আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসের জন্য দায়ী?
পিরামিড নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও মিশরের পিরামিড কারা বানিয়েছিল?
প্রচলিত কাহিনী অনুসারে ক্লিওপেট্রার আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি গবেষকগণ একটি পর্যক্রমিক ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে মিশরীয় সভ্যতা ধ্বংসের বর্ণনা দিচ্ছেন। এর ঘটনাগুলোর সূত্রপাত হয় আগ্নেয়গিরির আগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে, যা হতে বিধ্বংসী জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয় এবং এর পরিণতি হয় সামাজিক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে।
সঞ্চিত বরফের কোরের প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করে ইতিহাসবিদগণ আগ্নেয়গিরির আগ্নুৎপাতের আলামত খুঁজে পেয়েছেন যার মাধ্যমে একটি প্রলয়ঙ্কারি বন্যার সৃষ্টি হয়। নীলনদ হলো মিশরীয় সভ্যতার প্রাণ প্রবাহ। এই বন্যায় নীলনদবর্তী অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন সূচিত হয় যার ফলে নানাবিধ ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অবনমনের সৃষ্টি হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক অস্থিরতা প্রায়শঃই একে অপরের হাত ধরে চলে যার ফলে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নাটকীয় পট পরিবর্তন হয় এবং এর ফলে পুরো সভ্যতা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যেতে পারে। কাজেই এই ধরনের ব্যাখ্যা নতুন কিছু নয়, তবে কোনো হাইপোথিসিস দেওয়ার আগে তার জন্য শক্ত ভিত্তি থাকতে হয়।
“এটাই জলবায়ু রেকর্ডের সৌন্দর্য।” বলছিলেন, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোসেফ ম্যানিং। তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো আপনি মিশরীয় সভ্যতার ক্রমপরিবর্তিত সমাজের খোঁজ পাচ্ছেন, কেবল কিছু লেখা হতে ধারাবাহিক স্থির বর্ণনা নয়।”
এই গবেষণার জন্য গবেষকগণ ইতিপূর্বে সংঘটিত আগ্নেগিরির ঐতিহাসিক রেকর্ড সংস্লিষ্ট অন্য একটি গবেষণার ২৫০০ বছরের ইতিহাসের তথ্যের উপর নির্ভর করেছেন।
আগ্নেগিরির সমস্যা তৈরি হওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের উঠানেই যে লাভা নিক্ষিপ্ত হতে হবে তা নয়। বরং অগ্নুৎপাতের এলাকার চেয়ে অনেক দূরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। আগ্নুৎপাতের মাধ্যমে নির্গত ধূলো, ছাই এগুলো এরোসল হিসেবে বায়ুমন্ডলে ভেসে থেকে অনেক বিস্তৃত এলাকায় সূর্যালোক প্রবেশে বাধা দিয়ে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
মিশরের ঋতুগত আবহাওয়ার উপর এধরনের আগ্নুৎপাত কতটা প্রভাব ফেলেছে তা বোঝার জন্য গবেষকগণ আল মিকিয়াস নামক একটি মনুমেন্ট পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই মনুমেন্টে সম্পম শতকের শুরুর দিকে গ্রীষ্মের আবহাওয়ার তাপমাত্রার ছাপ রয়েছে যার মাধ্যমে গবেষকগণ নদীর প্রবাহ এবং আগ্নেয়গিরির আগ্নুৎপাতের মধ্যে একটি সম্পর্ক করতে পারেন। এর সাথে বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক দলিলপত্রও তাঁরা ঘেটে দেখেন।
জলবায়ু ইতিহাসবিদ ফ্রান্সিস লুডলো বলেন, “যখন নিলনদের বন্যা নিয়মতান্ত্রিক থাকে তখন এর দুকূল সবচেয়ে উর্বর স্থানগুলোর একটি থাকে। কিন্তু এই নদ সবসময় নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রভাহিত হয় নি।” বর্তমানে নিলনদ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ নদী হিসেবে প্রসিদ্ধ। কিন্তু মিশরীয়দের কাছে এটিই ছিলো সবকিছু।
প্রতি গ্রীষ্মে বিষুবীয় অঞ্চল হতে মৌসুমী বৃষ্টির প্রভাবে নিলনদের উপরের অংশ প্লাবিত হতো এবং এতে পলি জমা হতো। এই বাৎষরিক ঘটনা প্রবাহ ছাড়া নিলের দুকূলের ফসল উৎপাদনের বিঘ্ন সৃষ্টি হতো ফলে সামাজিক শৃঙ্খলাও বিঘ্নিত হতো।
ইতিহাসবিদগণ দেখেছেন, ৩২৩ খৃষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের মৃত্যুর পর এই ধরনের একটি বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
আনুমানিক ৪৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে রানী সপ্তম ক্লিওপেট্রার আমলে বিশ্বের কোনো একটি অঞ্চলে একটি ব্যপক আগ্নেগিরির উদ্গীরণে বায়ুমন্ডলে ছাই এবং উষ্ণ গ্যাসীয় বস্তু ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে মৌসুমী বৃষ্টি বাধাগ্রস্থ হয় এবং একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত হয়।
ক্লিওপেট্রার সাম্রাজ্যে এধরনের ঘটনা মোকাবেলার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিলো না। ফলে গ্রামঞ্চল হতে মানুষ খাদ্যের আশায় শহরের দিকে ধাবিত হয় এবং এক বা একাধিক মহামারী দেখা দেয়। এর ফলে দেখা দেয় সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং বিশৃঙ্খলা। এসবের ঘটনাপ্রবাহেই ক্রমশঃ সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। [Science Alert অবলম্বনে]
[বিজ্ঞান পত্রিকার অনুমতিক্রমে প্রকাশিত]