বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন, আমাদের জানা সবচাইতে বড় ধূমকেতু

.

নিবন্ধ

Astronomy | জ্যোতির্বিজ্ঞান

বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন, আমাদের জানা সবচাইতে বড় ধূমকেতু

২০১৪ সালে সূর্য থেকে প্রায় ২৭০ কোটি মাইল দূরে সূর্যের ম্লান আলোয় ঝিলিক দিয়ে উঠলো কিছু একটা। চিলির আতাকামা মরুভূমির ১৩-ফুট চওড়া “ব্লাঙ্কো” ডার্ক এনার্জি টেলিস্কোপের ক্যামেরায় বন্দী হয়ে গেল সেই ঝিলিক। তার প্রায় সাত বছর পরে, ২০২১ সালে পিএইচডির ছাত্র পেড্রো বার্নারডিনেলি এবং তার প্রফেসর ও পিএইচডি সুপারভাইজার গ্যারি বার্নস্টেইন সেই ছবি থেকে অনুসন্ধান করতে করতে বের করলেন, এটা একটা নতুন ধূমকেতু, এবং আমাদের জানা সবচাইতে বড় ধূমকেতু।

 

বর্তমানে ধারনা করা হচ্ছে, এই ধূমকেতু প্রায় ৯৩ মাইল/১৫০ কিলোমিটার চওড়া। ২০৩১ সালের জানুয়ারির ২১ তারিখ এটা পৃথিবীর ও সূর্যের সবচাইতে কাছ দিয়ে যাবে, যদিও এখানে “কাছে” সম্পুর্ন আপেক্ষিক—তখনও সেটা সূর্য থেকে প্রায় ১০০ কোটি মাইল দূরে থাকবে। তখন সেটাকে সাধারন ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাবে। তবে জ্যোতির্মন্দিরের বড় টেলিস্কোপে এটা ২০৪০ সাল বা তার কয়েক বছর পর পর্যন্ত দেখা যাবে।

 

বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন-এর জম্ন অর্ট ক্লাউডে, সূর্য থেকে ২০০০ থেকে এক লক্ষ সৌর একক দূরত্বে। (সৌর একক = সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব)। যখন এটার ছবি তোলা হয়েছে, তখন সেটা ছিল ২৯ সৌর একক দূরত্বে। এত দূর থেকে সাধারণত ধূমকেতু প্রথম বার চেনা যায় না, তবে একবার পর্যবেক্ষন করে তার কক্ষপথ বের করলে হিসাব করে বলে দেয়া যায়, পরে আবার কবে ফিরে আসবে ধূমকেতুটা।  যেহেতু বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইনকে ২০২১এ দেখা গিয়েছে, এবং অন্তত ২০৪০ পর্যন্ত এটাকে পৃথিবীর টেলিস্কোপে দেখা যাবে, তার মানে প্রায় ২০ বছর ধরে এটাকে পর্যবেক্ষন ও গবেষণা করা যাবে।

 

২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত “ব্লাঙ্কো” টেলিস্কোপ দক্ষিণ আকাশের প্রায় ৮০ হাজার ছবি তুলেছিল। সেই ছবিগুলি এক একটা এতই বড় যে সেগুলিকে পুর্ণ প্রাঞ্জলতায় (রেজোলিউশনে) দেখতে ২৭৫টা টিভি লাগে। কম্পিউটারের মনিটরে তার মধ্যে একটা পিনের মত আলোকে খুঁজে বের করা কঠিন। পিএইচডির থিসিসের জন্য বার্নারডিনেলি তাই করছিলেন—ব্লাঙ্কোর তোলা ছবিতে নতুন খগোল বা মহাজাগতিক বস্তু খুঁজছিলেন। বার্নারডিনেলি একটা প্রোগ্রাম লিখেছিলেন, যা বিভিন্ন ছবিতে একই অবস্থানে নেই (অর্থাৎ চলমান) বস্তু খুঁজে বের করছিল। ছয় মাস ধরে ২০০টা কম্পিউটারে ছবি বিশ্লেষণ করে তার প্রোগ্রাম ৮১৭টা নতুন খগোল বস্তু খুঁজে পেয়েছিল, যেগুলি আগে চেনা কোন কিছুর সাথে মেলে না। তারপর বার্নারডিনেলি ও বার্নস্টেইন আবার সেগুলিকে নিজেরা দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে প্রোগ্রাম ভুল করে নাই। সেই ৮১৭ টা বস্তুর মধ্যে একটাকে দেখা গেল প্রায় ১০০ মাইল চওড়া, কিন্তু তার কক্ষপথ এতই অদ্ভুত যে বোঝা গেল, এর জন্ম হাজার হাজার কোটি মাইল দূরে।

 

বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন তাদের তথ্য প্রমাণ কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটসের মাইনর প্ল্যানেট সেন্টারে পাঠালেন। এই প্রতিষ্ঠান সব ধূমকেতু ও গ্রহাণুর কক্ষপথের হিসাবরক্ষক। কিছুদিন পরে, ২০২১এর জুনের ১৯ তারিখ তারা নিশ্চিন্ত করল, এটা নতুন একটা খগোল বস্তু। পাঁচ দিন পরে তারা জানালো, এটা একটা ধূমকেতু, এবং আবিষ্কারকদের নামে এটার নামকরণ করা হলো।

--

অর্ট ক্লাউড় আছে আমরা জানি, তবে সেটা সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। অর্ট ক্লাউড আর ধূমকেতু নিয়ে আরো জানতে চাইলে থিংক বাংলার ভিডিও প্রথম কমেন্টে।

লেখাঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও ইনভার্স অবলম্বনে। বিস্তারিত জানার ইচ্ছা থাকলে পড়ার অনুরোধ করব

https://www.nationalgeographic.com/science/article/one-of-the-largest-comets-ever-seen-is-headed-our-way

https://www.inverse.com/science/look-a-massive-comet (অ্যানিমেশন সহ)

বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন-এর পেপার https://arxiv.org/pdf/2109.09852.pdf

ছবিঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles