Astronomy | জ্যোতির্বিজ্ঞান
গ্যালাক্সি কী? মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সঙ্গে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সংঘর্ষ
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সঙ্গে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সংঘর্ষ
আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে আমাদের সৌরজগৎ আকাশগঙ্গা (Milky way) নামক এক ছায়াপথে অবস্থান করছে। এই আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রে রয়েছে এক বিশাল কৃষ্ণগহ্বর (Super Massive Blackhole) যাকে কেন্দ্র করে সূর্য পুরো সৌরজগৎকে নিয়ে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। শুধু আমাদের এই সূর্যই নয়, মহাবিশ্বের প্রতিটি সূর্য যাদের আমরা তারা বা নক্ষত্র (Star) বলে চিনি, তারা কোন না কোন ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বরকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। আকাশগঙ্গা ছায়াপথে ১০০-৪০০ বিলিয়ন তারা রয়েছে। আকাশগঙ্গাকে পৃথিবী থেকে রাতের বেলা আলোকদূষণ মুক্ত আকাশে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিস্তৃত হালকা সাদা মেঘের মত দেখায়।
আমাদের এই আকাশগঙ্গা ছায়াপথের মতো মহাবিশ্বে আনুমানিক আরও ১২৫ বিলিয়ন এমন ছায়াপথ আছে। প্রতিটা ছায়াপথের কেন্দ্রেই কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে, যাদের কেন্দ্র করে অসংখ্যা নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করে চলেছে। আর ধারণা করা হয় এই ছায়াপথগুলো এক অদৃশ্য বস্তুর (Dark Matter) প্রভাবে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। হাবল টেলিস্কোপে এই ব্যাপারটি প্রথম ধরা পড়ে ১৯২৫ সালে। সেখান থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় মহাবিশ্ব ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। তবে সব ছায়াপথগুলো কিন্তু দূরে সরে যাচ্ছে না, কিছু কিছু ছায়াপথের কিন্তু একে অপরের দিকে ছুটে আসছে, এবং সংঘর্ষও হচ্ছে। ছায়াপথগুলোর ভিতর এই ছুটে আসা এবং সংঘর্ষ হবার কারণ হচ্ছে মহাকর্ষীয় শক্তি (Gravitational Force)। ছায়াপথগুলোর ভিতর যদি অদৃশ্য শক্তির (Dark Energy) থেকে মহাকর্ষীয় শক্তি বেশি থাকে তাহলে ছায়াপথগুলো একে অন্যের দিকে ছুটে আসে এবং সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিরও একদিন সংঘর্ষ হবে আমাদের প্রতিবেশি এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সাথে। এন্ড্রোমিডা (Andromeda) গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দিকে প্রতি সেকেন্ডে ১১০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে। যদিও এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ট্রান্সভার্স ভেলোসিটি সঠিকভাবে নিরুপণ করতে না পারার কারণে এন্ড্রোমিডার সাথে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হবে নাকি পাশ কেটে চলে যাবে তা নিয়ে বহু বছর ধরেই সংশয় ছিলো। কিন্তু ২০১২ সালে অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর পর মিল্কিওয়ে এবং এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ভিতর সংঘর্ষ হবে। আর এই সংঘর্ষ চলবে আরও ৩ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত।
এই সংঘর্ষ কিন্তু অন্য সংঘর্ষের মতো আকস্মিকভাবে হবে না। প্রথমে এন্ড্রোমিডা এবং মিল্কিওয়ে একে অন্যকে কেন্দ্র করে চক্কর দিবে, এবং আস্তে আস্তে ব্যাকহোল দুইটি একিভূত হতে থাকবে। একসময় দুইটি ব্লাকহোলই একটা একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে দৈত্যাকার ব্লাকহোলে পরিণত হবে এবং মিল্কোমিডা নামে নতুন একটা ছায়াপথ জন্ম নিবে। এই পুরো মহাজাগতিক ঘটনার আশেপাশে থাকবে ত্রিয়ানগুলাম নামক বামন ছায়াপথ (Triangulum Galaxy) এবং ভবিষ্যতে ধারণা করা যায় এই ছায়াপথটাও মিল্কোমিডার সাথে একিভূত হয়ে যাবে।
এই সংঘর্ষের শুরুতে ১২ শতাংশ সম্ভাবনা আছে আমাদের সৌরজগৎ, ছায়াপথের ডিস্ক (যেখানে হাইড্রোজেন গ্যাস, নক্ষত্রের উপস্থিতি থাকে) থেকে বেরিয়ে পড়বে। তবে এটা সৌরজগতের সিস্টেমের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবে নক্ষত্রগুলোর ভিতর পর্যাপ্ত জায়গা থাকার কারণে এই সংঘর্ষে নক্ষত্রগুলোর সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা একদমই কম। ব্লাকহোলদুইটি একিভূত হবার পর ১০০ মিলিয়ন সুপারনোভার বিস্ফোরণের সমান হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হবে। এগুলো আকাশকে অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় দেখাবে। এই গ্যাসগুলো থেকে পরে নতুন নতুন নক্ষত্রের জন্ম হবে।
তবে এই মহাজাগতিক ঘটনা আমাদের দেখতে পাবার সম্ভাবনা একদমই কম। কারণ ততদিনে সূর্য বিশাল এক লাল দানবে পরিণত হবে এবং পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলবে।
তথ্যসূত্রঃ
১/ https://www.youtube.com/watch?v=_P1xKh_kZFU&t=229s
২/ https://www.nature.com/articles/nature.2012.10765