জৈব বিবর্তন | জৈব বিবর্তনের ফলে মানবদেহে বিবর্তনের চিহ্ন

.

নিবন্ধ

Evolution | বিবর্তন

জৈব বিবর্তন | জৈব বিবর্তনের ফলে মানবদেহে বিবর্তনের চিহ্ন

বিবর্তন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আমাদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণ থেকে এটুকু আমরা বুঝতে পারি, যেকোনো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াই কম-বেশি এলোমেলো (বিক্ষিপ্ত) এবং নিয়ন্ত্রণহীন। সেকারণে ঝড়ের গতিপথ কথনো সরলরৈখিক হয় না কিংবা নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতির কোনো প্রাকৃতিক জলাভূমিও পাওয়া যাবে না। বিবর্তন যেহেতু একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া সেহেতু এই প্রক্রিয়াটিও এলোমেলোভাবে বা বিক্ষিপ্তভাবে হবে এটাই স্বাভাবিক এবং বাস্তবতাও সেটাই। বিবর্তন পুরোপুরিই একটি বিক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া। বিবর্তন নিয়ে দেখুন থিংকের ভিডিও মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস 

এখানে প্রশ্ন হতে পারে, বিবর্তন যদি বিক্ষিপ্ত বা এলোমেলো প্রক্রিয়া হয় তাহলে আমাদের শরীর এতো নিখুঁত, এতো সুগঠিত হলো কী করে? এর প্রথম উত্তর হল: প্রাকৃতিক নির্বাচন। প্রকৃতিতে কেবল যোগ্যরাই টিকে থাকে এবং অযোগ্যরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আদি এককোষী ব্যক্টেরিয়ার বংশধরদের মধ্যে যাদের শরীর অন্তত এতটুকু নিখুঁত যে সে অন্তত নতুন বংশধর তৈরি হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে সেই প্রজাতিটিই কিন্তু টিকে যাবে (কারণ সে নতুন কয়েকজনকে রেখে মারা গেল; এরাও একইভাবে কয়েকজনকে রেখে মারা যাবে)। নতুন বংশধরের মধ্যে আবার বিবর্তন প্রক্রিয়ায় নতুন বৈশিষ্ট্যের বংশধরের সৃষ্টি হবে এবং এদের মধ্যে যাদের বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবেশের সাপেক্ষে বেশি নিখুঁত হবে তারাই টিকে থাকবে।

 

এই প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি বছরের ক্রমাগত বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের উদ্ভব হয়েছে এবং বলা বাহুল্য মানুষের শরীরও নিখুঁত নয়। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের বিবর্তনঘটিত বিভিন্ন সমস্যার মূল্য দিয়ে চলেছি। তবে এরপরও প্রজাতি হিসেবে আমরা টিকে আছি কারণ আমাদের দৈহিক খুঁতগুলো আমাদের টিকে থাকার জন্য এখনো হুমকি হয়ে ওঠেনি। আমাদের দৈহিক খুঁতগুলো যদি এমন কঠোর হতো যে আমরা আমাদের সন্তান জন্মদানের আগেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি তাহলে আমাদের প্রজাতিটি টিকে থাকতো না। তবে এমন নিশ্চয়ই হয়েছে বিবর্তনের ধারায় কোন প্রাণীর খুঁত অত্যন্ত বেশি হয়ে গেছে ফলে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারেনি। আজ মানবদেহের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করব যেগুলো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ায় মানুষ পুর্বপুরুষের কাছ থেকে বহন করে চলেছে এবং মানুষ যদি কোনো বুদ্ধিমান সত্তার কাছ থেকে সরাসরি সৃষ্টি হতো তাহলে এই খুঁতগুলো থাকত না।

 

গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া: 

শীতের প্রভাবে, রেগে গেলে কিংবা ভয় পেলে আমাদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। যেহেতু মানুষের অধিকাংশ লোম বিবর্তনের ধারায় ঝরে পড়েছে তাই মানবদেহে লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার কোনো তাৎপর্য নেই কিন্তু মানুষের পূর্বপুরুষদের এই বৈশিষ্ট্যটি বিশেষ অর্থবহ ছিলো। শীতের সময় গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলে লোমের ফাঁকে বাতাস আটকে শরীরকে তাপনিরোধক করা সম্ভব ফলে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া শিকারের সময় কিংবা শিকারি তাড়া করার সময় গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় এর ফলে প্রাণীটিকে তুলনামূলকভাবে বড় মনে হয় যা তাকে অন্য প্রাণীর সাথে মোকাবেলায় কিছুটা সুবিধা দান করে। আপনারা মোরগের লড়াই লক্ষ করলে এটা ভালো বুঝতে পারবেন।

 

কানের অতিরিক্ত পেশি এবং ডারউইন’স পয়েন্ট:

বেশকিছু প্রাণী কানের বহিরাংশ নাড়াতে পারে। কান নাড়ানোর মাধ্যমে তারা মাথা না নাড়িয়েও শব্দের উৎসের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারে। এই কাজে তাদের সাহায্য করে কানের তিন পাশে অবস্থিত বেশ কিছু পেশি। কিন্তু মানুষ যদিও কান নাড়তে পারে না তবুও কানের এই পেশিগুলো এখনো মানুষের মাঝে বিদ্যমান (ছবিতে দেখুন)।

 

এছাড়া ডারউইন’স পয়েন্ট নামের আরেকটি অংশ কানের বহির্ভাগে রয়ে গেছে যা অন্যান্য প্রাণীদের শব্দের উৎসের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করে। বলা বাহুল্য এটিও মানুষের কোনো কাজে আসে না।

 

পুরুষের স্তনের বোঁটা:

পুরুষের শরীরে স্তনের বোঁটা কি কাজে আসে বলতে পারেন কি?

 

অ্যাপেনডিক্স:

দীর্ঘদিন ধরে মানুষ শরীরে এপেনডিক্সের কোন কাজ খুঁজে পায় নি (তেমন কোনো কাজ নেই বলেই)। এটা শরীরের জন্য একটা উৎপাত বিশেষ এবং মাঝে মাঝেই আমাদের অ্যাপেন্ডিসাইটিসে ভুগে একে শরীর থেকে বের করে দিতে হয়।

 

হার্নিয়া সমস্যা:

ব্রিটেনে প্রতি চারজন পুরুষের একজন হার্নিয়ায় আক্রান্ত হয়। হার্নিয়া সাধারণত তলপেটের একটা সমস্যা এবং এতে আক্রান্ত হলে শুক্রাশয়ের বা বৃহদন্ত্রের একটা অংশ স্ফীত হয়ে আবরণের বাইরে চলে যায় এবং তলপেটে সমস্যা সৃষ্টি করে। এটাও একটা বিবর্তনঘটিত সমস্যা। এই জন্য আবার আমাদের মাছের দিকে ফিরে যেতে হবে। মাছের প্রজননতন্ত্র যকৃতের নিচেই অবস্থান করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এটা অনেকটা নিচে নেমে এসেছে। ভ্রূণাবস্থায় কিন্তু এই অংশটা যকৃতের কাছাকাছিই থাকে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ হওয়ার সময় এটা আস্তে আস্তে নিচের দিকে নেমে যায় যার ফলে এর সাথে কিছু কিছু টিস্যু জড়িয়ে যায়।

 

হাঁটু:

মানুষের হাঁটু এখনো শরীরের ভার বহন করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নয় এবং একটু বয়স হয়ে গেলেই হাঁটা-চলায় সমস্যা দেখা দেয়। মানুষ ছাড়াও চতুষ্পদ জন্তুর ক্ষেত্রেও এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। সাঁতারের উপযোগী অঙ্গের বিবর্তন থেকে পায়ের সৃষ্টি হয়েছে বলেই এই সমস্যা।

 

তৃতীয় চোখের পাতা বা nictitating membrane:

উভচর কিংবা পাখির চোখে nictitating membrane নামক এক ধরনের পাতলা পর্দা থাকে। একটা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরল কিন্তু মানুষের চোখে এখনো এর অবশেষ রয়ে গেছে। চোখের দিকে ভালো করে তাকালে তৃতীয় এই পাতা দেখা যায়।

 

উপরে আলোচিত বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও, বহু মারাত্মক রোগ যথা: ক্যান্সার, বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপ, হিমোফিলিয়া, সিকলসেল ডিজিজ (এই রোগ হলে মানুষের লোহিত রক্ষা কণিকা স্বাভাবিক আকার ছেড়ে কাস্তের মত সরু হয়ে যায়) সহ আরো অনেক রোগ বিবর্তনের কারণেই ঘটে।

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও দেখুন | Most Watched Video

?>

নিবন্ধসমূহ | Articles