ, অনেক ধন্যবাদ আজকে থিংক বাংলার সাথে আত্ম্যহত্যার মত একটা জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আপনার স্পেশালিটি তো ট্রমা, তাই না?
স্বাতী: ধন্যবাদ আমাকে এই বিষয়ে আলাপের আমন্ত্রণের জন্যে। হ্যাঁ, আমার স্পেশালিটি ট্রমা। আমি EMDR, অ্যাডভান্সড মাইন্ডফুলনেস, হিপ্নোথেরাপি, এবং এনার্জি হিলিং টেকনিকে সার্টিফাইড।
বন্যা: আপনাকে ডঃ আহমেদ ডাকবো?
স্বাতী: স্বাতী বলতে পারেন। আপনাকে কি বন্যা বলে সম্বোধন করব?
বন্যা: অবশ্যই! আজকে এত বড় একটা সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি, এটা আমাদের সমাজে একধরণের ট্যাবু বা নিষিদ্ধ বিষয়! অনেকেই এখনো মনে করেন যে এগুলো নিয়ে কথাই বলার দরকার নেই, বরং আলাপ করলেই মানুষকে আরো উদ্ভুদ্ধ করা হবে। আসলেই কি তাই?
স্বাতী: গবেষণা থেকে জানা গেছে যে জিজ্ঞেস করায় রিস্ক বাড়ে না। আত্মহত্যা এখন ট্যাবু কারণ আমরা এর পেছনে যে কারণগুলো থাকে তা নিয়ে বিশেষ জানি না, সেগুলো যে চিকিৎসা করা যায় এবং সুন্দর সুস্থ জীবন যাপন করা যায় তা জানি না, আর মানসিক সমস্যা এখনো আমাদের কাছে খোলাখুলি আলাপের বিষয় হয়ে ওঠেনি অজ্ঞানতার কারণেই। আমরা এখনো ভাবি মানসিক সমস্যা নিয়ে তখনই মানুষ কথা বলে যখন সে পাগল হয়ে যায় - এধারণাটা আসলে ভুল। কিন্তু আমরা যত জানব ততই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব এবং আত্মহত্যা রোধ করতে পারব। অর্থাৎ প্রতিরোধ এখানে নিরাময়ের চেয়ে বেশি জরুরি!
তবে হ্যাঁ, যখন আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে পত্রিকায় লেখা হয়, সেখানে WHO-র গাইডলাইন্স মেনে লেখা প্রয়োজন, অর্থাৎ কিভাবে আত্মহত্যা করেছেন কেউ সেটা বিস্তারিতভাবে লেখার আগে চিন্তা করতে হবে কিভাবে তা সাধারণ জনগণকে এফেক্ট করবে, কী ধরণের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা উচিত না এবং এ ধরনের খবর প্রকাশ করলে, তার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় হেল্পফুল ইনফরমেশন দিতে হয় যেমন সুইসাইড সাপোর্ট সার্ভিসের নম্বর। এগুলো না মানলে, খবরগুলো ক্ষতিকর হয় বৈ কি!
বন্যা: আচ্ছা তাহলে আপনি বলছেন যে আলাপ করা যাবে এবং উচিত - যেভাবে আমরা জ্বর নিয়ে কথা বলি অথবা ধরুন ক্যান্সার নিয়ে কথা বলি। আমাদের ঠিকমত শিখতে হবে কীভাবে ঠিক করে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। এবার এক্কেবারে মূল প্রশ্নে আসি, কেন মানুষ আত্মহত্যার চিন্তা করে?
স্বাতী: মানুষ যখন ভাবেন জীবনে যে অপছন্দনীয় ঘটনা ঘটছে, তা তাঁরা সহ্য করতে পারবেন না, তখন অনেকেই আত্মহত্যার চিন্তা করেন। অপছন্দনীয় ঘটনাগুলো অর্থনৈতিক সমস্যা, প্রিয়জনের মৃত্যু, কঠিন কোন শারীরিক রোগ, বিচ্ছেদ, যৌন নিপীড়ন, অনুশোচনা, প্রত্যাখ্যান, চাকরী হারানো, সামাজিক অপমান, এ জাতীয় অনেক কিছুই হতে পারে। কিশোর/তরুণরা বাবা মার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে বা হৃদয় বিদারক ঘটনার কারনে আত্মহত্যার চিন্তা করতে পারে।
বন্যা: তাহলে কি আত্ম্যহত্যা একটা সামাজিক ইস্যু? নাকি এর পেছনে শারীরিক, হরমোনাল, মানসিক সব ধরণের সমস্যা কাজ করতে পারে? আমাদের একজন দর্শক জানতে চেয়েছেন এর পিছনে কোন জেনেটিক বা বংশগতীয় ব্যাপার আছে কিনা।
স্বাতী: আত্মহত্যা করার ইচ্ছে বা প্রবণতার পেছনে নানবিধ কারন কাজ করতে পারে - সামাজিক, শারীরিক, জেনেটিক, হরমোনাল, এবং মানসিক। রিসার্চাররা ৬টি জিনের একটি সেট নিয়ে পরীক্ষা করেছেন এবং সেখানে দেখেছেন যে আত্মবহত্যাকারীদের ব্লাডে এই জনগুলোর এক্সপ্রেশন বদলে গিয়েছে। এটা একটি জটিল বিষয় তবে সহজ করে বললে বলা যায় যে স্ক্রিজোফ্রেনিয়া একটি জেনেটিক সমস্যা। রিসার্চাররা একটি অ্যাপ ল্যাবে তৈরি করেছেন যার মুড এবং রিস্ক ফ্যাক্টর ডিটেক্ট করতে পারে ৯০% অ্যাকুরেটলি এবং বলতে পারে এই জেনেটিক রোগীটির আত্মহত্যার চিন্তায় বা চেষ্টায় হস্পিটালাইজড হবার সম্ভাবনা কতখানি। এখানে নেচার ভার্সেস নারচার নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
তবে আত্মহত্যার ইচ্ছেটি শারীরক বা হরমোনাল ইম্ব্যালেনস, বা নিউরোট্রান্সমিটার কমবেশি ইত্যাদি থেকে শুরু হলেও, শেষাব্দি মানসিক কষ্ট এমন এক পর্যায়ে পৌছয় যে অনেক সময় মানুষ নিজের জীবন শেষ করার উদ্দেশ্যে নিজেকে আঘাত করে এবং যদি তাতে তার মৃত্যু ঘটে তবে তাঁকে আমরা বলি -সুইসাইড বা আত্মহত্যা।
এখানে এটা বলা জরুরি যে শুধু শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বল বা আহত হলেই কেউ আত্মহত্যা করে না, তার আত্মহত্যা করার উপায় থাকতে হবে। তার প্রয়োজনীয় অবলম্বন (যেমন, সামাজিক, বন্ধু, পরিবার, সমস্যা সমাধানের জ্ঞান ও উপায়) যা নাকি তাঁকে বিরাট সমস্যার সময় বা ভীষণ মানসিক কষ্টের সময় সাহায্য করতে পারে তার অভাব ঘটে।
বন্যা: হ্যাঁ আমরা তো আত্মহত্যার নোটে প্রায়ই এটা শুনি। আমরা যখন দেখি একজন ছেলে বা মেয়ে আত্মহত্যা করে এক্কেবারে মরিয়া হয়ে, কোন সাংঘাতিক খারাপ ঘটনা ঘটেছে তার জীবনে, তখন আমরা ভাবি যে আর কোন উপায় ছিলনা বলে সে তার নিজের জীবন নিয়েছে। এমন ক্ষেত্রে কি আমরা ধরে নেব যে তার আগে থেকেই -বিষণ্ণতা, বা শারীরক বা হরমোনাল ইম্ব্যালেনস, বা নিউরোট্রান্সমিটারের সমস্যা ছিল বলে সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নাকি তা নাও হতে পারে?
স্বাতী: প্রতিটি মানুষ অন্যন্য! তাই সবার ক্ষেত্রে যে বিষণ্ণতা বা নিউরোট্রান্সমিটারে সমস্যা থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। যে ঘটনাটি তাঁকে আঘাত দিয়েছে, তা তার জন্যে কতটা ভয়াবহ সেটার ওপর নির্ভর করে তিনি কি করবেন। যেমন কেউ সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
বন্যা: আবার আমরা এমন অনেক দেখি যে, খুব বিখ্যাত বা জীবনে সার্থক মানুষ আত্মহত্যা করলেন, সুশান্ত, এন্থনি বোর্ডেন এবং রবিন উইলিয়ামস এর মত মানুষ, যাদের জীবন দেখলে মনে হয় কোন সমস্যাই তো নেই, কেন করলেন তারা?
স্বাতী: আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় হয়ত কিছুই হয়নি, সব ঠিক আছে, সমস্ত অবলম্বনও আছে সেই কবিতার মত,
"অর্থ নয়, র্কীতি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে
আমাদের ক্লান্ত করে।"
মানব মনের রহস্য এখনও অজানা তাই এর ১০০% নিশ্চিত উত্তর নেই এখনো। তবে এ ধরনের মানুষদের হয়ত অবচেতনে কোন দীর্ঘ সমস্যা ছিল বা থাকে। তবে সমস্যা থাকা বা না থাকা বড় ব্যাপার নয়, বরং আমি যে, যেখানে, যেভাবে আছি তাতে কি আমি সন্তুষ্ট? আর এই সন্তুষ্টতা আসে বা নিয়ন্ত্রিত হয় সেরাটোনিন দ্বারা। এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটার/হরমোন, যা নানবিধ কারনে সমস্যা হবার মত পর্যায়ে ওঠানামা করতে পারে, এবং ওষুধ দিয়ে বা ওষুধ ছাড়াও নানবিধ উপায়ে তা সঠিক মাত্রায় রাখা সম্ভব।
বন্যা: যদি কারো আগে থেকে বিষণ্ণতা বা মানসিক, হরমোনাল কোন সমস্যা থেকে থাকে এবং পরে তার জীবনে কোন হতাশাময় বা ভয়ানক ঘটনা ঘটে তাহলে কি আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়ে যায়?
স্বাতী: ঠিক বলেছেন, বেড়ে যায়। ওই যে বলে, দ্যা স্ট্র দ্যাট ব্রোক দ্যা ক্যামলস ব্যাক, অর্থাৎ কিউমিলিটিভ এফেক্ট। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কষ্ট বাড়লেই যে কেউ আত্মঘাতী হবেন, তা ঠিক নয়, ওই যে বলেছি বিভিন্ন অবলম্বন যদি থাকে, মানুষ আত্মহত্যার চিন্তা করেন না, বা করলেও তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
বন্যা: আজকাল আমরা অনেক আত্মহত্যার কথা শুনি! এটা কি আসলেই বেড়েছে নাকি এখন অনলাইন কমিউনিকেশনের যুগে অনেক বেশি জানতে পারছি, আগে জানতাম না? নাকি ধরেন অনেকে বলেন আজকাল নগরায়ন বা নিউক্লিয়ার পরিবার কাঠামোর কারণে কমিউনিটি বা সামাজিক যে বন্ধন, যোগাযোগ, গল্পগুজব, পারস্পরিক সাহায্যের যে কাঠামোতা ছিল তা ভেঙ্গে গেছে ফলে বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা এগুলো বেড়েছে - সে সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন।
স্বাতী: আগের পরিসংখ্যন না জানলে বলা সম্ভব নয় এখন বেড়েছে কিনা। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক জরিপে দেখা গেছে আমেরিকাতে ২০২০ সালে আত্মহত্যার হার ২০১৯ সালের থেকে কমেছে। ২০২৫-এর মধ্যে এই সঙ্ঘ্যাটি আরও ২০% কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা। কোন দেশে যদি আত্মহত্যা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, বা এ সম্বন্ধে বিশেষ স্টিগ্মা থেকে থাকে, তাহলে জরিপের সময় সঠিক পরিসংখ্যন নাও পাওয়া যেতে পারে।
তবে আমাদের অসন্তুষ্টি বাড়ছে নানাবিধ কারনে, সেই অসন্তুষ্টি কষ্ট ও হতাশায় রূপান্তরিত হচ্ছে, কিন্তু সেসব কষ্ট দুর করার উপায় শিখছি না আমরা। ফলে জীবন থেকে পালিয়ে গেলেই আর এসব কষ্ট সহ্য করতে হবে না এই চিন্তা বাড়ছে।সোশ্যাল মিডিয়া এই অসন্তুষ্টি বাড়াবার কারণগুলোর মাঝে একটি। তারমানে এই নয় যে সোশ্যালমিডিয়া খারাপ। ধরুন, আমরা যদি কাউকে দেশলাই-এর বাক্স দিই কিন্তু ব্যাবহার বিধি না শেখাই, কি হবে? সে হয়ত ঘরে আগুণ ধরিয়ে বসবে। সেটা কিন্তু দেশলাই-এর দোষ নয়। ঠিকভাবে শেখালে, সেই দেশলাই দিয়ে রান্না করা আর শীতকালে আগুণ পোহান ইত্যাদি নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়।
আর আপনি যে যৌথ পরিবার নিয়ে বললেন, সেটাও একটা ফ্যাক্টর। আগে যে যৌথ পরিবার ছিল, তাতে যে সমস্যা ছিল না তা নয়, তবে অনেক ভালব্যাপার ছিল। কারো কোন কারনে মন খারাপ হলে বাবা মা-কে বলতে না পারলেও হয়তবা মামা, খালা, চাচা, ফুপু, দাদু, নানু ইত্যাদি কাউকে বলা যেত। বাবা মায়েরা এখন চাকরী, সংসার, বাচ্চাদের যত্ন সব একাই করেন, তাঁরা অনেক সময় হাঁপিয়ে ওঠেন, হয়ত খেয়াল করতে পারেন না তার সন্তানের মানসিক জগতে কোন বদল এসেছে কিনা। সেটা খ্যেয়াল করতে পারলে হয়ত শুরুতেই সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। আর ওই যে যৌথ পরিবারের সহায়তা, সেটা বর্ম বা বাফারিং হিসেবে কাজ করে, ফলে কষ্টকর ঘটনা সেভাবে কষ্ট দেয় না, বা দিলেও তা থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পারস্পারিক সুসম্পর্ক রীতিমত প্রতিষেধক হিসবে কাজ করে।
বন্যা: একটা কথা প্রায়ই শুনি যে, আত্মহত্যা করা আর করার চিন্তা দুটো আলাদা। এমনকি আপনি আত্ম্যহত্যা করার জন্য কতটুকু প্ল্যান করেছেন, কীভাবে করবেন সেটা নিয়ে কতটুকু, কী স্তরে ভেবেছেন... এই ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলবেন? আপনারা কীভাবে এটার রিস্ক এসেস্মেন্ট করেন?
স্বাতীঃ আত্মহত্যা করা আর করার চিন্তা দুটো ভিন্ন। আমরা আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা, আর প্রচেষ্টার মাঝে পার্থক্য করে থাকি অর্থাৎ তার আত্মহত্যার ঝুঁকি কোন পর্যায়ের তা পরিমাপ করি।
আমরা প্রথম ইনটেক করার সময় তার বর্তমান বা অতীতের DTS/DTO আছে কিনা এবং ফ্যামিলি হিস্ট্রি আছে কিনা তা জানতে চাই। সেখানে কেউ যদি বলেন বর্তমানে তার চিন্তা বা পরিকল্পনা আছে তখন সে বিষয়ে আমরা বিশদ জানতে চাই।
এমনকি কেউ যদি বলেন, তার বর্তমান চিন্তা নেই কিন্তু হিস্ট্রি আছে, তবে তার বেঁচে থাকার কি কি কারণ, সমস্যা সমাধানের উপায়, কি এবং কে অবলম্বন আছে ইত্যাদি জেনে অ্যাসেস করি সুইসাইডাল রিস্ক কতখানি। দুটো ক্ষেত্রেই রিস্ক মাইল্ড, মডারেট, না হাই সেটা বিচার করি। তার ওপর নির্ভর করে কি ধরনের ইন্টারভেনশন দেয়া হবে, অর্থাৎ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, সাইক্রায়াটিস্ট বা সাইকলজিস্টের কাছে রেফার করতে হবে, ওয়লেনেস চেক করতে হবে কিনা, ইত্যাদি।
মাইল্ড রিস্ক হলে এবং নিজের বা পরিবারের আত্মহত্যার ইতিহাস না থাকলে, তাঁকে আমরা শেখাই তার নিজস্ব সমস্যা দুর করার উপায়গুলো কিভাবে বাড়ান যায় এবং ব্যাবহার করে আত্মহত্যার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। তার অন্য কোন মানসিক বা পরিবেশগত সমস্যা আছে কিনা এবং থাকলে, কিভাবে সেগুলো রোধ বা দুর করা যায়। অর্থাৎ বোঝার ওপর যেন শাকের আটি না হয়ে দাড়ায়!
এখন ধরুন কোন রুগী বর্তমান বা অতীতে আত্মহত্যার চিন্তা করেননি এবং পরিবারেও এমন কোন ইতিহাস নেই, কিন্তু ইনটেকের সময় যদি বলেন যে তিনি ট্রাপড অথবা হোপলেস ফিল করছেন, তার এমোশনাল কষ্ট ইন্টলারেবল, যদি মুড শিফট হয় অর্থাৎ খুব হ্যাপি বা স্যাড হন, তিনি যদি রিভেঞ্জ নেবার চিন্তা করছেন, অতিরিক্ত গিল্ট বা শেম ফিল করছেন তাহলেও প্রতিটি বিষয় আমরা বিশদভাবে জানার চেষ্টা করি যে এর কোনটিই আত্মহত্যার দিকে যেতে পারে কিনা।
আমি খুব সংক্ষেপে বললাম, কিন্তু অ্যাসেস্মেন্টের ক্ষেত্রে আরও নানাবিধ বিষয় আমরা বিবেচনা করে থাকি।
বন্যা: আচ্ছা স্বাতী আপনি তো বললেন কি কি ক্রাইটেরিয়া অ্যাসেস করেন, আমরা বিশদ লিস্টও দিলাম দর্শক শ্রোতাদের জন্যে; কিন্তু আমাদের মত সাধারণ মানুষ কি করে বুঝবেন বা জানবেন পরিচিতরা কেউ সুইসাইডের চিন্তা করছেন কিনা?
স্বাতী: খুব গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন করেছেন। যারা শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের পেশায় জড়িত নন, তাদের জন্যে বলছি, এখানে যে পয়েন্টগুলো বললাম সেগুলো যদি আপনি আপনার পরিচিত কারো মাঝে দেখেন, তাহলে ডায়াগনোজ করার চিন্তা করবেন না, কিন্তু অ্যালার্মড হবেন। এবং একটু মনযোগ দিয়ে, কটাক্ষ্য না করে, আরও জানার চেষ্টা করবেন তিনি কি আত্মহত্যার চিন্তা করছেন কিনা নাকি উপায়ন্তর না পেয়ে সাহায্যের খোঁজে এ কথা বলছেন, একে আমরা বলি ক্রাই ফর হেল্প। এ সময় তাঁকে সাহায্য করা জরুরি।
আমাদের কালচারে কথায় কথায় মরে যাব, মরে যা এসব ব্যাবহার করা হয়, যার ফলে আত্মহত্যার চিন্তাটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে অনেক সময় সমস্যা হয়। ওই যে বাঘ আসে বাঘ আসে বারবার বলে সেই বালকটি যেমন ভুল করেছিল, সত্যি বাঘ আসলেও সবাই ভেবেছিল এটা ওর কথার কথা, তেমনি আমারাও কিছু হলেই মরে যাব বলে অন্যদের বিভ্রান্ত করি।
বন্যা: এটা আসলে সংস্কৃতিগতভাবে আমাদের মধ্যে আছে, কথায় কথায় এগুলো বলা। একটা খুব ভালকথা বলেছেন, যে ডায়াগনোজ করার চিন্তা না, কিন্তু অ্যালার্মড হবেন। কিন্তু কখন আমার মত সাধারণ কেউ বুঝতে পারবো যে কাউকে জানানো দরকার, বা মানে ইন্টারভিন করা দরকার এবং সেটা কী ধরণের ইন্টারভেনশন?
স্বাতী: ওই যে বললাম মনযোগ দিতে, অর্থাৎ মনযোগ দিয়ে তার কথা এবং ননভারবাল জেস্টারগুলো নোটিস করুন, আপনার গাঁট ফিলিংস কি বলে, তার ব্যাবহার এবং কথা কি স্বাভাবিক রাগ দুঃখের প্রকাশ নাকি তারচে' গুরুতর মনে হচ্ছে? তেমন বুঝলে, অবশ্যই তার কাছের কেয়ারিং মানুষদের জানান, যারা তাঁকে জাজ করবে না বরং সাহায্য করবে।
বন্যা: আমরা আত্মহত্যা নিয়ে এই লাইভ অনুষ্ঠান করার যে পোস্ট দিয়েছি সোশ্যাল মিডিয়ায় সেখানেও কেউ কেউ লিখেছেন যে তারা প্রায়ই আত্মহত্যার চিন্তা করেন,বা ধরুন আমার কোন বন্ধু খুব হতাশ হয়ে বললো এই জীবন আর ভালো লাগছেনা, মরে গেলেই ভাল - তাহলে কি আমার তখন চিন্তিত হয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, নাকি ধরুন সে প্ল্যান করছে কীভাবে আত্মহত্যা করবে সেই পর্যন্ত ব্যতিবস্ত না হলেও হবে?
স্বাতী: আরেকটি চমৎকার প্রশ্ন করেছেন। এই যে বললেন আমার বন্ধু খুব হতাশ হয়ে বল্ল মরে গেলেই ভাল হয়। আমদের উচিত সাথে সাথে গুরুত্ব দেয়া। গুরুত্ব দেব হতাশাটার প্রতি। হতাশার আগে আপনি ‘খুব’ শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে মানুষের হতাশা যেন ‘খুব’ পর্যায়ে না পৌছায়। মরে যাবার ইচ্ছের পেছেন যে মূল কারণটি, সেটার প্রতি যদি নজর দিই এবং সেটাকে দুর করতে পারি তাহলে আর পরবর্তি সমস্যাটার অস্তিত্ব থাকে না।
বন্যা: প্রিয় ক্যামেলিয়া গ্রুপ থেকে ক্যামেলিয়া জানতে চেয়েছেন, অনেক সময়েই শোনা যায় যে, টিনেজার, কিশোর-কিশোরীদেরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, বা শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা বেশি করছে - সেটা কি সত্যি? হলে এর প্রতিকার কি ?
স্বাতী: দুটো প্রশ্নের উত্তর একসাথেই দিচ্ছি। আপনি যদি চিন্তা করেন আমরা কেন অনেক সিদ্ধান্ত নিই বা নিই না, কি আমাদের ব্রেনে এসব সিন্ধান্ত নেবার পেছনে কাজ করে তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তরটি পেয়ে যাই আমরা। সিন্ধান্ত নেবার জন্যে ব্রেনে যে ফ্রন্টাল লোব থাকে, তা পুরোপুরি গঠিত হয় না ২৫ বছরের আগে। এখন ভেবে দেখুন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের বয়স কত? তাই কিশোর কিশোরীরা বা অপরিপক্ব ব্রেনের মানুষ আত্মহত্যার মত মারাত্নক এবং ভুল সিদ্ধান্ত বেশি নিতে পারেন। তার মানে এই নয় যে ২৫-এর উর্দ্ধে হলেই তার ফ্রন্টাল লোব পুরোপুরি এবং সুস্থ্যভাবে গড়ে উঠেছে। গর্ভজাত অবস্থা থেকে, বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপ, পারিপার্শিক অবস্থা, বহু কিছু এর পিছনে কাজ করে।
বন্যা: আত্মহত্যার চিন্তা এলে প্রাথমিক অবস্থায় কি কি করা উচিৎ ?
স্বাতী: প্রথমেই আপনার কাছের কাউকে বলা উচিত যিনি আপনাকে যেকোন প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পারবেন সে মুহুর্তে। যেমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, পুলিশ ডাকা, অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, পাশে থাকা, মন দিয়ে আপনার কথা শোনা, থেরাপিস্টের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দেয়া অর্থাৎ এসব নির্ভর করবে আপনার রিস্ক কোন মাত্রার তা বুঝে।
বন্যা: ড্রাগ এর সাথে আত্মহত্যার কি কোন সম্পর্ক আছে? থাকলে ড্রাগ কীভাবে ছাড়া সম্ভব ?
স্বাতী: ড্রাগ বলতে যদি আমরা ডাক্তারের প্রেস্ক্রাইবড ওষুধ না বোঝাই, তাহলে যেকোন ড্রাগ ব্যাবহার এবং অপব্যাবহারের ফলাফল খারাপ হবেই, বিশেষ করে তা যদি দীর্ঘদিন বা অল্পবয়সে শুরু করা হয়। ড্রাগস সুস্থ্য ফ্রন্টাল লোব গঠনে অন্তরায় হয়। কেউ হয়ত বলবেন, আমি অল্পবয়সে কত্ত ড্রাগস ইউজ করেছি, কিন্তু তবুও ভাল রেজাল্ট করেছি, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি ইত্যাদি। প্রথমত, এক্সেপশন্স আর নট একজাম্পলস। আর সবচে বড় কথা হল, ড্রাগস না ব্যাবহার করলে আপনার যে আরও কত পোটেনশিয়াল/সম্ভাবনা ছিল তা আপনি জানতেই পারেন নি।
কিভাবে ড্রাগ ছাড়া সম্ভব তা এককথায় বা এই স্বল্প সময়ে বলা সম্ভব নয়। ড্রাগ আসক্তি কোন পর্যায়ের তা বুঝে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করা সম্ভব। তবে যারা ড্রাগ শুরু করেছেন বা ইতিমধ্যে আসক্তিতে জড়িয়ে গেছেন, তাদের প্রাইমারি ফিজিশিয়ানের সাথে কথা বলে, সাইকলজিস্ট বা সাইক্রিয়াটিস্টের রেফারেল নেয়া জরুরি।
বন্যা: আচ্ছা এবার তাহলে আমাদেরকে বলুন, কোন কোন কমন ফ্যাক্টরস আছে যা সুসাইডের চিন্তা বা রিস্ক বাড়িয়ে দেয়?
স্বাতীঃ বন্যা, খুব ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন করেছেন। ডিপ্রেশন বা মেজর ডিপ্রেশন হচ্ছে অন্যতম সুসাইডাল টেন্ডেন্সির ক্ষেত্রে। PTSD আরেকটি বড় সমস্যা। এছাড়াও যদি ফ্যামিলিতে ভায়োলেন্স অথবা সুইসাইডের হিস্ট্রি থাকে; চাইল্ডহুড অ্যাবিউস, নেগ্লেক্ট, বা ট্রমা থেকে থাকে; তাদের নিজেদের মেন্টাল হেলথ ইস্যু থেকে থাকে; তিনি যদি এল জি বি টি কিউ আই এ + এর কেউ হন কিন্তু তার কোন ফ্যামিলি বা সাপোর্ট সিস্টেম না থাকে; যদি ড্রাগ অথবা অ্যালকোহলের ইনফ্লুয়েন্সে থাকেন; সেক্সুয়াল অ্যাবিউস হিস্ট্রি থাকে এবং বিশেষ করে তার যদি সাপোর্ট সিস্টেম না থাকে, বা তিনি আশেম্মড ফিল করেন।
বন্যা: হ্যাঁ, এখানে স্ক্রিনে দেখতে পারবেন লিস্টটি, আমাদের ওয়েবসাইটেও থাকবে। আচ্ছা, মানসিক সমস্যার মত শারীরিক সমস্যাও কি আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে?
স্বাতী: আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টেটিভ মেডিসিনের রিসার্চ অনুযায়ী কিছু শারীরিক অসুস্থতা আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়ঃ অ্যাজমা, কোন ক্রনিক এবং অসহ্য পেইন, ব্রেইন ইঞ্জ্যুরি, ক্যান্সার, কঞ্জেস্টিভ হার্ট ফেইলিয়র,ডায়বিটিস, এপিলেপ্সি, এইচ আই ভি/এইডস, হার্ট ডিজিজ, হাই ব্লাড প্রেশার, মাইগ্রেইন,পারকিন্সন্স ডিজিজ ইত্যাদি।
এখন আপনার হয়ত মনে হবে কি করে মাইগ্রেইন পেইন বা হাই ব্লাড প্রেশার সুইসাইডাল রিস্কের সাথে জড়িত হতে পারে। আপনার চিন্তা করতে হবে যিনি সাফার করছেন তার কি পরিমাণ মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট হচ্ছে, তার সাপোর্ট সিস্টেম আছে কিনা, তার অন্যান্য মানসিক কোন সাফারিংস আছে কিনা যেমন অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশন, এবং সর্বোপরি তার হোপ কোনভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে কিনা। রিসার্চ দেখায় যে যাদের ক্রনিক পেইন থাকে তাদের ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি হবার সম্ভাবনা ৪ গুনবেশি যাদের এ ধরনের পেইন থাকে না তাদের থেকে।
বন্যা: আচ্ছা আমরা জানলাম রিস্ক ফ্যাক্টরসগুলো। এবার কি বলবেন যে কিভাবে এই রিস্ক কমান যায় বা প্রিভেন্ট করা যায় বা এর কোন চিকিৎসা আছে কিনা?
স্বাতী: অবশ্যই! প্রথমত যারা এই প্রোগ্রামটি দেখছেন, তাদের সবাইকে বলছি, এতক্ষণ যে সিম্পটমস বললাম, আপনি যদি তার কোনটি কারো মাঝে লক্ষ করে থাকেন, প্লীজ তাঁকে সাহায্য করুন।আপনার হেল্প প্রিভেন্ট করবে সুসাইডাল রিস্ক। আপনি কারো জীবন বাঁচাতে পারেন!
১। জিজ্ঞেস করুন তাঁরা কি সুসাইড করার চিন্তা করছেন কিনা। গবেষণা থেকে দেখেছি যে জিজ্ঞেস করায় রিস্ক বাড়ে না।
২। তাদের নাগালের মাঝে কোন ওয়েপন থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন, যেমন গান, নাইভস, ইত্যাদি।
৩। তাদের পাশে থাকুন, তাদের কথা শুনুন ননজাজমেন্টালভাবে।
৪। তাদেরকে বলুন সাহায্য নিতে প্রপার জায়গা থেকে, যেমন বন্ধু, ফ্যামিলি, স্পিরিটুয়াল মেন্টর, এবং অবশ্যই প্রাইমারি ডক্টর এবং থেরাপিস্ট ইত্যাদি।
৫। ক্রাইসিস দুর হবার পরও তাদের খোঁজ নিন, যেন রিকারেন্স রোধ করতে পারে।
৬। অবশ্যই এমারজেন্সি ফোন নম্বর তাদের নাগালের মধ্যে রাখবেন।
আর ট্রিটমেন্টের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, মনে রাখবেন আত্মহত্যার চিন্তা কোন না কোন আন্ডারলাইং প্রব্লেম থেকে শুরু হয়। মেডিকেশন এবং থেরাপি এর সবচে বড় ট্রিটমেন্ট। থেরাপির মাঝে সি বি টি, ডি বি টি, সি এ এম এস (কোলাবরেটিভ অ্যাসেস্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব সুইসাদিয়ালিটি) টেকনিক হেল্প করে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রিটমেন্ট নেয়া জরুরি। এবং ট্রিটমেন্ট সঠিকভাবে কন্টিন্যু করা জরুরি।
বন্যাঃ আর যারা সুইসাডের চেষ্টা করেছেন, তাঁরা কি কিছু করতে পারেন যেন পরবর্তিতে এ ধরনের চিন্তা না আসে বা পদক্ষেপ না নেন?
স্বাতীঃ হ্যাঁ, তাদের সেফটি প্ল্যান থাকা দরকার। প্রথমত তাদেরকে জানতে হবে কি কি বিষয় তাদের আত্মহত্যার চিন্তা বাড়ায়। এরপর সে বিষয়গুলো থেকে দুরে থাকতে হবে, সেগুলোর প্রতিকার করতে হবে। আমি যদি জানি জানালা খোলা থাকলে ঘরে ধুলো বা বৃষ্টির পানি ঢোকে থালে আমি নিশ্চয়ই জানালা বন্ধ রাখব, তাইনা? এরপর নিজের সেই কোপিং স্কিল্গুলো জানতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে যেগুলো অন্যের ওপর নির্ভরশিল নয়। যেমন লঙ এক্সেলেশন ব্রিদ্রিং। মেডিটেশন। নিজের ফিলিংসগুলো সম্বন্ধে জানুন। আঙ্কম্ফর্টেবল ফিলিংসগুলোকে উড়িয়ে না দিয়ে প্রতিকার করুন। এছাড়াও সামাজিকতা বজায় রাখুন, বেড়ান, বা এমন কাজে এঙ্গেজ থাকুন যা আপনার মনকে দুশ্চিন্তামুক্ত করে। পরিবারের সেই সদস্যদের সাথে কথা বলুন যারা আপনার ক্রাইসিসে পাশে দাঁড়াতে পারে। এবং অবশ্যই সুইসাইড হটলাইনের নম্বর হাতের কাছে রাখুন। মনে রাখবেন, রিকভারি একটি প্রসেস, এটা সুইচ অন্য অফের মত নওয়।
বন্যা: অনেক ধন্যবাদ, স্বাতী আমাদেরকে আজ এতটা সময় দেওয়ার জন্য। এর পরের কয়েকটি ভিডিওতে আপনার সাথে ডিপ্রেশান এবং আজকের সমাজে ড্রাগের প্রকোপ এবং ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইবো।
স্বাতীঃ ধন্যবাদ আপনাকেও!