বদ্বীপ এর শ্রেণীবিভাগ । বাংলা
বদ্বীপ(Delta)
বদ্বীপ : মোহানার কাছে নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যায়। তাই এখানে নদী দ্বারা পরিবাহিত প্রায় সমস্ত পদার্থ নদীবক্ষে সঞ্চিত হতে থাকে। এইভাবে সঞ্চয়ের ফলে নদীবক্ষে একটি মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’ বা গ্রিক অক্ষর ‘∆’ডেল্টার মত দ্বীপের সৃষ্টি হয়। একে বদ্বীপ বলে।
বৈশিষ্ট্য :
•নদীর সঙ্গে সমুদ্র তরঙ্গ বাহিত পলি নিম্নাংশে ক্রমাগত ভরাট হয়ে গঠন করে।
•মুল নদী থেকে যেখানে শাখা নদী বিভক্ত হয় সেটাই বদ্বীপের শীর্ষবিন্দু।
উদাহরণ : গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের মিলিত বাংলা বা বঙ্গীয় বদ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।
∆ নদী মোহনায় ব-দ্বীপ গঠনের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা : পৃথিবীর অধিকাংশ নদীর মোহানার বদ্বীপ গড়ে ওঠে। তবে সব মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠে না। নদীর মোহানায় বদ্বীপ গঠনের অনুকূল অবস্থাগুলি হলো-
1. অধিক পরিবাহিত পদার্থ : নদী যদি তার গতিপথ দিয়ে অধিক পরিমাণে পদার্থ বহন করে তবে তা সহজেই মোহানায় সঞ্চয়ের দ্বারা বদ্বীপ গড়ে তোলে। যেমন—গা, গোদাবরী, ইয়াসি | প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ এই কারণে গঠিত হয়েছে।
2. কম স্নোতবেগ: নদী মোহানায় নদীর স্রোতবেগ কম হলে সহজেই গড়ে ওঠে। কেন-না, সেখানে পদার্থের অবক্ষেপণ হার বেশি। যেমন বঙ্গোপসাগরে গঙ্গার বদ্বীপ, মেক্সিকো উপসাগরে মিসিসিপির বদ্বীপ।
3. সুদীর্ঘ ও দীর্ঘ নিম্নপ্রবাহ : নদীর গতিপথ সুদীর্ঘ হলে পরিবাহিত পদার্থ বেশি হয়। নিম্নপ্রবাহ দীর্ঘ হলে স্রোত কম হয়। ফলে মোহানায় পলি দ্রুত থিতিয়ে পড়ে ও বদ্বীপ সহজে গড়ে ওঠে। যেমন–ভূমধ্যসাগরে নীলনদের বদ্বীপ।
4. কম জোয়ারডাটার প্রকোপ: নদীতে জোয়ারভাটার প্রকোপ কম হলে সহজে পলি, বালি, কাদা অবক্ষেপিত হয়ে বদ্বীপ গঠিত হয়। যেমন— ভলগা ও হোয়াংহো নদীর বদ্বীপ।
5. স্থলবেষ্টিত সমুদ্রের নদী মোহানা : যেসব সমুদ্র স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত সেখানে উন্মুক্ত সমুদ্রের টান থাকে না। ফলে সহজেই পদার্থের অবক্ষেপণ ঘটে ও বদ্বীপ গঠিত হয়। যেমন— কাস্পিয়ান সাগরের ভল্গা নদীর দ্বীপ।
6. নদীস্রোতের বিপরীতে বায়ুপ্রবাহ: নদীর স্রোতবেগ সমুদ্রের দিকে থাকে। সমুদ্র থেকে আগত বায়ুপ্রবাহ যদি নদীর স্রোতবেগের বিপরীতে হয় তবে মোহানাতে পদার্থ সঞ্চয়ের হার বেশি হয় ও বদ্বীপ গঠন সহজ হয়। যেমন ইয়াংসি, হোয়াংহো, মেকং নদীর বদ্বীপ এভাবে গঠিত হয়েছে।
∆ বদ্বীপ এর শ্রেণীবিভাগ(classification of delta)
অবস্থান ,আকৃতি ও গঠনের প্রকৃতি অনুযায়ী বদ্বীপ কে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ।
[A]অবস্থান অনুসারে :
a)নদী বদ্বীপ : উপনদী যেখানে মূল নদীর সঙ্গে মিলিত হয় সেখানে উপনদী বাহিত কাকড়, বালি ,কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার ভূভাগ গড়ে তোলে, একে বলা হয় নদী বদ্বীপ।
b)হ্রদ বদ্বীপ : বিশাল হ্রদের স্থির জলরাশির উপর কোন নদী এসে পড়লে সেখানে সহজেই বদ্বীপ গড়ে ওঠে এই বদ্বীপ হ্রদ-বদ্বীপ নামে পরিচিত ।
c)সমুদ্র বদ্বীপ : সমুদ্রে পতিত নদীর মোহনায় পলিমাটি জমা হয় যে বদ্বীপ ভূমি গঠিত হয় ,তাকে সমুদ্র বলে।যেমন -গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ।
[B]আকৃতি অনুসারে :
a)ধনুকাকৃতি ব-দ্বীপ : ল্যাটিন Arcus শব্দের বাংলা অর্থ ধনুক। যেসব ব-দ্বীপ সমুদ্রের দিকে ধনুকের মত বেঁকে অবস্থান করে তাদের বলা হয় ধনুকাকৃতি ব-দ্বীপ।নীলনদ ,গঙ্গা- ব্রহ্মপুত্র, হোয়াংহো নদীর বদ্বীপ এই জাতীয় ব-দ্বীপের নিদর্শন।
b)পক্ষী- পাদ বদ্বীপ : যেসব বদ্বীপ এর আকৃতি পাখির আঙ্গুলের মত, তাদের বলা হয় পক্ষী-পাদ বদ্বীপ।আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ ও ভারতের কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
c)তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ : অনেক সময় বদ্বীপ করাতের দাঁতের মতো দেখতে হয়। এরূপ বদ্ধীপকে তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ বলে। লাতিন শব্দ ‘কাসপেট'-এর অর্থ তীক্ষ্ণ'। স্পেনের এব্রো ও ইটালির তাইবার নদীতে এরুপ বদ্বীপ দেখা যায়।
[C]গঠন অনুসারে :
a)গঠনমূলক বদ্বীপ : সমুদ্র তরঙ্গ এবং জোয়ার ভাটার প্রভাব ব্যতীত শুধুমাত্র বিপুল পরিমাণ নদীবাহিত ক্ষয়জাত ও পদার্থসমূহ অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে যে সব ব-দ্বীপ গঠিত হয় তাকে গঠনমূলক বদ্বীপ বলে।যেমন -নীলনদের বদ্বীপ।
b)ধ্বংসাত্মক বদ্বীপ : জোয়ার ভাটা ও সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতের যেসব বদ্বীপ আকৃতি ও আয়তন অনবরত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে ,তাদের বলা হয় ধ্বংসাত্মক বদ্বীপ। যেমন- নাইজার নদীর বদ্বীপ।
উপরিক্ত বিভিন্ন প্রকার বদ্বীপ ছাড়াও বদ্বীপ গঠনের সময় এবং পলির বয়স অনুসারে বদ্বীপ কে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা - মৃতপ্রায় বদ্বীপ, পরিণত বদ্বীপ ও সক্রিয় বদ্বীপ।
মূল লেখা
https://geographynotebook.blogspot.com/2021/06/delta-classification-of-delta.html