৩৬৫ দিনেই কেন এক বছর হয়?
ক্যালেন্ডার নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও ক্যালেন্ডার কীভাবে এলো?
এছাড়াও মিশরীয়রা রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা সিরিয়াস-এ –এর হেলিয়াক্যাল বা সূর্য সংক্রান্ত উত্থানের দিকেও খেয়াল রাখত। হেলিয়াক্যাল উত্থানের সময় সূর্যোদয়ের কিছু পূর্বে সিরিয়াস-এ পূর্ব আকাশে কিছু সময়ের জন্য অস্ত যেত কিন্তু সূর্যোদয়ের ঠিক আগে আগেই তা পুনরায় উদিত হতে দেখা যেত।
মিসরীয়রা দেখল এই ঘটনা ৩৬৫ দিনের কিছু বেশি সময় (৩৬৫.২৫০৭ দিন) পরপর ঘটে। অর্থাৎ দেখা যায়, ১ বছর আসলে ৩৬৫ দিন থেকে কিছু বেশি তবে ৩৬৬ দিন থেকে কম সময়। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা গবেষণায় ১ বছরের দৈর্ঘ্য পাওয়া গেছে ৩৬৫.২৪২১৯৯ দিন। আর এই ৩৬৫ দিনের অতিরিক্ত সময়ের ভারসাম্য রক্ষার্থে ৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে অধিবর্ষ বা “লিপ ইয়ার”-এর প্রচলন শুরু হয় যার কারণে প্রতি ৪ বছর পর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮ তারিখের পর ২৯ তারিখ তথা একটি পূর্ণ দিন সংযোজন করা হয়ে থাকে। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখতে পাবেন নিচে।কখনও কি ভেবে দেখেছেন, ক্যালেন্ডার না থাকলে দিনের হিসেব আমরা কিভাবে রাখতাম? ধরুন আপনার পরীক্ষা আজ থেকে ৪৭ দিন পরে অথবা কারো জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ৭৯৩৬ দিন আগে। এইভাবে দিনক্ষণ মনে রাখাটা মানুষের পক্ষে অনেক কষ্টকর ও অসুবিধারই হত।
আজ থেকে প্রায় ১০০০০ বছর আগে মানবজাতি সভ্য হতে শুরু করে, গুহায় বসবাস আরম্ভ করে, বনে বাদাড়ে ঘুরে ফলমূল ও খাবার সংগ্রহ করা শেখে । ফলমূল বা খাবার সংগ্রহের সময় যেন বিরূপ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে না হয়,তাই তাদের জন্য দিনের হিসাব রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। নতুবা খাবারের সন্ধানে গুহার বাইরে আসায় প্রখর তাপ অথবা প্রচণ্ড শীতে মরা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না।
ধীরে ধীরে মানুষ আরও বুদ্ধিমান হয়ে উঠল। তখন তারা গুহার আশেপাশে চাষাবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শস্য ও ফলমূল তৈরি করতে শিখল। কিন্তু তখন আবার নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা দেখল, কখন বীজ রোপণ করতে হবে, কখন তা মাড়াই করতে হবে সেই সময়ের হিসাব রাখাটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
৪০০০ বছর আগে মানুষ চাষাবাদে বেশ দক্ষ হয়ে ওঠে। তখন তারা সবাই মিলে একত্রে শহরে বসবাস শুরু করে। সেই সময় শহরের নিরাপত্তায় নিযুক্ত সৈন্য সামন্তের খাবারের জন্য রাজ্যভাণ্ডারে কর হিসেবে শস্য মজুত করা হত। এই কর সংগ্রহের জন্যই সর্বপ্রথম বর্ষপঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। সূর্যের কারণে মানুষের পক্ষে দিনের হিসাব রাখা বেশ সহজ ছিল। মাসের জন্য আদিকালের মানুষ নির্ভর করত চাঁদের বৃদ্ধি বা হ্রাসের উপর। এছাড়াও তারা ঋতুপরিবর্তনের হিসেব রাখত গাছের পাতার রঙের পরিবর্তন দেখে। কিন্তু এই হিসাবেও বেশ বিপত্তি দেখা যায়। কারণ গাছের পাতার রঙ সবসময় সুষমভাবে পরিবর্তিত হত না। তেমনি চাঁদের হ্রাস বা বৃদ্ধি কোন বছরে ১২ বার হত,আবার কোন বছরে ১৩ বার। তাই হিসাবের সুবিধার্থে আরও সূক্ষ্ম কিছুর দরকার ছিল।
জ্যোতির্বিদ বা গণকদের অনুসন্ধানে তারা বুঝতে পারেন, মাটিতে পুঁতে রাখা কোন লাঠির সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য বছরের সবসময় একই থাকে না। গ্রীষ্মকালে এই লাঠির ছায়া সর্বনিম্ন থাকে, কারণ সূর্য তখন মধ্যদুপুরে ঠিক মাথার উপরে অবস্থান করে। কিন্তু শীতকালে সূর্য ভরদুপুরে দক্ষিণ দিকে কিছুটা সরে যায়। ফলে ছায়ার দৈর্ঘ্য তখন বেড়ে যায়। বছরের দিনের হিসাব রাখার জন্য ব্যাবহৃত বিশেষ এই লাঠির নাম রাখা হয় “Gnomon” (বাংলা উচ্চারন নোমন)। পরবর্তীকালে দিন, মাস ও ঋতুর হিসাব রাখার জন্য অনেক সভ্যতাই এরকম বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে থাকে। ধারণা করা হয়, স্টোনহেঞ্জ তৈরির মূল উদ্দেশ্যই ছিল সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের দিনের হিসাব রাখা। হিসেব করে দেখা যায়, মোটামুটি ৩৬৫ দিন পরপর এমন সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের দিনের দেখা মিলত।