করোনা ভ্যাকসিনের দৌড়ে এগিয়ে কারা ?

.

নিবন্ধ

Coronavirus | করোনা ভাইরাস

করোনা ভ্যাকসিনের দৌড়ে এগিয়ে কারা ?

কোভিড-১৯-এর বিষাক্ত ছোবলে টালমাটাল সারা বিশ্ব। এই রোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে নেমেছেন বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকদল। এরই সূত্র ধরে জানুয়ারিতেই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট। এই দৌড়ে আরও সামিল ছিলো আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর অধীন দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনআইএআইডি)-এর বিজ্ঞানীরা এবং তার সহযোগী বায়োটেকনোলজি সংস্থা মডার্না। পাশাপাশি চীনের একটি বায়োটেক কোম্পানিরও করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে গবেষণার খবর পাওয়া গেছে। একেবারে সম্প্রতি ইতালির একটি গবেষকদলও টিকা তৈরিতে নিজেদের গবেষণার কথা জানিয়েছেন। অবশ্য সব দিক বিবেচনা করলে এখনো পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী দল।

টিকা বানাতে কেন এত সময় লাগে জানতে দেখুন থিংকের ভিডিও করোনার টিকা বানাতে এত সময় লাগছে কেন?


অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের হাতে তৈরি এই টিকার গালভরা নামটি হলো "ChAdOx1 nCoV-19"।

 

নামখানার ভেতরেই অবশ্য টিকার বৃত্তান্ত দেওয়া হয়েছে। মূলত ChAdOx1 নামের একটি শিম্পাঞ্জির এডিনোভাইরাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এটা।

 

টিকা তৈরির সময় এই ভাইরাসটা এমনভাবে বদলে দেওয়া হয় যাতে কোনোভাবেই এটা মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করতে না-পারে। মানুষের শরীরে প্রবেশ করানোর আগে ভাইরাসটার ভেতরে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু প্রাণরাসায়নিক বস্তু পুরে দেন যাতে তা ভেতরে গিয়ে SARS-CoV-2 ভাইরাসের বাইরের আবরণে থাকা প্রোটিনটির মতই অবিকল একই রকম প্রোটিন তৈরি করতে পারে।

 

মানুষের শরীরে ঢোকার সময় SARS-CoV-2 প্রথম আক্রমণটা হানে তার আবরণে-থাকা প্রোটিন ব্যবহার করে। মানুষের কোষে-থাকা ACE2  এনজাইম গ্রাহকের সাথে নিজের শরীরের প্রোটিনের আবরণটা বেঁধে এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে আক্রমণের পথটা তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা তাই আশা করছেন যে একবার যদি মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি না-করে দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরক্ষার যে-ব্যবস্থা রয়েছে তাদের এই ভাইরাসের প্রোটিনটা চিনিয়ে দেওয়া যায় তাহলে ভাইরাসটির প্রোটিন কোষের সাথে নিজেকে যুক্ত করবার আগেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাকে ধ্বংস করে ফেলবে। মূলত এভাবেই টিকা কাজ করে।

 

টিকা-তৈরির এই গবেষণা দলে রয়েছেন সারা গিলবার্ট, অ্যান্ড্রু পোলার্ড, স্যান্ডি ডগলাস, টেরেসা ল্যাম্ব এবং অ্যাড্রিয়ান হিলের মত জগদ্বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী। অক্সফোর্ডের তৈরি টিকা পরীক্ষা বা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রথম কিস্তিতে নিজেদের শরীরে নিয়েছেন প্রায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়স্ক ও সুস্থ শরীরের প্রায় ৫০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী। আরও কয়েকটা জায়গায় এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজ শুরু করা হবে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনটি দফায় এই ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হবে।

 

সীমিত সংখ্যক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, এখনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা না-থাকার মতো নানান জটিলতা হিসেব করলে বলতেই হয় অন্যান্য দেশের ভ্যাকসিন তৈরিতে সীমাবদ্ধ অগ্রগতির তুলনায় অক্সফোর্ডের এই গবেষণা অনেকখানি এগিয়ে। আর তাই অক্সফোর্ডের গবেষকদলের আশাবাদ এই বছরের মধ্যেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন মানবজাতিকে তাঁরা উপহার দিতে পারবেন। 

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles