চাঁদে ভূমিকম্প

.

নিবন্ধ

ভূ-তত্ত্ব | Geology

চাঁদে ভূমিকম্প

অনেকের ধারনা, পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয় কারণ মানুষের যখন অপকর্ম বেড়ে যায়, তখন সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ভূমিকম্পের মাধ্যমে সব  ধ্বংস করে দেন। প্রায় সংস্কৃতিতে ভূমিকম্পের কারণ ঠিক এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়।

ভূমিকম্প নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও ভূমিকম্প কেন হয়?

 

তারমানে ভূমিকম্পের মতো প্রয়লংকরী প্রাকৃতিক দূর্যোগ শুধুমাত্র পৃথিবীর একক সম্পত্তি। যেহেতু অন্য গ্রহ বা উপগ্রহে মানুষের উপস্থিতি নেই, তো সেখানে ভূমিকম্প হবার দরকারও নেই।

নাহ! ভূমিকম্প পৃথিবীর একক কোন সম্পত্তি না। চাঁদে ভূমিকম্প হয়।মঙ্গলগ্রহ, শুক্রগ্রহেও ভূমিকম্প হয়।সৌরজগতের কিছু উপগ্রহেও   ভূমিকম্প হয়। আজকের এই লেখায় চাঁদে কেন ভূমিকম্প হয় সেটা বলার চেষ্টা করবো।

চাঁদে ভূমিকম্পকে চারটা ভাগে ভাগ করা যায়।

1. চাঁদের গভীরে ভূমিকম্প (Deep moonquakes)

আমরা জানি চাঁদের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয়। জোয়ার-ভাটার কারণ কি? কারণ চাঁদের আকর্ষণ বলের কারণে জল ফুলে উঠে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি করে। তো চাঁদের যেমন আকর্ষণ বল আছে, পৃথিবীরও তেমন চাঁদের উপর আকর্ষণ বল আছে। কিন্তু চাঁদে তো পানি নেই, তাই চাঁদে জোয়ার ভাটা দেখি না। কিন্তু পৃথিবীর আকর্ষণ বলের কারণে ঠিকই চাঁদের মাটি ফুলে ফেঁপে ওঠে। এই কারণে চাঁদের প্রায় ৭০০ কি.মি গভীরে কম্পন সৃষ্টি হয়। আর এভাবেই চাঁদের গভীরে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

2.  গ্রহাণুর আঘাতে ভূমিকম্প

আমরা তো জানি চাঁদের কোন  চৌম্বকক্ষেত্র নেই। চাঁদের কোন বায়ূমণ্ডলও নেই। তাই কোন গ্রহাণুর আঘাত ঠেকানোর ক্ষমতাও চাঁদের নেই। এ কারণে প্রায়ই চাঁদে গ্রহাণু আঘাত করে। এর ফলেও ভুমিকম্প হয়।

3.  তাপীয় তারতম্যের কারণে ভূমিকম্প

চাঁদে দিন রাতের পার্থক্য দুই সপ্তাহ। অর্থাৎ প্রায় দুই সপ্তাহ একপাশে সূর্যের আলো পায়, অন্য পাশ অন্ধকার থাকে। আবার দুই সপ্তাহ পরে এর উল্টোটা ঘটে। চাঁদের যে পাশ সূর্যের আলো পায় সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ২৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মতো থাকে। আর যে পাশে সূর্যের আলো পায় না সেখানে তাপমাত্রা -২৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মতো হয়। তাপমাত্রার এই বিশাল ওঠানামার কারণেও চাঁদে ভূকম্পন তৈরি হয়।

4.  চাঁদে অগভীর বা পৃষ্ঠে ভূমিকম্প (shallow moonquakes)

এতক্ষণ যে ভূমিকম্পের কথা বললাম এগুলো খুবই নিম্নমানের ভূমিকম্প, ভয়ের খুব বেশি কারণ নেই। তবে চাঁদের এই পৃষ্ঠ ভূমিকম্পটা খুবই তীব্র। এই ভূমিকম্পের ব্যাপ্তিকালও অনেক। সাধারণত ১০-১২ মিনিট তবে কখনো কখনো ৩০ মিনিট পর্যন্তও স্থায়ী হয়। নাসা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এ রকম ২৮ টি ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে , যার কোনটা কোনটা রিখটার স্কেলে ৫.৫ এর কাছাকাছি।

তবে এই ভূমিকম্পের কারণ বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিকভাবে বের করতে পারি নি। ধারণা করা হয় চাঁদের কোরটা ক্রমশ শীতল হয়ে আসছে এবং তার সক্রিয়তা হারাচ্ছে। এরফলে চাঁদের পৃষ্ঠ কেন্দ্রমূখী টান অনুভব করছে এবং সংকুচিত হয়ে আসছে। এইজন্যই চাঁদের পৃষ্ঠে এই অগভীর ভূমিকম্পগুলো দেখা যাচ্ছে।

চাঁদের ভূমিকম্প নিয়ে লেখা আজ এ পর্যন্তই। সামনে কোন একদিন মঙ্গলগ্রহের ভূমিকম্প নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে।


সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles